শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারণার ফাঁদ সঠিক পদক্ষেপ নিন

নতুনধারা
  ১২ মে ২০২৩, ০০:০০

প্রতারণা হচ্ছে- স্বচ্ছ পথে অগ্রসর না হয়ে অসদুপায় অবলম্বন করে বাঁকা পথে কোনো কিছু অর্জনের চেষ্টা। বর্তমান বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা এমন যে, মানুষ খুব সহজেই একে অপরের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে। প্রতারণার মাত্রা এখন এতটাই প্রবল যে, এটা বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য। এর ফলে, মানুষ যেমন একে অপরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে, একইভাবে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দিনে দিনে বৈষম্য ও অস্থিরতা বাড়ছে।

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।' একুশ শতকের প্রতারণাপূর্ণ সমাজে বাস করলে তিনি কী বলতেন। হয়তোবা বলতেন, 'মানুষের প্রতি বিশ্বাস রাখা পাপ।' প্রশ্ন হচ্ছে আমরা নিজেদের এই অধঃপতনের জায়গায় কীভাবে নিয়ে এলাম। এটা একদিনে গড়ে ওঠেনি। কথায় বলে দুর্জনের ছলের অভাব নেই। পোশাকের বাহার, কথার বাহার, ক্ষমতা ও টাকার জাদু এবং নানানরকম প্রলোভন সামনে এনে মানুষকে মোহগ্রস্ত করে ফেলে প্রতারকরা। এরা বিভিন্ন নামে ও পেশায় তাদের পরিচয় দেয়। প্রশাসন বা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে, সমাজের প্রভাবশালী ও খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা এটাও প্রমাণ করতে চায় এবং মানুষকে বিশ্বাসও করায়। এরা এলাকায় দাতা ও জনদরদি হিসেবে পরিচিত ও সমাদৃত। এর শিকার হয় দেশের অসহায় মানুষ। প্রতারকদের পালস্নায় পড়ে এ দেশের অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে।

সম্প্রতি কানাডায় পাঠানোর কথা বলে প্রতারণা করার অভিযোগ তুলে রফিকুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম নামে দুজনকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সেই সঙ্গে তারা তাদের অর্থ ফেরত আনার দাবি জানিয়েছেন। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনের এ দাবি জানান তারা।

ভুক্তভোগী সাইফুর রহমান বলেন, দুই বছর আগে কানাডা তাদের অভিবাসন বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও আমাদের চোখে পড়ে। এর মধ্যে 'জাস্ট ফর ইউ' নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের দেওয়া হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে আমরা যোগাযোগ করি প্রতারক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। যিনি নিজেকে কানাডা প্রবাসী দাবি করেন এবং তার কোম্পানিতে চাকরির অফার দেন। কানাডা যাওয়ার চুক্তি মোতাবেক রফিকুল ইসলামকে কয়েক দফায় টাকা প্রদান করা হয়। কিন্তু পরে ইউটিউবার জিয়া হাসান ও কাজী হাসান প্রতারক রফিকুল ইসলামের আসল চরিত্র প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন। এই প্রতারক ভুয়া কোম্পানির কাগজ দেখিয়ে ভুয়া চাকরির অফার প্রদান করে।

মনে রাখতে হবে চারদিকে প্রতারণার ফাঁদ। প্রতারক সমাজে একজন নয়, অসংখ্য। এরা নানা ধরনের মুখোশ পরে কেউ আড়ালে আবডালে আবার কেউ প্রকাশ্যে প্রতারণা করছে। মানুষকে শোষণ নির্যাতন করে নানা ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে এরা অর্থবিত্তের মালিক হয়ে ক্ষমতার নগ্ন দাপট দেখাচ্ছে। দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা তরতর করে উপরে উঠে যাচ্ছে। আবার পতনও হচ্ছে সেভাবে। দেশের প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় এরা লালিত ও বিকশিত হয়। এরা ধরা পড়লেও এদের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতারা থেকে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে।

মানুষ দুটো কারণে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। কেউ পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে আবার কেউ লোভের বশবর্তী হয়ে। রাতারাতি তাকে ধনী ও ক্ষমতাবান হতে হবে, এই স্বপ্ন তাকে পেয়ে বসে, বিভোর করে ফেলে। ফলে ওই ব্যক্তি নিষ্ঠুরতা অমানবিক ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়। এর পরিণতি কী হতে পারে ভেবেও দেখে না। কেউ অফিস খুলে চাকরি দেওয়ার নামে, কেউ বিদেশে পাঠানোর নামে, কেউ অনলাইনে পণ্য কেনার নামে, কেউ বা হায় হায় কোম্পানি খুলে কোটি কোটি টাকা মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অবলীলায়। এদের প্রতিহত করতে হবে যে কোনো উপায়ে। না হলে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। দ্রম্নত সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে