বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে বাংলাদেশ। ফলে অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছেন এবং নানান রোগে ভুগছেন। বায়ুদূষণে বিশ্বের ১০৯টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৬তম। আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-একিউআই) মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকার স্কোর ছিল ৯৬। বাতাসের এই মান 'মাঝারি' বা 'গ্রহণযোগ্য' হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে ছিল পাকিস্তানের করাচি। একিউআই সূচকে শহরটির স্কোর ২২৮। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল পাকিস্তানের আরেক শহর, লাহোর। একিউআই সূচকে এ শহরের স্কোর ১৮২। অন্যদিকে, ১৭৫ স্কোর নিয়ে তালিকার তৃতীয় অবস্থানে ছিল ভারতের দিলিস্ন। আইকিউএয়ার সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। তারা নিয়মিত দূষিত বাতাসের শহরের তালিকা প্রকাশ করে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে। জানুয়ারিতে মোট ৯ দিন রাজধানীর বাতাসের মান দুর্যোগপূর্ণ ছিল- যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বায়ু দূষণের কারণে সারা বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু কমেছে ২ বছর ৪ মাস। অন্যদিকে, বাংলাদেশের একজন নাগরিকের গড় আয়ু কমছে ৬ বছর ৮ মাস।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত বায়ুদূষণ বিষয়ক এক বৈশ্বিক প্রতিবেদন 'এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স-২০২৩' এ তথ্য উঠেছে। আয়ুষ্কালের পরিপ্রেক্ষিতে বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা, দূষণ বাংলাদেশে মানব স্বাস্থ্যের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম হুমকি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, সিসা দূষণের ফলে বাংলাদেশে প্রতি বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হন ১ লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। আবার এ দূষণের কারণে শিশুদের আইকিউ কমে যাচ্ছে। ফলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। বায়ুমান উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদিএবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। শুষ্ক মৌসুমে সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াটার সাপস্নাই অ্যান্ড সুয়ারেজ অথোরিটির (ওয়াসা) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে দূষিত শহরগুলোতে প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পরপর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তায় আবর্জনা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা যেতে পারে। অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়াতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, প্রয়োজনে নম্বর পেস্নট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের প্রচলন করা যেতে পারে। মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদবাগান করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে, দূষিত শহরগুলোর আশেপাশে জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে। আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে। আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসেবে সেন্ড বক্লের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হচ্ছে, নির্মল বায়ু আইন যতদ্রম্নত সম্ভব প্রণয়ন করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশনের (ক্যামস) ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। এছাড়াও বায়ুদূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করতে হবে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ কেন বাংলাদেশ হবে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একুশ শতকে বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনই যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া যায় তা হলে ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের বিপদ হিসেবে দেখা দেবে। সুতরাং, সময় থাকতেই সাবধান হওয়া সমীচীন।