প্রশ্ন: তোমাকে এমন একটি এলাকায় বাস করতে বলা হলো যেখানে প্রতি বছর কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। ওই পরিবেশে তুমি কীভাবে খাপ খাইয়ে চলবে? ৫টি বাক্যে লেখ।
উত্তর: ওই এলাকায় খাপ খাইয়ে চলার জন্য আমি নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করব-
১. দুর্যোগ শুরুর আগেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
২. শুকনো খাবার সংরক্ষণ করে রাখব।
৩. শিশু, বৃদ্ধ ও গৃহপালিত পশু-পাখিকে আগেই আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাব।
৪. বন্যার কারণে কোনো জায়গা পানিতে ডুবে থাকলে তাতে ভাসমান ধাপ তৈরি করে তার ওপর মাটি দেব এবং ওই ধাপের ওপর লাউ, শিম, বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো, ঝিঙা প্রভৃতি চাষ করব।
৫. লবণাক্ত মাটিতে জন্মাতে পারে এ রকম ফসলের জাত উদ্ভাবন করে চাষ করার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: গ্রিনহাউস কেন গরম থাকে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কাঁচ তাপ কুপরিবাহী। কাঁচের ভেতর দিয়ে তাপ সহজে চলাচল করতে পারে না। কিন্তু আলো খুব সহজেই কাঁচের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে পারে। গ্রিনহাউসের দেয়াল এবং ছাদ কাঁচের তৈরি। এ কারণে সূর্যের আলো খুব সহজেই কাঁচের ভেতর দিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। অন্যদিকে বাইরের ঠান্ডা ঘরের ভেতরে আসতে পারে না। আবার ঘরের ভেতরের গরমও বাইরে যেতে পারে না। এতে গ্রিনহাউসের ভেতরটা বেশ গরম থাকে।
প্রশ্ন: পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস বেড়ে যাওয়ার কারণগুলো ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: পৃথিবীতে অধিক হারে লোকসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের চাহিদা। সে চাহিদা পূরণে কলকারখানা ও যানবাহনে কয়লা, কেরোসিন, পেট্রল পোড়ানো হচ্ছে। এসব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে, নতুন নতুন ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র তৈরির জন্য গাছপালা কেটে বন উজাড় করা হচ্ছে। এ কারণে গাছ বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করছে কম। ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কী কী হতে পারে? আলোচনা কর।
উত্তর: বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চল ও পর্বতের চূড়ার বরফ গলে যাচ্ছে। ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এভাবে তাপমাত্রা ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়তে থাকলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। সাগর থেকে নদীতে নোনা জল ঢুকে পড়তে পারে। এ ছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ঘন ঘন ঘটতে পারে।
প্রশ্ন: জলবায়ু পরিবর্তন রোধে করণীয় আলোচনা কর।
উত্তর: জলবায়ু পরিবর্তন রোধের সহজ উপায় হলো বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের নিঃসরণ কমানো। এজন্য আমাদের করণীয়-
১. কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানো কমিয়ে আনা। এর বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি যেমন সৌরশক্তি, বায়ুপ্রবাহ, জৈব জ্বালানি ব্যবহার।
২. বিদু্যৎ, গ্যাস এগুলো কম ব্যবহার করলেও কার্বন ডাইঅক্সাইড কম উৎপন্ন হয়।
৩. বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড কমানোর জন্য আরেকটি উপায় হলো বেশি করে গাছ লাগানো। কারণ গাছ কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে খাদ্য তৈরি করে। ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড কমে আসবে।
প্রশ্ন: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কীভাবে খাপ খাইয়ে চলা যেতে পারে তা আলোচনা কর।
উত্তর: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন উপায়ে টিকে থাকা যায়। এখানে ৩টি পদক্ষেপের কথা আলোচনা করা হলো-
১. প্রতিকূল অবস্থা শুরু হওয়ার আগেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ। যেমন- ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া।......
২. বাংলাদেশের কিছু এলাকা বর্ষাকালে ডুবে থাকে। এসব এলাকায় ভাসমান ধাপ তৈরি করে তার ওপর কৃষক কখনো অল্প পরিমাণে মাটি দিয়ে দেন। এ ধরনের ভাসমান ধাপগুলোর ওপর লাউ, শিম, বেগুন, ঢঁ্যাড়শ, টমেটো, ঝিঙা এ রকম সবজি চাষ করা যায়। এভাবে বন্যার সময় ফসল চাষ করা যেতে পারে।
৩. উপকূলীয় অঞ্চলে নোনা পানি প্রবেশের কারণে জমি লবণাক্ত হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে লবণাক্ত মাটিতে জন্মাতে পারে এ রকম ফসলের জাত উদ্ভাবন করে চাষ করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ সম্পর্কে ৫টি বাক্যে লেখ।
উত্তর: পৃথিবীর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, একে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মূল কারণ বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কলকারখানা ও যানবাহনে কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে। এসব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বন উজাড় করে ফেলার কারণে গাছ কার্বন ডাইঅক্সাইড কম শোষণ করছে। ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে যাচ্ছে। আর যত বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড বাড়ছে বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রাও তত বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটিই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ।
প্রশ্ন: জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে করণীয় ৫টি কাজ উলেস্নখ কর।
উত্তর: জলবায়ু পরিবর্তন রোধে করণীয় কাজগুলো হচ্ছে-
১. কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ কমানো।
২. নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা।
৩. বেশি করে গাছ লাগানো।
৪. আসবাবপত্র ও নির্মাণকাজে কাঠের ব্যবহার কমানো।
৫. কলকারখানা থেকে বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণ।
প্রশ্ন: বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তির কথা বলা হলো। এর ব্যবহারে কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে? ৫টি বাক্যে লেখ।
উত্তর: সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তি দুটি নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস। এ দুটি শক্তির ব্যবহারের নিম্নরূপ সুবিধা পাওয়া যাবে-
১. সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তির সাহায্যে বিদু্যৎ উৎপাদন করে বাসা, অফিস ও পানি সেচকাজে ব্যবহার করা যায়।
২. সৌরশক্তির সাহায্যে ক্যালকুলেটর চালানো যায়।
৩. বায়ুশক্তি কাজে লাগিয়ে কলকারখানা চালানো যায়।
৪. বায়ু ও সৌরশক্তি আহরণে অবকাঠামোগত খরচ ছাড়া অন্য কোনো খরচ লাগে না।
৫. উভয় প্রকার শক্তিই পরিবেশবান্ধব। অর্থাৎ এরা পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না।
প্রশ্ন: অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ কি? অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার কৌশলে ৩টি বাক্যে লেখ।
উত্তর: যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ একবার নিঃশেষ হয়ে গেলে আর পাওয়া যাবে না, সেগুলোকে বলা হয় অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন- কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য খনিজ দ্রব্য।
অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার ৩টি কৌশল নিচে উলেস্নখ করা হলো-
১. অনবায়নযোগ্য সম্পদের ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি যত্নবান হতে হবে।
২. তাপশক্তি, সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ও পানিশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
৩. সীমিত ব্যবহারের পাশাপাশি বিকল্প সম্পদের উপায় উদ্ভাবনে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে।
প্রশ্ন: অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে বলে তুমি মনে কর? ৫টি বাক্যে লেখ।
উত্তর: অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তির সবচেয়ে বড় উৎস সৌরশক্তিকে সৌর প্যানেলে তড়িৎশক্তিতে রূপান্তর করে বিদু্যতের চাহিদা পূরণ করা যায়। উইন্ডমিলের মাধ্যমে বায়ুপ্রবাহ কাজে লাগিয়ে কলকারখানা চালানো যেতে পারে। এ ছাড়া মানুষ ও অন্যান্য পশু-পাখির মলমূত্র থেকে বায়োগ্যাস উৎপন্ন করে জ্বালানির চাহিদা অনেকাংশ মেটানো সম্ভব।
প্রশ্ন: প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ৫টি বাক্যে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: প্রাকৃতিক সম্পদ অফুরন্ত নয় বলে এসব সম্পদ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে এক সময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই এসব সম্পদ ব্যবহারে যথেষ্ট যত্নবান হতে হবে। যেমন- অপ্রয়োজনে ব্যবহার না করা, ব্যবহারের মাত্রা কমানো, যতটুকু সম্ভব পুনর্ব্যবহার করা এবং পুনরুৎপাদন করা। এতে ভবিষ্যতে চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ পাওয়া যাবে। তাই প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
প্রশ্ন: জীবাশ্ম জ্বালানি কী, তা বর্ণনা কর।
উত্তর: শক্তির অতিপরিচিত উৎস কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসকে বলা হয় জীবাশ্ম জ্বালানি। নিচে এদের সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-
কয়লা : পৃথিবীতে এক সময় অনেক বনভূমি ছিল। এসব বনের গাছ, পাতা ও কান্ড দীর্ঘ সময় মাটির নিচে চাপা পড়ে ধীরে ধীরে কয়লায় রূপান্তরিত হয়।
খনিজ তেল : কোটি বছর আগে সমুদ্রের তলদেশে গাছপালা ও সামুদ্রিক প্রাণী চাপা পড়ে ধীরে ধীরে খনিজ তেলে রূপান্তরিত হয়।
প্রাকৃতিক গ্যাস : পৃথিবীর অভ্যন্তরের প্রচন্ড তাপ ও চাপ এ ধরনের গ্যাস সৃষ্টির মূল কারণ।
প্রশ্ন: সম্পদের পরিকল্পিত ব্যবহারের ৩টি পদ্ধতি বর্ণনা কর।
উত্তর: সম্পদের পরিকল্পিত ব্যবহারের ৩টি পদ্ধতি হলো- ব্যবহারের মাত্রা কমানো, অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বন্ধ করা, পুনর্ব্যবহার ও পুনরুৎপাদন। নিচে এসব পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো-
১. ব্যবহারের মাত্রা কমানো : খনিজ তেল, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস অনবায়নযোগ্য। এ সম্পদগুলো একবার নিঃশেষ হলে আর পাওয়া যাবে না। তাই এসব সম্পদ কম ব্যবহার করতে হবে। এগুলোর বদলে নবায়নযোগ্য সম্পদ বায়ু ও সৌরশক্তির ব্যবহার করতে হবে।
২. অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বন্ধ করা : অনবায়নযোগ্য সম্পদ ব্যবহারে সচেতন ও মিতব্যয়ী হতে হবে। যেমন- বিদু্যৎসাশ্রয়ী বৈদু্যতিক বাল্ব ব্যবহার করা, প্রয়োজন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফ্যান, লাইট, গ্যাসের চুলা বন্ধ করা।
৩. পুনর্ব্যবহার এবং পুনরুৎপাদন : সম্পদের পুনর্ব্যবহার ও পুনরুৎপাদন করতে হবে। যেমন- লেখা শেষে কাগজ দিয়ে ঠোঙা তৈরি করে তা কাজে লাগানো হলো পুনর্ব্যবহার। পুরনো লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, টিন এগুলো গলিয়ে নতুন জিনিস তৈরি করা হলো পুনরুৎপাদন।
প্রশ্ন: অনবায়নযোগ্য সম্পদের ব্যবহারে যত্নবান হতে হবে কেন? ৫টি বাক্যে লেখ।
উত্তর: যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ একবার ব্যবহার করলেই নিঃশেষ হয়ে যায় সেগুলোকে অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। যেমন- মাটিস্থ ধাতু, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি। মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানি চাহিদাও বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর সব তেল, গ্যাস বা কয়লার মতো জ্বালানি শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই এসব অনবায়নযোগ্য সম্পদের ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি যত্নবান হতে হবে।
প্রশ্ন: প্রাকৃতিক সম্পদ কী? প্রাকৃতিক সম্পদের ৪টি ব্যবহার উলেস্নখ কর।
উত্তর: প্রকৃতির যা কিছু আমাদের কাজে লাগে তাই প্রাকৃতিক সম্পদ। যেমন- মাটি, পানি, বায়ু, উদ্ভিদ, প্রাণী, পেট্রোলিয়াম, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, চুনাপাথর, খনিজ আকরিক ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক সম্পদের ৪টি ব্যবহার নিচে উলেস্নখ করা হলো-
১. নদীর পানি কাজে লাগিয়ে বিদু্যৎ উৎপাদন করা হয়।
২. রান্নার কাজে, শিল্প উৎপাদনে, সার উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
৩. মোটর গাড়িতে, বাতি জ্বালাতে, ইঞ্জিন চালাতে খনিজ তেল ব্যবহার করা হয়।
৪. সূর্যের আলো ব্যবহার করে উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করে।
প্রশ্ন: জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কী কী চাহিদা বাড়ে? বাড়তি ঘরবাড়ি তৈরি ও বাড়তি খাদ্য উৎপাদনে মাটির কী ক্ষতি হয়? ৩টি বাক্যে লেখ।
উত্তর: জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের প্রধান চাহিদা বাড়ে খাদ্যের। তারপর কাপড়-চোপড়, থাকার জায়গা, খেলার জায়গা, চিকিৎসা ইত্যাদি। এগুলোই হচ্ছে মানুষের মৌলিক চাহিদা। আবার বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যোগ হবে পড়াশোনা, যাতায়াত, ঘর ও বাইরে খেলার চাহিদা।
বাড়তি ঘরবাড়ি তৈরি ও বাড়তি খাদ্য উৎপাদনে মাটির যে ক্ষতি হয় তা নিচে বর্ণনা করা হলো-
১. বাড়তি ঘরবাড়ি তৈরি করতে মাটি কেটে বসতভিটা তৈরি করায় মাটি আলগা হয় এবং বৃষ্টির পানির সঙ্গে নদী বা খাল-বিলে গিয়ে পড়ে মাটির ক্ষয় হয়।
২. বাড়তি বাড়িঘর তৈরিতে গাছপালা কেটে ফেললে মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
৩. বাড়তি খাদ্য উৎপাদনে জমিতে অধিক পরিমাণ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় মাটির উর্বরতা কমে যায়।
প্রশ্ন: বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পরিবেশের ওপর কিরূপ প্রভাব ফেলে বলে তুমি মনে কর? ৫টি বাক্যে লেখ।
উত্তর: বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পরিবেশের ওপর নিম্নরূপ প্রভাব ফেলে-
১. অধিক মাত্রায় খাদ্যশস্য ও ফসল ফলানোর জন্য একই জমি বছরে একাধিকবার চাষ করতে হয়।
২. জমিতে প্রচুর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়- যা জমির উর্বরতা নষ্ট এবং বিভিন্ন জলাশয়ের পানি দূষিত করে।
৩. গৃহনির্মাণ ও জ্বালানি চাহিদা মেটাতে গাছপালা নিধন করার ফলে পরিবেশে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
৪. পশু-পাখির আবাসস্থল ধ্বংসের ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হয়।
৫. খাদ্যশৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটে।
প্রশ্ন: জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে?
উত্তর: জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে-
১. বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান ও কলাকৌশলগত যথাযথ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে।
২. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা ও চর্চার মাধ্যমে।
৩. দেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা করে।
৪. উপযুক্ত কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে।
৫. বিজ্ঞানভিত্তিক ও কারিগরি শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে।
৬. বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।
প্রশ্ন: প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর জনসংখ্যার প্রভাব বর্ণনা কর।
উত্তর: প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে মাটি, পানি, বায়ু, গাছপালা ও খনিজসম্পদকে বোঝায়। এসব সম্পদের ওপর অধিক জনসংখ্যার প্রভাব নিচে বর্ণনা করা হলো-
১. মাটি : অধিক জনসংখ্যার অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জমিতে অধিক হারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে মাটি দূষিত হচ্ছে।
২. পানি : অধিক জনসংখ্যার কারণে তৈরি হচ্ছে অধিক বর্জ্য। এসব বর্জ্যের বেশির ভাগই পানিতে ফেলা হয়। এ কারণে পানি দূষিত হচ্ছে।
৩. বায়ু : অধিক জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজন অধিক যানবাহন, শিল্পকারখানা, ইটের ভাটা। এসব উৎস থেকে নির্গত ক্ষতিকর গ্যাস বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে।
৪. গাছপালা : অধিক জনসংখ্যার জন্য ব্যবস্থানসহ অন্যান্য জিনিস তৈরিতে নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে বনভূমির পরিমাণ কমে গেছে।
৫. খনিজসম্পদ : কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক সম্পদ, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি খনিজসম্পদ অধিক হারে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে এগুলো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: বাড়তি জনসংখ্যার জন্য খাদ্যের চাহিদা পূরণে কী ধরনের প্রভাব পড়ে? ৫টি বাক্যে লেখ।
উত্তর: বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল ফলাতে হয়, সেই সঙ্গে অধিক পরিমাণে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। ফলে একদিকে যেমন জমির উর্বরতা হ্রাস পায় অন্যদিকে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদী বা জলাশয়ে পড়ে মাছ ও জলজপ্রাণি মারা যায়। ফলে জীববৈচিত্র্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তা ছাড়া জমিতে অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে বায়ুমন্ডলে বায়ু উপাদানের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে বায়ুদূষণ ঘটে।
প্রশ্ন: জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে কেন তা ৫টি বাক্যে লেখ।
উত্তর: জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অধিকসংখ্যক লোকের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ইত্যাদির চাহিদা পূরণের জন্য বনজঙ্গল, গাছপালা কাটতে হচ্ছে। এতে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে বন্যপ্রাণীর প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিকূল পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রাণী টিকতে না পেরে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে। তা ছাড়া অধিক জনসংখ্যার জন্য অধিক ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনে কৃষক জমিতে অধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে। এসব সার ও কীটনাশক বৃষ্টির পানির সঙ্গে জলাশয়ে পড়ে জলজপ্রাণি ও মাছ ধ্বংস হচ্ছে, এসব কারণে ধীরে ধীরে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে।