রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিকান্ড

নতুনধারা
  ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

একের পর এক, দেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছেই। মার্কেট, বস্তি ও বিভিন্ন কারখানা থেকে শুরু করে উঁচু ভবনে নানাভাবেই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন সময়ে হৃদয়বিদারক এবং ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে যে, অগ্নি ঝুঁকিতে রয়েছে যশোর শহরের মার্কেটগুলোও। শহরের বড়বাজার, কালেক্টরেট মার্কেটসহ বিপণিবিতানগুলোতে নেই অগ্নি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। সিংহভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেই ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা আগুন নেভানোর কোনো সরঞ্জাম। এমনকি কোনো কোনো মার্কেটে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশেরও পথ নেই।

বলা দরকার, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনার পর যশোরের প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব সেক্টরই নড়েচড়ে বসে। বিশেষ করে যশোরের বড় বাজার, কালেক্টরেট মার্কেট, চুড়িপট্টি, ফেন্সি মার্কেট, রেলবাজারসহ বিপণিবিতানগুলোর অগ্নি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।

প্রসঙ্গত, এর আগে এটা সামনে এসেছিল, রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি মার্কেট অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। বঙ্গবাজার ও ঢাকার নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ তথ্য দেয়া হয়। অধিদপ্তরের পরিচালক বলেছিলেন, নিউ সুপার মার্কেটসহ রাজধানীতে ৯টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ১৪টি মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও শপিংমল রয়েছে। আমরা বলতে চাই, শুধু রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা যশোরই নয়, সারাদেশে যেসব ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লেগে প্রায় পাঁচ হাজার দোকানের সব পুড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে পড়ে। আর এর রেশ না কাটতেই রাজধানীর নিউমার্কেট সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেটে লাগে ভয়াবহ আগুন। সঙ্গত কারণেই, এটা বলা দরকার যে, একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনার ভয়াবহতা আমলে নিতে হবে এবং সেই মোতাবেক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। উলেস্নখ্য, জানা যায়, গত বছর দেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ৫৮৩টি। ২০২১ সালের তুলনায় অনেক বেশি। এ ছাড়া তখন এমন তথ্যও সামনে এসেছিল গত বছরের অগ্নিকান্ডে প্রাণহানি ঘটেছে ১৮৬ জনের। অগ্নিকান্ডগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩৯ ভাগ ক্ষেত্রেই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বৈদু্যতিক ত্রম্নটি থেকে। অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে রেহাই পায়নি বস্তি থেকে শুরু করে মার্কেট, কেমিক্যাল গোডাউন কিংবা আধুনিক বহুতল ভবনও। বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে ঘটে যাওয়া বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ ও সতর্ক না হওয়ায় অগ্নিদুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

অগ্নিকান্ডের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটা উলেস্নখ করা প্রয়োজন, ২০১০ সালের ৩ জুন ঢাকার নিমতলীর অগ্নিকান্ডে ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। ওই ঘটনা তদন্ত করে ১৭ দফা সুপারিশ পেশ করেছিল তদন্ত কমিটি। দুঃখজনক হলেও সত্য, সুপারিশগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তা ছাড়া ভুলে যাওয়া যাবে না, যাত্রাবাড়ীর কেমিক্যাল কারখানা, মিরপুর বস্তি, আশুলিয়া তাজরিন ফ্যাশন, টঙ্গির ফয়েল কারখানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা মনে করি, অগ্নিকান্ডের ঘটনাগুলো আমলে নিতে হবে। একই সঙ্গে এ ধরনের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা একের পর এক কেন ঘটছে সেটাও এড়ানো যাবে না।

সর্বোপরি বলতে চাই, মার্কেটই শুধু নয়- পস্নাস্টিক কারখানা, কেমিক্যাল গোডাউন থেকে শুরু করে আধুনিক বহুতল ভবন, কারখানা, বস্তিসহ বিভিন্নভাবে অগ্নিকান্ডের যে ঘটনা ঘটেছে- প্রত্যেকটি ঘটনা আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। অগ্নিদুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে- এর চেয়ে ভয়ানক আর কী হতে পারে! যখন গ্রাম থেকে শহর, বস্তি থেকে শুরু করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবন, দোকানপাট, গুদাম, মার্কেট কোনো কিছুই আগুনের লেলিহান গ্রাস থেকে মুক্ত নয়- তখন এই প্রশ্নও অযৌক্তিক নয়, অগ্নিকান্ডের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাচ্ছে না কেন! ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যে কোনো ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে