টেলিস্কোপ
টেলিস্কোপ একটি অপটিক্যাল যন্ত্র, যা লেন্স বা বাঁকানো আয়না। লেন্স ব্যবহার করে বৈদু্যতিক চৌম্বকীয় বিকিরণের প্রতিবিম্ব দ্বারা দূরবর্তী বস্তুগুলো পর্যবেক্ষণ করতে এটি ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে দূরবর্তী বস্তুগুলোকে প্রশস্ত করে তোলা এর প্রধান কাজ। টেলিস্কোপ শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ টেলি 'দূর' এবং স্কোপেইন 'দেখতে' থেকে এসেছে। টেলিস্কোপের মূল অর্থ 'দূরদর্শন'।
দূরবীক্ষণ যন্ত্র তথা দুরবিন (টেলিস্কোপ) এমন একটি যন্ত্র, যা দূরবর্তী বস্তু থেকে নির্গত বিকিরণ সংগ্রহ, পরিমাপ এবং বিশ্লেষণ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। সাধারণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করা হয় লেন্স এবং দর্পণের সাহায্যে। এ ধরনের দুরবিনের সাহায্যে দূরের বস্তু আরও উজ্জ্বলভাবে বা
অস্পষ্ট বস্তু আরও স্পষ্ট করে দেখা যায়। আবার বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে ব্যবহৃত দূরবীক্ষণ যন্ত্র বলতে এমন কৌশল বোঝায় যার সাহায্যে সীমিত দিক থেকে আসা তড়িৎ চুম্বক বিকিরণ বা কণা-বিকিরণ হিসেবে আসা বিকিরণ সংগ্রহ করা যায়।
প্রতিচ্ছবি দুরবিন (ৎবভষবপঃরহম :বষবংপড়ঢ়ব), যা আলোক সংগ্রহ ও ফোকাস করতে আয়না ব্যবহার করে, প্রথম প্রতিবিম্বিত দুরবিনটির কয়েক দশকের মধ্যে আবিষ্কার হয়েছিল। বিশ শতকে, ১৯৩০-এর দশকে রেডিও টেলিস্কোপ এবং ১৯৬০-এর দশকে ইনফ্রারেড টেলিস্কোপসহ অনেক নতুন ধরনের টেলিস্কোপ আবিষ্কার করা হয়েছিল।
ইতিহাস
প্রথম দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি তৈরি করেছিলেন হ্যান্স লিপারশে, ১৬০৮ সালে। ১৬০৯ সালে দূরবর্তী তারা পর্যবেক্ষণের জন্য গ্যালিলিও গ্যালিলি একটি দুরবিন তৈরি করেন। তিনি এই যন্ত্র তৈরির ধারণা লাভ করেছিলেন এক চশমা নির্মাতার কাছ থেকে। ওই চশমা নির্মাতা একদিন লক্ষ্য করেন,
তার দোকানে বসানো স্থির লেন্স পদ্ধতির মধ্য দিয়ে দেখলে দূরের বাতাসের দিক নির্ধারক যন্ত্রটি বিবর্ধিত দেখা যায়। গ্যালিলি তার দুরবিনের মাধ্যমে বৃহস্পতির উপগ্রহ এবং শনির বলয় পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ১৬১১ সালে ইয়োহানেস কেপলার একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র নির্মাণ করেন যা
অনেকটা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মতো ছিল। তখন পর্যন্ত প্রতিসরণ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের যুগ চলছিল। ১৭৩৩ সালে জেমস গ্রেগরিএকটি অ্যাক্রোমেটিক ডাবলেট অবজেক্টিভ তৈরি করেন যার মাধ্যমে প্রতিসরণ দুরবিনের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্র উদ্ভাবন করেন জেমস গ্রেগরি। আইজাক নিউটনও একটি প্রতিফলন দুরবিন তৈরি করেছিলেন। তার মতে,প্রতিসরণ দূরবীক্ষণ যন্ত্রে যেখানে অবজেক্টিভের স্থানে লেন্স ব্যবহার করা
হয় সেখানেই দর্পণ ব্যবহার করা সম্ভব; কারণ দর্পণে ঠিক একইভাবে সব বর্ণের আলো প্রতিফলিত হয়। বড় আকারের দূরবীক্ষণের অবজেক্টিভের স্থানে ব্যবহৃত দর্পণগুলো পরাবৃত্তীয় আকারের হয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পালমার মানমন্দিরে স্থাপিত প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের অবজেক্টিভে ব্যবহৃত দর্পণের ব্যাস হলো ৫০০ সেন্টিমিটার।
প্রকারভেদ
১. এক্স-রে টেলিস্কোপ : অতিবেগুনি আলোর চেয়ে সংক্ষিপ্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যব্যবহার করে।
২. আল্ট্রাভায়োলেট টেলিস্কোপ : দৃশ্যমান আলোর চেয়ে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে।
৩. অপটিক্যাল টেলিস্কোপ : দৃশ্যমান আলো ব্যবহার করে।
৪. ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ : দৃশ্যমান আলোর চেয়ে দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যব্যবহার করে।
৫. সাবমিলিমেট্রো টেলিস্কোপ : মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলো ব্যবহার করে যা ইনফ্রারেড আলোর চেয়ে দীর্ঘ।
৬. রেডিও টেলিস্কোপ : যা আরও দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে।
এ ছাড়া আরও দুই ধরনের টেলিস্কোপ রয়েছে। সেগুলো হলো:
একনলা দুরবিন : মহাকাশ দেখার জন্য বেশি ব্যবহার হয়।
বাইনোকুলার বা দো-নলা দুরবিন : ভূমিতে ব্যবহার্য দুই চোখে লাগানোর দু-নলা ছোট টেলিস্কোপ। (বাইনোকুলার)- প্রতিরক্ষা বাহিনী, পশুপাখি পর্যবেক্ষণে ব্যবহার হয়। গোয়েন্দা বিভাগেও ব্যবহার করা হয়।