শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রাজধানী ঢাকা কি ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে?

ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে তাপমাত্রার প্রভাব কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তারা ঢাকার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য আগামী দুই বছরে দুই লাখ গাছ লাগাবে।
রেজাউল করিম খোকন
  ১৬ মে ২০২৩, ০০:০০
রাজধানী ঢাকা কি ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে?

বাংলাদেশে আগামী সাত বছরের মধ্যে মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশের বেশি শহরে বসবাস করবে। ওই সময়ের মধ্যে দেশের জনসংখ্যা হবে ১৮ কোটি ৪০ লাখ। সেই হিসাবে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮ কোটি ৩৯ লাখের বেশি মানুষ শহরে বসবাস করবে। বিশ্বব্যাংকের 'বিশ্ব উন্নয়ন সূচক'-সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে 'বাংলাদেশের জনসংখ্যা : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ' শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে দ্রম্নত নগরায়ণ হলেও বিপুল মানুষকে ধারণ করার জন্য নগরগুলো মোটেই প্রস্তুত নয়। আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগসহ নানা পরিষেবায় নগরগুলো বেশ পিছিয়ে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়বে। নগরায়ণের সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির লাগাম টানা, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সম্প্রসারণ, বেকারত্ব ও প্রজননহার কমানোর বিষয়গুলো জড়িত। এর সঙ্গে দরকার কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর লভ্যাংশকে কাজে লাগানো। কিন্তু বাংলাদেশে তা যথাযথভাবে হচ্ছে না। গবেষণায় বাংলাদেশের জনসংখ্যার গতিপ্রকৃতি, নগরায়ণ, গড় আয়ু, নারী-পুরুষের অনুপাত, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর লভ্যাংশ, বয়স্ক জনগোষ্ঠী, প্রজনন হার, শিশু ও নারীমৃতু্যর অবস্থাসহ জনসংখ্যাকেন্দ্রিক নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্তের নিরিখে ভবিষ্যৎ কী অবস্থা দাঁড়াবে, তা-ও উঠে এসেছে গবেষণায়। জনসংখ্যার নিরিখে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। গত বছরের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত হিসেবে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। প্রতিবেদনটি গত ৬ ফেব্রম্নয়ারি প্রকাশিত হয়েছে। জনসংখ্যার নিরিখে ২০৫০ সালে বাংলাদেশ দশম বৃহত্তম দেশ হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমার পরও ওই সময় দেশের জনসংখ্যা হবে ২০ কোটি ৪০ লাখ। ১৯৭৪ সালে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৬৪। ২০২২ সালে এই হার নেমে এসেছে ১ দশমিক ২২ শতাংশে। আর ২০৩০ সালের পর থেকে এই হার শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০৫০ সালে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমলেও আয়তনে ছোট বাংলাদেশের জন্য বর্তমান জনসংখ্যা ও ঘনবসতি বড় সমস্যা। দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব এখন প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ১১৯ জন, ২০৫০ সালে ঘনত্ব হবে ১ হাজার ৫৬৬ জন। বিভাগ হিসেবে ঢাকায় জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। এ বিভাগে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২ হাজার ১৫৬ মানুষের বসবাস। এরপরই ময়মনসিংহ। এই বিভাগে বাস করে ১ হাজার ১৪৬ জন। নগর হিসেবে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করে ঢাকায়। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৭ শতাংশ ঢাকায় বসবাস করে। এরপর চট্টগ্রাম, যেখানে ২০ শতাংশের বেশি মানুষ বাস করে। পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এই লিঙ্গানুপাত যদি আরও কমে, তবে বহুবিধ জনমিতিক প্রভাব দেখা যেতে পারে। এটা যেমন গ্রামে হবে, তেমনি শহরেও দেখা যাবে।

দেশে নগরে মানুষের বসবাস বাড়ছে। সর্বশেষ জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৫১ শতাংশ মানুষ নগরে বাস করে। ২০৫০ সালে দেশের মোট জনসংখ্যার ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ নগরবাসী হবে। ১৯৭৪ সালে নগরে বাস করা মানুষের হার ছিল মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশ। নগরায়ণের সবচেয়ে বড় চাপ ঢাকার ওপরে। ঢাকা এখন জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের নবম বৃহত্তম নগর। জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার অবস্থান হবে তৃতীয়। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা ব্রাজিলের সাও পাওলো ও ভারতের মুম্বাইকে ছাড়িয়ে যাবে। নগরায়ণ পরিকল্পনায় কেবল ঢাকাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ঢাকার বাইরে জেলা ও উপজেলা শহর এবং বাজারকেন্দ্রিক মফস্বল শহর রয়েছে। নগরে বসবাসের সুযোগ তৈরি, অর্থায়ন, নগর দারিদ্র্য, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষের কর্মসংস্থান-এসব বিষয় নগরায়ণের শর্ত। এসব দিকে দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে না। দ্রম্নত নগরায়ণের এই সময়ে 'আমার গ্রাম, আমার শহর' প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। রাজধানী ঢাকা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। এ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নাধীন শহরগুলোর অবস্থাও এমন হবে না তো? বাড়তি জনসংখ্যার চাপ গ্রহণ করতে আমাদের রাজধানী যেমন তৈরি হচ্ছে না, একই অবস্থা বাইরের শহরগুলোরও। নতুন নতুন শহর হলে সেখানে কী অবস্থা হবে, তা বর্তমান পরিস্থিতিই বলে দিচ্ছে। 'আমার গ্রাম, আমার শহর' প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এসব শহর কতটুকু পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে? ঢাকাসহ অন্যান্য নগর খুব পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি, এই বাস্তবতাকে আমরা অস্বীকার করছি না।

ঢাকায় একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে কি হবে? তেমন অশুভ চিন্তাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলেও কেন জানি পারি না। বারবার তাড়া করে ফেরে সেই ভয়ানক পরিস্থিতির কাল্পনিক চিত্র। ঢাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যত মানুষ মারা যাবে, তার কয়েকগুণ বেশি মারা যাবে আগুনে পুড়ে ও বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে। ভূমিকম্পের পর গ্যাসলাইনে বিস্ফোরণ ঘটবে। সেই আগুনে পুড়ে পুড়ে পুরো নগর দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে। ভূগর্ভস্থ পানি ও আশপাশের নদী জলাশয়ের পানি নগরে বন্যার সৃষ্টি করবে। উপড়ে পড়া বিদু্যতের খুঁটির তারের সংস্পর্শে এসে সেই পানি বিদু্যতায়িত হবে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে বিধ্বস্ত ঢাকানগরীতে আক্রান্তদের উদ্ধারের লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। উদ্ধারকাজে সাধারণ সময়ে যারা মূল ভূমিকা রাখেন, সেই ফায়ার সার্ভিসের অস্তিত্ব থাকবে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। রাজধানী ঢাকা শহরে তেমন আশঙ্কা বুকে চেপে রেখে আমরা দিনরাত পার করছি। দিনে দিনে রাজধানী ঢাকার আয়তন যেভাবে বাড়ছে তেমনি বাড়ছে জনসংখ্যা। বাড়তি মানুষের চাপে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। নানা সংকটে জর্জরিত নগরবাসীর নাভিশ্বাস চরমে উঠছে। যানজট, পানি, গ্যাস, বিদু্যৎ সংকট, মাদকের আগ্রাসন, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মশার উপদ্রব প্রভৃতি সমস্যাকে নিত্যসঙ্গী করে বসবাস করছেন সবাই। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, বিত্তহীন, ছিন্নমূল বস্তিবাসী সবাইকে এক ধরনের অস্থিরতা, অতৃপ্তি, অশান্তি, অতুষ্টি নিয়ে থাকতে হচ্ছে এই শহরে। এত সমস্যা, সংকট, অস্বস্তি, অস্থিরতা, অনিশ্চয়তার কথা জানার পরও প্রতিদিনই গ্রাম ছেড়ে ঢাকা শহরে পা রাখছেন অগণিত নারী-পুরুষ। দরিদ্রের কারণেই যে গ্রামের মানুষ শহরমুখী হন তা বলা যায় না এখন। সচ্ছলতা থাকার পরও আজকাল অনেকেই গ্রাম কিংবা মফস্বল শহর ছেড়ে অপেক্ষাকৃত উন্নত এবং মানসম্মত জীবনযাপনের আশায় ঢাকায় চলে আসছেন। গ্রামগুলো আগের চেয়ে অনেকটা উন্নত হলেও সামাজিক কাঠামোতে আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন হয়নি। ভিলেজ পলিটিক্স এখন আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। প্রাণহানি ঘটছে। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। গ্রামীণ সমাজ জীবনে অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে শহরে চলে আসছেন, বাসা ভাড়া করে পরিবার-পরিজন নিয়ে উঠছেন। আবার সন্তানদের উচ্চতর শিক্ষার ব্যাপারটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে কেউ কেউ শহরমুখী হচ্ছেন। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সামলাতে গিয়ে রাজধানী ঢাকা বেসামাল একটি নগরীতে পরিণত হয়েছে, একথা সবাই স্বীকার করছেন।

দাবদাহের কারণে প্রচন্ড গরমে বেশ কিছুদিন খুব অস্বস্তিতে ছিল ঢাকাবাসী। কিন্তু সে সময় ঢাকার চারপাশে সবুজ এলাকায় গরমের অনুভূতি কম ছিল। গবেষকরা বলছেন, ঢাকার সঙ্গে শহরের বাইরের গরমের অনুভূতির এই পার্থক্যের মূলে রয়েছে তাপীয় দ্বীপ (হিট আইল্যান্ড)। ঢাকার মূল বসতি ও বাণিজ্যিক এলাকার একটা বড় অংশ তাপীয় দ্বীপে পরিণত হয়েছে। ফলে ঢাকার ঠিক বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশসমৃদ্ধ এলাকার সঙ্গে রাজধানীর তাপের পার্থক্য তৈরি হয়েছে। ভূপৃষ্ঠীয় তাপের এই পার্থক্য সর্বোচ্চ ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বছর স্প্রিনজার নেচারের থিওরেটিক্যাল অ্যান্ড অ্যাপস্নাইড ক্লাইমেটোলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় ঢাকা শহরে তাপীয় দ্বীপের প্রভাবের এসব তথ্য উঠে এসেছে। 'নগরায়ণে পরিবর্তন ও ঢাকা শহরে তাপীয় দ্বীপের প্রভাব' শীর্ষক এই গবেষণায় বলা হয়, ঢাকার উষ্ণতম স্থানের সঙ্গে শহরের বাইরের শীতলতম স্থানের দিন-রাতের ভূপৃষ্ঠীয় তাপমাত্রার পার্থক্য যথাক্রমে ৭ ও ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিষয়টি অনেকটা এমন, ঢাকার অদূরে সাভার বা মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে যখন তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকছে, তখন রাজধানীর তেজগাঁও-ফার্মগেট এলাকার ভূপৃষ্ঠীয় তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার ঢাকার ভেতরেও ভূপৃষ্ঠীয় তাপমাত্রার পার্থক্য দেখা যায়। যেমন- দিনের সবচেয়ে উত্তপ্ত সময়ে মিরপুরের চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকার তাপমাত্রা গুলশানের চেয়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম।

গত কয়েক যুগ ধরে ঢাকা শহরে তাপমাত্রা দ্রম্নত বাড়তে দেখা যাচ্ছে। অন্তত শহরের ফুটপাতের পাশে ও ভবনের ছাদে গাছ লাগালে এবং আবর্জনাস্থলে পরিণত হতে চলা জলাভূমিগুলো ফিরিয়ে আনা গেলে তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি কমিয়ে আনা সম্ভব। ঢাকার একটা বড় অংশ তাপীয় দ্বীপে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকার ফুটপাত, উন্মুক্ত স্থানে গাছ লাগাতে হবে। বাড়ির ছাদে বাগান করতে হবে। এ ছাড়া শহরে জলাভূমি সৃষ্টি করতে হবে। ঢাকার সবচেয়ে উত্তপ্ত এলাকায় (তাপীয় দ্বীপ) পরিণত হয়েছে তেজগাঁও, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, পল্টন, মতিঝিল, গুলশান, বনানী, রামপুরা, বনশ্রী, মাদানী অ্যাভিনিউ। এরপরই আছে উত্তরা, মিরপুর, শেওড়াপাড়া। গবেষণায় দেখা যায়, ২০০১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ঢাকা শহরের ভূপৃষ্ঠ এলাকা ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ সম্প্রসারিত হয়েছে। একই সময়ে জনসংখ্যা বেড়েছে ৭৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ঢাকার ভূপৃষ্ঠ এলাকা সম্প্রসারণের মানে হলো, শহরের সবুজ স্থান ও জলাভূমি কমে গেছে। শহরে বেড়েছে মানুষ ও বসতি। জনসংখ্যা-জনবসতি বেড়ে যাওয়াসহ অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে মাত্র দেড় যুগের বেশি সময়ে ঢাকার কিছু এলাকার গড় তাপমাত্রা শহর সীমানার তুলনায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে; অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে ঢাকায় গরমের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকছে। গবেষণায় বলা হয়, ঢাকা শহরের সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারণ হয়েছে ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে। এই সময়ে শহর এলাকা বেড়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। ২০০১ সালে ঢাকার প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯ হাজার ৪৮১ জন বাস করত। ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৩ হাজার।

ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে তাপমাত্রার প্রভাব কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তারা ঢাকার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য আগামী দুই বছরে দুই লাখ গাছ লাগাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের রকফেলার ফাউন্ডেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় তারা শহরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আশা করছে সবার সহযোগিতায় শহরের তাপমাত্রা কমানো যাবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, ঢাকায় চলতি বছরের এপ্রিলের প্রথম ২৯ দিনের ২৫ দিনই দাবদাহ বয়ে গেছে। আশপাশের জেলাগুলোর তুলনায় ঢাকার তাপমাত্রা সব সময়ই ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকতে দেখা গেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগ চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ঢাকার তাপমাত্রা নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে। গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, শহরের বেশির ভাগ এলাকায় এপ্রিলের প্রায় পুরো সময় তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল; অর্থাৎ এপ্রিলজুড়ে ঢাকায় প্রচন্ড তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। প্রচন্ড তাপপ্রবাহের কারণে ঢাকার যেসব এলাকা বেশি উত্তপ্ত, সেসব এলাকায় অগ্নিঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। ঢাকা শহরে অপরিকল্পিত নগরায়ণ হয়েছে। সবুজ-জলাভূমি প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে। এতে প্রায় পুরো শহর তাপীয় দ্বীপে পরিণত হয়েছে। ফলে এখানে একটি অসহনীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যা শহরের অধিবাসীদের জন্য খুবই অস্বস্তিকর ও অস্বাস্থ্যকর। শহরের বাতাস পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে সবুজায়ন না ঘটাতে পারলে ঢাকা শহরের অবস্থার আরও অবনতি হবে। আমাদের এই প্রিয় শহর কোনোভাবে পিছিয়ে থাকতে পারে না, বিশ্বের বাসের অযোগ্য শহরের কিংবা দুর্ভোগের শহরের তালিকায় ঠাঁই পেতে পারে না। দুঃস্বপ্নের বোঝা আর অনাগত বিপদের শঙ্কা বুকে বয়ে আমরা আমাদের প্রতিটি দিন পার করতে চাই না আর। অনেক সম্ভাবনা এবং সুন্দরের হাতছানি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের প্রিয় এই রাজধানী ঢাকা শহর দুঃস্বপ্ন কিংবা দুর্ভোগের শহর হিসেবে বিবেচিত হোক আমরা কোনোভাবেই প্রত্যাশা করি না। আমরা মনেপ্রাণে চাই, একটি চমৎকার বাসযোগ্য স্বস্তিকর জীবনের শান্ত সুনিবিড় আন্তর্জাতিক মানের শহর হিসেবে গণ্য হোক বিশ্বজুড়ে।

রেজাউল করিম খোকন : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে