রোববার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

চালের দাম বাড়ছেই যথাযথ উদ্যোগ জরুরি

  ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
চালের দাম বাড়ছেই যথাযথ উদ্যোগ জরুরি

চালের দাম বাড়ছেই, অন্যদিকে সরকারি মজুত কমছে। এমন খবর সামনে আসলে তা কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ছাড়া আরও উৎকণ্ঠার বিষয় হলো, সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও ভারতসহ উজানের দেশগুলো থেকে আসা ঢলে আমনের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তথ্যমতে, উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ৮ লাখ ৩৯ হাজার টন। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সরকারের কাছে দেওয়া একটি প্রতিবেদনে বলেছে, চাল আমদানি বাড়াতে শুল্ক-কর পুরোপুরি তুলে নেওয়া দরকার। ফলে এ বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া জরুরি।

আমরা বলতে চাই, এটা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই, গরিব মানুষের খাদ্য ব্যয়ের একটি বড় অংশ যায় চালের পেছনে। এক্ষেত্রে এটাও খেয়াল করা দরকার, চালের দাম এমন সময় বাড়ছে, যখন ভোজ্যতেল, চিনি, সবজি, ডিম, মুরগির মাংসসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম চড়া। এ ছাড়া এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে ভাত-প্রধান বাঙালি যদি চাল কিনতে হিমশিম খায় দাম বৃদ্ধির কারণে তবে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী বা হতে পারে! এ ছাড়া বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায়, চালের দাম বেড়ে গেলে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। সুতরাং যে করেই হোক চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে কোনো মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হলে চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। স্মর্তব্য, ২০১৭ সালে হাওড়ে আগাম বন্যায় বোরো মৌসুমের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তখন এক সপ্তাহে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৭ থেকে ৯ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ফলে বাজার পরিস্থিতি আর চালের দাম বাড়ছে, মজুদ কমছে এমন তথ্য যখন উঠে আসছে; তখন তা আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। উলেস্নখ্য, খাদ্য অধিদপ্তরও বলছে, তাদের গুদামে চালের মজুত ১০ লাখ টনের নিচে নেমেছে, যা গত ১৫ আগস্ট ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টন। সরকারিভাবে বিতরণ বাড়ানোয় মজুত কমছে বলে জানা যাচ্ছে। এ ছাড়া যে হারে চাল বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে, তাতে আগামী বছরের জুলাই নাগাদ প্রয়োজনের তুলনায় ১১ লাখ টন চালের ঘাটতি হতে পারে এটাও জানা যাচ্ছে। খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বলেছেন, বন্যার কারণে এবার চাল উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। চালের মজুত বৃদ্ধির বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক হওয়ার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে তারা চিঠি দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। আমরা মনে করি, সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে যতদ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

উলেস্নখ্য, ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন চালের দাম ৭ থেকে ১০ শতাংশ বেশি। এক মাসে বেড়েছে ২ শতাংশ পর্যন্ত। এ ছাড়া টিসিবির হিসাবে, বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। মাঝারি চাল ৫৮-৬৩ টাকা। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৮০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৮ টাকা। সরু চালের সর্বনিম্ন দর ৮ টাকা বেড়ে ৭২ টাকা হয়েছে বলে উলেস্নখ করেছে টিসিবি। টিসিবি আরও বলছে, গত ৮ আগস্ট নতুন অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম কেজিতে ২ টাকা, মাঝারি চাল ৪ টাকা এবং সরু চালের দাম ১২ টাকা বেড়েছে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পেলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে। নিম্নআয়ের মানুষ দিশাহারা হয়ে ওঠে। একদিকে চালের দাম বাড়ছে অন্যদিকে সরকারি মজুত কমছে এমন পরিস্থিতি আমলে নিন। সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে