শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

প্রবাসী আয়ে ধস উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

  ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
প্রবাসী আয়ে ধস উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানুষ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এর ফলে, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়। কিন্তু যদি প্রবাসী আয়ে ধস নামে তবে তা কতটা উদ্বেগজনক বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে চরম আকার ধারণ করেছে ডলারের সংকট। এমনকি সংকট কাটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এতে টান পড়েছে রিজার্ভে। এরই মধ্যে বড় ধাক্কা লেগেছে প্রবাসী আয়ে।

তথ্য মতে, সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৪ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, এটি গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এসেছিল ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এরপর সেপ্টেম্বরের আগে আর কোনো মাসে এত কম রেমিট্যান্স আসেনি।

আমরা বলতে চাই, যখন প্রবাসী আয়ে ধস নামার বিষয়টি সামনে আসছে এবং এটি গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়- তখন এটা এড়ানোর সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে তেমনি করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে তার বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসের পুরো সময়ে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার এসেছে- যা গত বছরের একই মাস (সেপ্টেম্বর) থেকে ১৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার কম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকে এসেছে ৩ কোটি ৫১ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১৮ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫০ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

আমরা বলতে চাই, প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখা। প্রবাসী আয়ে ধস, বিষয়টিকে সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই। এটা আমলে নেওয়া দরকার, দেশের অগ্রগতিতে রেমিট্যান্সের উলেস্নখযোগ্য অবদান রয়েছে। এছাড়া রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে- যা ইতিবাচক। বিশেষ করে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক- এমন আলোচনা সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। এছাড়া কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি নতুন বাজার এবং দক্ষ জনশক্তির বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। প্রবাসে দক্ষ জনশক্তি যত বেশি পাঠানো সম্ভব হবে ততই দেশের সুনাম বাড়বে এবং জনশক্তি রপ্তানিও বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করা সঙ্গত। ফলে সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, একদিকে দেশে চরম আকার ধারণ করেছে ডলারের সংকট। টান পড়েছে রিজার্ভে। আবার এরই মধ্যে বড় ধাক্কা লেগেছে প্রবাসী আয়ে ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ করা ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। মনে রাখা দরকার, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই ইতিবাচক। ফলে প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা আবশ্যক। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও। এছাড়া যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত, তাদের দেখভালের ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে গৃহীত উদ্যোগের বাস্তবায়নসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে