রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে যথাযথ পদক্ষেপ নিন

নতুনধারা
  ১০ মে ২০২৩, ০০:০০

সাত বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামল। উলেস্নখ্য, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে নিয়মিত ডলার বিক্রির মধ্যে আমদানি দায় মেটাতে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) সবশেষ অর্থ পরিশোধের পর দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। আকুতে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাসের আমদানি ব্যয়ের জন্য ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, বড় ধরনের এ আমদানি ব্যয় মেটানোর আগে গত ২ মে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।

আমরা মনে করি, রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামল- এই বিষয়টি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করা। স্মর্তব্য যে, রিজার্ভে ধাক্কা, অর্থনৈতিক চাপ- এই বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। উলেস্নখ্য, এর আগে সবশেষ ২০১৬ সালের ২২ জুন রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। আট দিনের মাথায় ৩০ জুন তা বেড়ে ৩০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। এরপর তা ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে রেকর্ড ৪৮ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

বলা দরকার, মূলত করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমে আসতে থাকলে মহামারির মন্দা কাটিয়ে অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধার গতি পেলে আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকে। এরপর রিজার্ভ থেকে সেই অর্থ পরিশোধ বাড়লে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকে। ইউক্রেইন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও চাপ তৈরি করে। আর এমন পরিস্থিতিতে রিজার্ভ কমে সাত বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে এলো। এটা লক্ষণীয়, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের আমদানির বর্তমান যে ধারা তাতে এখনকার রিজার্ভের সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকলে তাকে স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি হিসেবে ধরে থাকেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৪ সালের জুনে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর থেকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ভর করে ধারাবাহিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। আর তা পর্যায়ক্রমে বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে দেশের আমদানি ব্যয় বাড়লেও বিপরীতে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি সেভাবে তাল মেলাতে পারেনি। ফলে চাপে পড়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এছাড়া গত জুলাই থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপের পরও ডলারের সংকট না কাটলে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি শুরু করে। এতে রিজার্ভ কমতে কমতে ডিসেম্বরে ৩৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারে নামে। চার মাসের মধ্যে এপ্রিল শেষে তা ৩১ দশমিক ০৬ বিলিয়নে নামে।

আমরা বলতে চাই, এই বিষয়টি আমলে নেওয়া দরকার, এর আগে এমন বিষয় আলোচনায় এসেছিল- রিজার্ভ কমে যাওয়াটা অর্থনীতির জন্য ভালো খবর না। রিজার্ভ কমার ফলে এটাও সামনে আসে বাংলাদেশ বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। আর তা রুখতে রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়ার বিষয়টিও উঠে এসেছিল। আমরা মনে করি, সর্বাত্মক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। জানা যাচ্ছে, আইএমএফ বিপিএম-৬ হিসেবে আগামী জুনে তিন মাসের আমদানি দায় পরিশোধের সমপরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, এ সময়ে বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণের অর্থ ছাড় হলে রিজার্ভের ওপর থাকা চাপ সামলানো যাবে। ফলে রিজার্ভের ওপর থাকা চাপ সামলাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

সর্বোপরি বলতে চাই, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে- এটি আমলে নিতে হবে। রিজার্ভ কমে আসা এবং অর্থনৈতিক চাপ- এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি প্রত্যাশিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে