ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পের উলেস্নখ করে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার এসব শিল্পের অবদান অপরিসীম বলা হয়েছে। বস্তুত আমরা এখনও শিল্পে তেমন উন্নত নই তবে অগ্রগতি আশার সঞ্চার করে। উদ্দীপকের এ ইঙ্গিতে সহজেই বোঝা যায় এবং বাস্তবতাও এই যে উন্নত দেশগুলো শিল্পে উন্নত বলেই তাদের জীবনযাত্রার মান উচ্চ। মূলত উন্নত দেশে মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প গড়ে ওঠায় তাদের জীবনযাত্রার মান অনুন্নত দেশের তুলনায় উন্নত। এসব শিল্প স্থাপনের ফলে উন্নত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে, বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় এবং হাজার হাজার বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। এসব শিল্প ক্ষুদ্র শিল্পে উৎপাদিত পণ্যেরও উপযোগিতা বৃদ্ধি করে। তারা উৎপাদিত পণ্যের উদ্বৃত্তাংশ অনুন্নত দেশে প্রেরণ করে ওই বস্তুর উপযোগিতা বাড়িয়ে তোলে এবং বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে। উন্নত দেশের অধিকাংশ লোক কারখানার শ্রমিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, নার্স, ব্যবসা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, রাজনীতি, গবেষণা ও জনসেবায় নিয়োজিত থাকে। সুতরাং মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের কারণে উন্নত বিশ্বের জীবনযাত্রার মান অনুন্নত দেশের তুলনায় উন্নত।
প্রশ্ন : জনাব আরমান একজন শিল্পোদ্যক্তা। তিনি কৃষিনির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। বাংলাদেশের জন্য তিনি এ ধরনের শিল্পকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মূলধন, বিনিয়োগ নীতি ও আধুনিক প্রযুক্তির আনুকূল্যকে অবশ্য প্রয়োজনীয় মনে করেন। তিনি তার গ্রামে ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়ন ঘটানোতেও তৎপর। তার এ কাজটিও দেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তিনি বিবেচনা করেন।
ক. বস্ত্র শিল্প কোন ধরনের শিল্প?
খ. আমাদের দেশে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় কেন?
গ. জনাব আরমান কৃষিনির্ভর শিল্প বিকাশে কী কী অর্থনৈতিক নিয়ামকের ভূমিকা জরুরি মনে করেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. নিজ গ্রামে জনাব আরমানের তৎপরতার গুরুত্ব সম্পর্কে উদ্দীপকের বক্তব্যের যথার্থতা মূল্যায়ন কর।
উত্তর :
ক. বস্ত্র শিল্প বৃহৎ আকারের শিল্প।
খ. উষ্ণমন্ডলীয় জলবায়ুর কারণে আমাদের দেশে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। অধিক তাপমাত্রার কারণে উষ্ণমন্ডলীয় দেশগুলোতে কলকারখানা গড়ে তোলা কঠিন। কারণ কারখানার শ্রমিকরা অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
গ. উদ্দীপকের জনাব আরমান একজন শিল্পোদ্যক্তা হিসেবে কৃষিনির্ভর শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে মূলধন, বিনিয়োগ নীতি ও প্রযুক্তির আনুকূল্যকে অবশ্য প্রয়োজনীয় মনে করেন।
মূলধন : কৃষিনির্ভর শিল্প স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত মূলধন অপরিহার্য। শিল্প উদ্যোক্তাগণ যাতে সহজশর্তে ঋণ লাভে সক্ষম হয় সেজন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা থাকা দরকার।
বিনিয়োগ নীতি : সহায়ক বিনিয়োগ নীতি দ্বারা কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করা যায়। কোনো দেশের ঘোষিত বিনিয়োগ নীতি বিনিয়োগকারীদের যত অনুকূল হয়, শিল্প স্থাপনের সংখ্যাও তত বৃদ্ধি পায়।
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার : বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর শিল্প কারখানার জন্য উপযুক্ত ও উন্নত প্রযুক্তি একান্ত অপরিহার্য। এতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পাবে।
সুনির্দিষ্ট শিল্পনীতি ও শিল্পোন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় উপরিউক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করলে বাংলাদেশে কৃষিনির্ভর শিল্পোন্নয়নের পথ সুগম হবে। জনাব আরমান এমনটিই মনে করেন।
ঘ. নিজ গ্রামে ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়ন ঘটাতে জনাব আরমান তৎপর। বস্তুত্ত বাংলাদেশে কৃষি জমি সীমিত এবং বৃহৎ শিল্প অনুন্নত। তাই দেশের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য ক্ষুদ্র শিল্পের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। যেমন-
বেকার সমস্যা লাঘব : বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শ্রমশক্তি বেকার। এই অবস্থায় ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়ন ঘটলে শিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিতদের জন্য স্থায়ী কর্মসংস্থান হবে।
কৃষিতে চাপ হ্রাস : ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানো হলে কৃষির ওপর যে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ রয়েছে তা এসব শিল্পে স্থানান্তরিত হবে।
দেশীয় কাঁচামালের সদ্ব্যবহার : বাংলাদেশে পাট, চা, চামড়া, বাঁশ, বেত, কাঠ এবং অন্যান্য বহুবিধ কাঁচামাল পাওয়া যায়। ক্ষুদ্র শিল্পে এসবের সদ্ব্যবহার হলে দেশের উৎপাদন ও আয় বাড়বে।
মূলধনের সমস্যা লাঘব : বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ও সঞ্চয় বেশ কম। ফলে এদেশের বৃহৎ শিল্পে মূলধনের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই এখানে স্বল্প মূলধন নির্ভর ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়নই বেশি সুবিধাজনক।
সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন : বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্পগুলো শহরাঞ্চলে স্থাপিত হওয়ায় উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রধানত শহরকেন্দ্রিক। দেশের সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসার ঘটাতে হবে।
সুতরাং বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষিতে ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসারে জনাব আরমানের তৎপরতার গুরুত্ব অত্যন্ত ব্যাপক।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্থবছরে রপ্তানি আয় এবং আমদানি ব্যয়ের চিত্র নিচের সারণিতে দেখানো হলো :
মিলিয়ন ইউএস ডলার
অর্থ বছর রপ্তানি আয় আমদানি ব্যয়
২০০৯-১০ ১৬.২০ ৩৩.৬৬
২০১০-১১ ২২.৯২ ৩৫.৫২
২০১১-১২ ২৪.৩০ ৩৪.৮১
উৎস : ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংক।
ক. চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কী ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান?
খ. রপ্তানি ও আমদানি কোন ধরনের বাণিজ্য?
গ. সারণিতে প্রদত্ত তথ্য স্তম্ভ লেখচিত্রে রূপ দাও।
ঘ. বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের এরূপ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় বিশ্লেষণ কর।
উত্তর :
ক. চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অসম বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান।
খ. রপ্তানি ও আমদানি হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। স্বদেশের কোনো পণ্য যখন অন্য কোনো দেশে পাঠানো হয় তখন তাকে বলে রপ্তানি আর দেশের চাহিদা মিটানোর জন্য যখন অন্য দেশ থেকে স্বদেশে কোনো পণ্য সামগ্রী আনা হয় তখন তাকে বলে আমদানি। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের পণ্যের এরূপ আদান-প্রদানকে বলা হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়