শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আদ্যোপান্ত

বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের গৃহীত শূন্য সহিষ্ণু নীতি বহাল রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের ভূ-খন্ড কখনোই সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না। উগ্র সাম্প্রদায়িকতা রোধেও বাংলাদেশ তৎপর এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কর্মসূচির ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতাকে তিনি তুলে ধরেন এবং সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
মো. সাখাওয়াত হোসেন
  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আদ্যোপান্ত

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অত্যাসন্ন, নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণ করে আদতে বাংলাদেশের সরকার প্রধান কোন বিষয়গুলোতে নজর দেবেন, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে কি আহ্বান জানাবেন সে সংক্রান্তে বাংলাদেশের মানুষের পাশাপাশি বিশ্ব সম্প্রদায়ের একটি আলাদা নজর ছিল। আলাদা নজর থাকার কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেখানেই অংশ নিচ্ছেন, বিশ্ব সম্প্রদায় বেশ আগ্রহের সহিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে জানা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করে মানবজাতির কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সকলকে একযোগে কাজ করতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা তার বক্তব্যে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমানের পরিবর্তনের লক্ষ্যে তার সরকারের গৃহীত নানাবিধ পদক্ষেপের ব্যাপার তুলে ধরেন এবং বৈশ্বিক বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং ফিলিস্তিন প্রশ্নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। অর্থাৎ ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে বাংলাদেশ বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। অন্যদিকে ছয় বছর হয়ে গেলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি উলেস্নখ করেন- মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হলেও বর্তমানে রোহিঙ্গা ইসু্যটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পরিবেশ, নিরাপত্তা ও অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। প্রত্যাবাসন দ্রম্নতসম্ভব করা না গেলে এর নেতিবাচক দিক বিশেষ করে মৌলবাদের ইন্ধন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে হতাশা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলবে। সব দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের দ্রম্নত প্রত্যাবাসন অত্যন্ত জরুরি মর্মে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

জাতিসংঘের আস্থার পুনঃনির্মাণ এবং বিশ্বব্যাপী সংহতির পুনরুজ্জীবন শীর্ষক আয়োজনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অংশ নিয়ে বলেন; বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা ও জটিলতার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও বৈধতায় মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। এর ফলে একটা শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অর্জিত সাফল্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। করোনা মহামারি ও জলবায়ু সঙ্কটের প্রভাব এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য, অর্থায়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তার উপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন-লক্ষ্যসমূহ অর্জনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। তিনি 'সামিট অফ দ্য ফিউচার'-এর আহ্বানকে সাধুবাদ জানিয়ে উলেস্নখ করেন, প্রক্রিয়াটি ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি অর্জনের জন্য প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। সবার জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য অভিন্ন সঙ্কট মোকাবেলার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি যোগ করেন; বিভাজন, সঙ্কীর্ণতা ও বিচ্ছিন্নতার বিপরীতে একতা, সহমর্মিতা ও বহুপাক্ষিকতা বেছে নিতে হবে। শান্তি ও টেকসই সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে অবশ্যই সুবিচার, ন্যায় ও ন্যায্যতার নীতি অনুসরণ করতে হবে, যার ভিত্তি হবে জাতিসংঘ সনদ এবং ২০৩০ এজেন্ডা।

ভাষণে তিনি উলেস্নখ করেন, বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হতে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১.৫ থেকে ২০২২ সালে ১৮.৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ২৫.১ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে।

সহাস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে, এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশও গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তিনি প্রস্তাব রাখেন; কম খরচে, কম সুদে এবং ন্যূনতম শর্তে অর্থ সংগ্রহে সহায়তা করার এবং জরুরি অবস্থা এবং দুর্যোগের সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার রাখতে হবে এবং সমস্ত ঋণ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে এবং কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং অন্যান্য দুর্বল খাতে লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। অসহায় নারী, বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং সমাজের অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারিত হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা পাচ্ছেন। চলতি অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ২৬,২৭২ কোটি টাকা (প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়েছে এবং এতে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি যে কোনো নাগরিক এই পেনশন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী উলেস্নখ করেন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গসমতা নিশ্চিতকরণ ও প্রত্যাশা পূরণে বাংলাদেশ প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। নারী শিক্ষাসহ সার্বিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্ব প্রদান, ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, প্রাথমিক হতে উচ্চশিক্ষা পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি, বৃত্তি এবং এককালীন অনুদান প্রদান করা হয়েছে এবং তাতে অর্ধেকেরও বেশি নারী। জাতীয় বাজেটের মোট ৩০ শতাংশ নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের উলেস্নখযোগ্য অংশগ্রহণ রয়েছে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিটি খাতে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য কাজ করছে। বাল্যবিবাহ, নারীর প্রতি সহিংসতা, নারী পাচার এবং অন্যান্য অপরাধ নিরসনের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার এবং নারীর অগ্রগতির জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের 'পস্ন্যাটফর্ম ফর উইমেন লিডার'-এর মাধ্যমে সব আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সমর্থন করছে।

প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে উলেস্নখ করেন; বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের ০.৪৭% এরও কম অবদান রাখলেও বাংলাদেশ জলবায়ুজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি। এর সমাধানের লক্ষ্যে জরুরি, সাহসী এবং উচ্চাভিলাষী সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। জলবায়ু অভিযোজনের জন্য ২০০৯ সালে 'বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড' প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং দেশের নিজস্ব সম্পদ থেকে এই তহবিলে এ পর্যন্ত ৪৮০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনের লক্ষ্যে সমুদ্র উপকূলে বাঁধ, সাইক্লোন শেল্টার, গ্রিন বেল্ট এবং বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। কক্সবাজারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাস্তুচু্যত মানুষের জন্য বিশ্বের সবচেয় বড় আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সেখানে ৪ হাজার ৪০৯টি উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ 'আশ্রয়ণ' প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার পরিবারের ৫০ লাখ মানুষকে বিনামূল্যে ঘর দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন; 'বাংলাদেশ ডেল্টা পস্ন্যান ২১০০' বাস্তবায়ন করছে। এর লক্ষ্য হলো সমন্বিত ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি নিরাপদ, জলবায়ু সহনশীল এবং সমৃদ্ধ ডেল্টা অর্জন। সরকার 'মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা' গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ সোলার হোম সিস্টেম ব্যবহার করছে। আশা করা যায়, ২০৪১ সালের মধ্যে শক্তির ৪০% পুনঃনবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া যাবে। তিনি উলেস্নখ করেন, 'বস্ন্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ' অকার্যকর হয়ে পড়েছে এবং এ ব্যবস্থার দ্রম্নত পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন। এছাড়াও, কৃষিপ্রধান দেশগুলোর জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে সারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া, উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের লক্ষ্যে হিমাগার নির্মাণের জন্য বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রয়োজন।

ভিশন ২০৪১-এর আওতায় 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বিনির্মাণে বাংলাদেশ সরকার বিপুল বিনিয়োগ করেছে এবং এর মাধ্যমে দেশকে একটি উচ্চ আয়ের, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং নিত্যনতুন উদ্ভাবনের পথ উন্মুক্ত করা। সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, লিঙ্গসমতা নিশ্চিতকরণ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতির আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল প্রযুক্তি যেমন বহুবিধ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে সহায়তা করছে, তেমনি তা আবার বহুবিধ আন্তঃরাষ্ট্রীয় এবং অন্তঃরাষ্ট্রীয় বৈষম্য সৃষ্টির মাধ্যমে বিদ্যমান বিভেদসমূহকে গভীরতর করছে। টেকসই প্রযুক্তির সমতাভিত্তিক প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা গেলে তা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিপুলভাবে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার এবং এর সুফলসমূহের সমতাভিত্তিক বণ্টন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসনের জন্য প্রণীত আন্তর্জাতিক কমপ্যাক্টের পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পুনরায় প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ হওয়ার উপর জোর প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের জন্য ন্যূনতম মানদন্ড স্থাপনের পাশাপাশি এসকল লক্ষ্য অর্জনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা যেমন পর্যাপ্ত অর্থায়ন, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং উত্তম চর্চাসমূহ বিনিময় নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া সর্বজনীন ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রম্নতি পূর্ণাঙ্গ ও অবিচল। বাংলাদেশ অনতিবিলম্বে আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ এবং অস্ত্রের প্রসারণ বন্ধবিষয়ক চুক্তিসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অদ্যাবধি ১ লাখ ৮৮ হাজার বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ ৪০টি দেশে ৫৫টি শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীগণ তাদের পেশাগত দক্ষতা এবং কাজের জন্য সমাদৃত।

বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের গৃহীত শূন্য সহিষ্ণু নীতি বহাল রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের ভূ-খন্ড কখনোই সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না। উগ্র সাম্প্রদায়িকতা রোধেও বাংলাদেশ তৎপর এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কর্মসূচির ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতাকে তিনি তুলে ধরেন এবং সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

পাশাপাশি মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি যাতে উন্নয়নশীল দেশের উপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিতে ব্যবহৃত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধান সবার মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। সবাইকে আইনগত সুরক্ষা প্রদান ও সুবিচার নিশ্চিতকরণে গত এক দশকে বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থার তাৎপর্যপূর্ণ সংশোধন করা হয়েছে। একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে, জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন; বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাবে। তিনি বিশ্ব নেতাদের কাছে আবেদন জানান, যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করুন এবং আমাদের জনগণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্থায়ী শান্তি, মানবজাতির কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করুন। কাজেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে পৃথিবী থেকে যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

মো. সাখাওয়াত হোসেন : চেয়ারম্যান, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে