রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

নতুনধারা
  ১২ মে ২০২৩, ০০:০০

আবারও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের আগ্রহ বেড়েছে। আর সেই লক্ষ্যে চলতি বছরের এপ্রিলে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজার এসে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে ফিরে যায়। এছাড়া সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদলও রাখাইনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে বাংলাদেশে ফিরেছে। মূলত এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইসু্যটি ফের আলোচনায় এসেছে। তথ্য মতে, রোহিঙ্গাদের ছেড়ে আসা গ্রাম মংডু বদলে গেছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসার আগে যে গ্রাম রোহিঙ্গারা ফেলে এসেছিলেন, সেই গ্রামের কোনো অস্তিত্ব এখন আর নেই। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে সারি সারি ক্যাম্প। স্বদেশে ফিরে যাওয়ার পর এসব ক্যাম্পে বাস করতে হবে রোহিঙ্গাদের। মিয়ানমার জানিয়েছে, দেশে ফেরা রোহিঙ্গাদের আপাতত নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। এনভিসি কার্ড নিয়ে ক্যাম্পে বসবাস করতে হবে তাদের। আর এই খবরে ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

আমরা মনে করি, যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং আবারও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি যখন আলোচনায় আসছে, তখন তা আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। আস্থার সংকট, নিরাপদ পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সামনে রেখে পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত বলা দরকার, এমন বিষয় সামনে আসছে- প্রত্যাবাসন সমর্থিত ও প্রত্যাবাসনে অনাগ্রহী রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে। বেশির ভাগ রোহিঙ্গার দাবি, প্রত্যাবাসন ছাড়া রোহিঙ্গাদের আর কোনো পথ খোলা নেই। আবার অনেক রোহিঙ্গা বলছেন, নাগরিকত্ব না নিয়ে তারা ফিরতে চান না। এছাড়া লক্ষণীয়, নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মিয়ানমারের সাম্প্রতিক আগ্রহ ও কর্মকান্ডকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিয়ানমার সুকৌশলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে বলেও অনেকে মত দিয়েছেন। তাদের দাবি, এটা মিয়ানমারের পুরনো কৌশল। আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের শুনানির দিনক্ষণ এলেই এ ধরনের লোক দেখানো তৎপরতা মিয়ানমার আগেও দেখিয়েছে।

স্মর্তব্য যে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়ে রাখাইন রাজ্যের লাখ লাখ রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে প্রাণের ভয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলো তখন রোহিঙ্গা নিযার্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং মিয়ানমারকে নানামুখী চাপ দিতে থাকে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মিটিংয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইসু্যর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য দাবি উত্থাপন করে প্রশংসিত হন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের চাপে মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইসু্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের জন্য সে দেশে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ নিরাপদ প্রত্যাবাসনের অঙ্গীকার করলেও দেশটি আজও তা করেনি। অথচ রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের একমাত্র উপায় হলো, নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ নিরাপদ প্রত্যাবাসন।

আমরা বলতে চাই, এখন যখন এটা সামনে আসছে যে, মিয়ানমার জানিয়েছে, দেশে ফেরা রোহিঙ্গাদের আপাতত নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। এনভিসি কার্ড নিয়ে ক্যাম্পে বসবাস করতে হবে তাদের। আর এই খবরে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে; একইসঙ্গে এই পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, এই বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে যে, রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘদিনের, এটি এক দিনে সমাধান হবে না। তবে এ সমস্যার সমাধানে প্রত্যাবাসনের কোনো বিকল্প নেই। মিয়ানমার সরকার এবং রোহিঙ্গাদের পরস্পরকে ছাড় দিতে হবে, তবেই প্রত্যাবাসন সম্ভব। সঙ্গত কারণেই এই দিকগুলো ভাবনার অবকাশ রাখে। মনে রাখা দরকার, এর আগে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ রোহিঙ্গা ইসু্যতে বাংলাদেশের পাশে থেকে সংকট মোকাবিলার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে। সেই প্রতিশ্রম্নতি পূরণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশকেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ সাপেক্ষে, কূটনীতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখে যত দ্রম্নত সম্ভব রোহিঙ্গা সংকটের সুষ্ঠু সমাধান হোক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে