শেষ হয়ে গেল আরও একটি কর্মচঞ্চল বছর। আজকের দিনের মধ্য দিয়েই ইতি টানবে ২০২১ সাল। আগামীকালই আসবে নতুন ভোর, হাসবে নতুন সূর্য। কি পেলাম, কি হারালাম কিংবা প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তির খাতা কতটুকু ভারী না হালকা- বছরের একেবারে শেষপ্রান্তে এসে এরকম অসংখ্য হিসাব-নিকাশ চলছে অনেকের মনে। শোবিজের বাসিন্দারা কষছেন নানা অঙ্ক। কিন্তু এবারও যেন হিসাব মিলছে না। সব হিসাব এলোমেলো করে দিয়েছে করোনার ভয়াল থাবা। জনজীবনের মতো স্থবির করে দিয়েছে সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিটি শাখা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিনোদনের বড় মাধ্যম চলচ্চিত্র। বছরজুরেই হতাশা বিরাজ করেছে চলচ্চিত্রশিল্পে। চলচ্চিত্রের দুই কিংবদন্তি এটিএম শামসুজ্জামান ও সারাহ বেগম কবরীর মৃতু্যর শোকের পাশাপাশি সারা বছরই ছিল হাহাকারে ভরা। সিনেমা মুক্তির ক্ষেত্রেও একই দশা। গত বারের তুলনায় এবার সিনেমা মুক্তির সংখ্যা বাড়লেও লাভের মুখ দেখেনি কোনোটিই। দুয়েকটি সিনেমা আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রশংসিত হলেও সবগুলোই মুনাফা ফেরত আনতে ব্যর্থ হয়েছে। দর্শক ও সিনেমা খরায়ই কেটে গেছে চলচ্চিত্রের ২০২১। তবে সিনেমা মুক্তির দিক থেকে গত বছরের চেয়ে চলতি বছরের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। শুক্রবার দিয়ে শুরু হয়ে শুক্রবারেই শেষ হচ্ছে চলতি বছর। প্রথম দিন এবং আজ শেষ দিন মিলিয়ে সর্বমোট ৩২টি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে এই বছরে। যার মধ্যে আবার দুটি সিনেমা আমদানি করা। কিন্তু গল্প, লোকেশন, গান ও নির্মাণশৈলীতে ভিন্নতার ছোঁয়া থাকলেও কোনো সিনেমাই যেমন আলো ছড়াতে পারেনি, তেমনি দর্শককে সিনেমা হলেও টেনে আনতে পারেনি। হাতে গোনা দুয়েকটি সিনেমা সমালোচক ও সুধীমহলে প্রশংসিত হয়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির তালিকা অনুযায়ী ২০২১ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার নাম ও মুক্তির তারিখ। কেন সন্ত্রাসী (১ জানুয়ারি), রংবাজি : দ্য লাফাঙ্গা (৫ ফেব্রম্নয়ারি), পাগলের মতো ভালোবাসি (১৯ ফেব্রম্নয়ারি), তুমি আছো তুমি নেই (১২ মার্চ), গন্তব্য (১৯ মার্চ), অলাতচক্র (১৯ মার্চ), স্ফুলিঙ্গ (২৬ মার্চ), প্রিয় কমলা (২৬ মার্চ), টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই (২ এপ্রিল), যৈবতী কন্যার মন (২ এপ্রিল), সৌভাগ্য (১৩ মে), নবাব এলএলবি (২৫ জুন), কসাই (১৬ জুলাই), আগস্ট ১৯৭৫ (২২ আগস্ট), নারীর শক্তি (১০ সেপ্টেম্বর), চোখ (১ অক্টোবর), মুজিব আমার পিতা (১ অক্টোবর), পদ্মাপুরাণ (৮ অক্টোবর), চন্দ্রাবতী কথা (১৫ অক্টোবর), ঢাকা ড্রিম (২২ অক্টোবর), এ দেশ তোমার আমার (৫ নভেম্বর), রেহানা মরিয়ম নূর (১২ নভেম্বর), হৃদয়ের আঙ্গিনায় (১৯ নভেম্বর), নোনা জলের কাব্য (২৬ নভেম্বর), মিশন এক্সট্রিম (৩ ডিসেম্বর), লাল মোরগের ঝুঁটি (১০ ডিসেম্বর), কালবেলা (১০ ডিসেম্বর), মৃধা বনাম মৃধা (২৪ ডিসেম্বর)। সর্বশেষ আজ ৩১ ডিসেম্বর বছরের শেষ দিন মুক্তি পাচ্ছে 'চিরঞ্জীব মুজিব' ও 'রাত জাগা ফুল'। এছাড়া সাফটা চুক্তির আওতায় আমদানিকৃত সিনেমা বাজী ও গোলন্দাজ মুক্তি পায় যথাক্রমে ১৫ অক্টোবর ও ১৯ নভেম্বর। ব্যবসাসফল না হলেও এসব সিনেমার মাধ্যমে অনেক নতুন নতুন মুখ যুক্ত হয়েছে। অনেক মেধাবী পরিচালককেও দেখা গেছে সিনেমা নির্মাণ করতে। তবে ছোট পর্দার বেশিরভাগ জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীদের আধিক্য ছিল চোখে পড়ার মতো। টিভি পর্দার বেশ কয়েকজন মডেল-অভিনয়শিল্পীরও অভিষেক হয়েছে নায়ক কিংবা নায়িকা হিসেবে। খুদে অভিনেত্রী প্রার্থনা ফারদিন দীঘির চিত্রনায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় এ বছর। ১২ মার্চ দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত 'তুমি আছো তুমি নেই' সিনেমার মধ্য দিয়ে নায়িকা হিসেবে পথচলা শুরু করেন চিত্রতারকা দম্পতি দোয়েল-সুব্রতর কন্যা দীঘি। যদিও সিনেমাটি মুক্তির আগেই পরিচালকের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন দীঘি। এছাড়া ২ এপ্রিল মুক্তি পায় তার 'টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই' নামে আরও একটি সিনেমা। বছরের শেষের দিকে এসে চিত্রনায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আরও কয়েকজন অভিনেত্রী। এর মধ্যে প্রথমেই আসে 'মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ' খ্যাত জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। চলতি মাসের ৩ তারিখে মুক্তি পাওয়া 'মিশন এক্সট্রিম' সিনেমার মাধ্যমে চিত্রনায়িকা বনে যান এই নবাগত। আবার আজ বছরের শেষদিনে মুক্তি পাচ্ছে তার আরেকটি সিনেমা। 'রাত জাগা ফুল' নামের এ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মীর সাব্বির। এ সিনেমার মাধ্যমে মীর সাব্বিরেরও অভিষেক ঘটে চিত্রপরিচালক হিসেবে। আবার গত ২৪ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া 'মৃধা বনাম মৃধা'র মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ছোটপর্দার মডেল ও অভিনেত্রী নোভা ফিরোজের। পাশাপাশি প্রয়াত নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুলের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা 'কালবেলা' সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন টিভি অভিনেত্রী তাহমিনা অথৈ।