কোনোভাবেই দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকা। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে আসে, তা উদ্বেগজনক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, রাজধানী ঢাকার বাতাস মঙ্গলবার সকাল ৯টায় 'সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর' ছিল। আর এ সময় বায়ুদূষণে বিশ্বের ১১৮টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল পঞ্চম। আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে ঢাকার স্কোর ছিল ১৪১। এছাড়া সোমবার সকাল ১০টার দিকেও ঢাকার বাতাস 'সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর' ছিল। ওই সময় বায়ুদূষণে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল নবম। স্কোর ছিল ১১৪। উলেস্নখ্য, বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে। জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বিশ্বে বায়ুদূষণে প্রথম অবস্থানে ছিল ভারতের নয়াদিলিস্ন। আইকিউএয়ারের সূচকে শহরটির স্কোর ৩৪৩। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে যথাক্রমে পাকিস্তানের লাহোর ও ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। শহর দুটির স্কোর ছিল যথাক্রমে ১৭৬ ও ১৬৫।
প্রসঙ্গত, আমরা বলতে চাই- বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করাও জরুরি। এর আগে এটা সামনে এসেছিল যে, বায়ুদূষণের একাধিক উৎস রয়েছে, ঢাকা ও বাংলাদেশের অন্যান্য অংশে বায়ুদূষণ মোকাবিলায় বায়ুর গুণগতমান ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিস্তৃত পরিকল্পনা প্রয়োজন বলেও পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। ফলে, বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। উলেস্নখ করা দরকার, আইকিউএয়ারের মানদন্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে মাঝারি বা গ্রহণযোগ্য মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। আর স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা অস্বাস্থ্যকর বাতাস। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে খুবই অস্বাস্থ্যকর বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে দুর্যোগপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া জরুরি, ঢাকার বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে আইকিউএয়ার যে পরামর্শ দিয়েছে, তার মধ্যে আছে ঘরের বাইরে গেলে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর মানুষকে মাস্ক পরতে হবে। এ ছাড়া ঘরের বাইরে ব্যায়াম না করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, এই পরামর্শের বিষয়গুলোকে সামনে রেখে প্রচারপ্রচারণা জরুরি এবং মানুষকে সচেতন করতে কার্যকর উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, এর আগেও নানা সময়ে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ সক্রান্ত উদ্বেগ সামনে এসেছে। এমনটিও আলোচনায় এসেছিল যে, বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ইটভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের গবেষণায় উঠে এসেছিল, সারাদেশে ইটভাটা আছে প্রায় ৮ হাজার। আর ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে রয়েছে সাড়ে ৭০০টির বেশি। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, ইটভাটাগুলো প্রতি মৌসুমে ২৫ লাখ টন কয়লা ও ২২ লাখ টন জ্বালানি কাঠ পোড়ায়। ইটভাটার দূষণে ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার টন গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা প্রায় ৫৮ শতাংশ দায়ী বলেও তথ্য উঠে এসেছিল। অন্যদিকে, বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে নির্মাণকাজ, যানবাহন, সড়ক ও মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলার কারণে, বিভিন্ন জিনিসপত্রসহ পস্নাস্টিক পোড়ানোসহ বিভিন্ন কারণ উঠে এসেছে নানা সময়ে। আমরা মনে করি, দূষণের কারণগুলো আমলে নিয়ে দূষণমুক্ত করতেও যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি।
সর্বোপরি বলতে চাই, এর আগে জানা গিয়েছিল বায়ুদূষণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি। ফলে, বায়ুর মানের বিষয়টি আমলে নিতে হবে। বায়ুদূষণের কারণে বাচ্চাদের স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যাধি হয়। ফুসফুসে ক্যানসার, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনিতে জটিলতা বাড়তে পারে এমন বিষয়ও এর আগে উঠে এসেছে। ফলে বায়ুদূষণ রোধ ও বায়ুমানের পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।
\হ