দারিদ্র্য, পারিবারিক অসচেতনতা, ভৌগোলিক অবস্থান, ধর্ম ও সামাজিক কুসংস্কারের কারণে বাংলাদেশে এখনো বাল্যবিয়ের হার বেশি। এ অবস্থায় ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সিরাক-বাংলাদেশ আয়োজিত বাংলাদেশ নবম জাতীয় যুব পরিবার পরিকল্পনা সম্মেলন-২০২৪ এর একটি সেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, অধিকার এবং পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিশ্চিত করতে দুদিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিসেফের তথ্যমতে, বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার। করোনা মহামারির পর এই হার আরও বেড়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ফার্টিলিটি রেট ময়মনসিংহ জেলায়, ২ দশমিক ৭। এ ছাড়া ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভের তথ্যমতে, ১৬ বছরের আগে ২৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
২০১৬ সাল থেকে আয়োজিত এ সম্মেলন প্রতি বছর তরুণের জন্য একটি অনন্য পস্ন্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে আসছে। যেখানে তারা পরিবার পরিকল্পনা, সর্বজনীন প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা, জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং লিঙ্গ সমতা নিয়ে তাদের উদ্বেগ ও সমাধানের প্রস্তাব তুলে ধরতে পারেন। আলোচনায় উঠে এসেছে তরুণদের সম্ভাবনার কথা। বক্তারা তরুণদের মধ্যে অনেক সম্ভাবনা দেখছে। সামাজিক সংস্কারের জায়গায় কাজ করতে হবে তরুণদের। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। আমরাও তাই মনে করি। অবশ্য দেশের অনেক এলাকার তরুণ-তরুণীরা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছে। অনেক জায়গায় তারা বিয়ে বন্ধ করেছে।
বাল্যবিবাহ রোধে ও কন্যাশিশু-কিশোরীদের সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দের দাবি উঠেছে অনেকদিন থেকেই। কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে নারী ও কন্যাশিশুদের জীবনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মহামারির কারণে নারীরা স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকির মধ্যে ছিল। সেই সঙ্গে বেড়েছে নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি। কমেছে নারীর সামাজিক নিরাপত্তা। করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক-সামাজিক সংকটে কন্যাশিশু ও কিশোরীদের বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়ার কারণে বাল্যবিবাহের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে বেড়ে গেছে নারীর প্রজননস্বাস্থ্য ঝুঁকি। বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়েসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে কয়েক দশক ধরে যে সামাজিক অগ্রগতি হয়েছে, কোভিড-১৯ সংকটের কারণে তা পিছিয়ে যাওয়ার হুমকি তৈরি হয়েছে। যা আমাদের জন্য এক অশুভ বার্তা।
মনে রাখতে হবে বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক সমস্যা। এর ফলে দেশের কন্যাশিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে যায়। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গিয়ে মৃতু্য ডেকে আনে। অনেকেই অত্যাচার-নির্যাতনে মারায় কিংবা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও কাজীরাও আগে বাল্যবিয়ে বন্ধে জোরালো ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এখন সেটা কমে এসেছে।
আমরা মনে করি, বাল্যবিয়ে রোধে সরকারকে ব্যাপকভাবে প্রচার চালাতে হবে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। না হলে বাল্যবিয়ে বেড়ে গেলে জাতীয় উন্নয়নে এর বড় প্রভাব পড়বে। সময় থাকতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়াই সমীচীন।