রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

লোডশেডিং সঠিক উদ্যোগ নিন

নতুনধারা
  ০১ জুন ২০২৩, ০০:০০

যে কোনো কারণেই জনজীবনে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সঙ্গত কারণেই কোনো সংকট সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, লোডশেডিং হলে তা জনজীবনে কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলে বলার অপেক্ষা রাখে না। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য যে, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, তাপপ্রবাহের কারণে একদিকে দেশে গরম বেড়েছে। অন্যদিকে, বেড়েছে বিদু্যতের চাহিদাও। কিন্তু পর্যাপ্ত উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি নেই। আর এমন পরিস্থিতিতে বিদু্যৎকেন্দ্রের একাংশ অলস বসে থাকছে; বাড়ছে লোডশেডিং। তথ্য মতে, বিদু্যতের ঘাটতি বাড়লে সাধারণত গ্রামে বেশি লোডশেডিং করা হয়। তবে এখন রাজধানীতেও লোডশেডিং করা হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গত মঙ্গলবারও কয়েক দফা করে লোডশেডিং হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

আমরা বলতে চাই, যখন এটা সামনে আসছে যে, গ্যাস-কয়লার অভাবে লোডশেডিং বাড়ছে। অন্যদিকে, ডলার সংকটে জ্বালানি আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। বিদু্যৎ উৎপাদন সক্ষমতার ১৮ শতাংশ অব্যবহৃত জ্বালানির অভাবে বলেও জানা যাচ্ছে। তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। খবরে উঠে এসেছে যে, ডলার সংকটে বিল বকেয়া থাকায় পায়রা তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পথে। ছয় দিন ধরে কেন্দ্রটির একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদু্যৎকেন্দ্রটিতে যে কয়লা মজুত আছে তা দিয়ে ২ জুন পর্যন্ত বিদু্যৎ উৎপাদন করা যাবে। ফলে আগামী ৩ জুন থেকে দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদনও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া শুধু পায়রা নয়, জ্বালানি সংকটের কারণে এই মুহূর্তে ৫৮টি বিদু্যৎকেন্দ্র বন্ধ আছে। কারিগরি সমস্যার কারণে ৩১টি আর রক্ষণাবেক্ষণে বন্ধ আছে ১৫টি বিদু্যৎকেন্দ্র- এমন তথ্য উঠে এসেছে। ফলে ফের লোডশেডিং বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আর এতে শিল্প ও কৃষিতে উৎপাদন খরচ হু হু করে বাড়বে বলে মনে করেন এই দুই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। ফলে সামগ্রিকভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

জানা যাচ্ছে, দেশে বিদু্যৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। পিডিবির তথ্য বলছে, এর মধ্যে ২৪ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ২৯৫ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করা যায়নি জ্বালানির অভাবে- যা মোট উৎপাদন ক্ষমতার ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অন্তত দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদু্যৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। বাকি ১৭ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা ব্যবহার করে দিনের বেলায় গড়ে উৎপাদন করা হয়েছে ১১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। রাতে উৎপাদিত হয়েছে গড়ে ১৩ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট।

আমরা বলতে চাই, যখন জানা যাচ্ছে, দেশে মার্কিন ডলারের সংকটে সরকার গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানি নিয়ে চাপে রয়েছে। এ কারণে বিদু্যৎকেন্দ্রে প্রয়োজন অনুযায়ী জ্বালানি দেওয়া যাচ্ছে না। তখন বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া মোট বিদু্যৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৭ শতাংশ গ্যাসভিত্তিক। কয়েকদিন ধরে বিদু্যৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। দৈনিক ১১০ থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস পাচ্ছে বিদু্যৎ খাত। কিন্তু গ্যাসভিত্তিক সব কেন্দ্র চালানোর মতো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। পিডিবির হিসাবে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট। গড়ে উৎপাদন করা হয়েছে ৬ হাজার ২২১ মেগাওয়াট।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, লোডশেডিং হলে যেমন কর্মযজ্ঞে স্থবিরতা নেমে আসে, তেমনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। আর হঠাৎ করেই বিদু্যতের লোডশেডিং বাড়লে উৎপাদন খাতসহ সব ধরনের কর্মযজ্ঞে নতুন করে সংকট দেখা দেয়। ফলে লোডশেডিং পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে লোডশেডিংয়ের প্রভাব বিবেচনায় রেখে করণীয় কী কিংবা এই সংকটকে কীভাবে দ্রম্নত নিরসন করা যায় সেই পথ খুঁজতে হবে এবং সেই মোতাবেক উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার, লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়ে সর্বত্রই। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে