সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাংস্কৃতিক উৎসবে সরগরম রাজধানী

বিনোদন রিপোর্ট
  ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
জেনেসিস থিয়েটারের 'দামাল ছেলে নজরুল' নাটকের দৃশ্য

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক দলগুলো চলমান নানা কর্মসূচির প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় এর প্রভাব পড়েছে বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ। বিশেষ করে বছরের শেষ দিকে শীতকালীন নানা সাংস্কৃতিক উৎসবে থিয়েটার পাড়াখ্যাত শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তন এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পাদদেশে একাধিক উৎসবে সরগরম থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে এবার উৎসবের সংখ্যা নেহায়েত কমেছে। তারপরেও ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এর মধ্যে একাধিক উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার পাদদেশে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের পথনাট্য উৎসব, শিল্পকলা একাডেমির 'উন্নয়নের জন্য নাটক', 'গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসব' এবং 'শিশু কিশোর যুব নাট্যোৎসব' প্রভৃতি। এর বাইরে রাজনীতির নামে নাশকতা বিরোধী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।

উন্নয়নের জন্য নাটক

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে রাজধানীর বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে 'উন্নয়নের জন্য নাটক' সেস্নাগানে ধারাবাহিকভাবে 'সিদ্ধান্ত' নামে বিশেষ প্রযোজনা মঞ্চায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। এই কর্মসূচির আওতায় গত ১৮ নভেম্বর থেকে ৮ দিন ধরে ওই নাটকের প্রদর্শনী হয়। গতকাল শনিবার এই আয়োজনের সমাপনী হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার রাজধানীর ধুপখোলায় নাটকটি মঞ্চায়নের পর যা দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলে। এছাড়া ২৩ নভেম্বর শেখ রাসেল মঞ্চ- বিকাল ৩টায়, শুক্রবার সকাল ১০টায় উত্তরা দিয়াবাড়ী রেলস্টেশন এলাকা, উত্তরায় বঙ্গবন্ধু মঞ্চে বিকাল ৩টায় এবং শনিবার সকাল ১০টায়-মানিকনগর মডেল স্কুল মিলনায়তন এবং বিকাল ৩টায় পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্কে 'সিদ্ধান্ত' নাটকের মঞ্চায়নে দর্শকের প্রশংসা পায়। ৩০ মিনিট ব্যাপ্তির নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন আহসান খান। সহকারী নির্দেশনা নাভেদ রহমান। নাট্য প্রযোজনার সমন্বয়ক আলি আহমেদ মুকুল। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদের কর্মীরা। এর আগে গত ১৮ নভেম্বর জাতীয় নাট্যশালা প্রাঙ্গণে নাটকটি উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত নাটকের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। তিনি জানান, সংস্কৃতি চর্চা ও এর বার্তা প্রদানের মাধ্যমে সচেতনতা ও গণজাগরণ তৈরির লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

'সিদ্ধান্ত' নাটকটি একজন দুর্বৃত্ত, দুষ্কৃতকারী এবং তার আবর্তনে আপামর মানুষের জীবন চরিতের গল্প। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তি ও মারণাস্ত্র ব্যবহারের ষড়যন্ত্র চলছে। এরই আবর্তনে নাটকটিতে ঘটনাক্রমে উঠে এসেছে মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী ও নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী মানুষের ভালো মন্দ নিয়ে জীবনযাপন। উঠে এসেছে সংগ্রাম, নিরাশা, অনেক অসঙ্গতির মধ্যেও জীবনে বাঁচার আশার আলোর ছটা। নাটকের প্রতিটি চরিত্র যেন বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি গোষ্ঠীর ১৭ কোটি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। নাটকটি কী করে যবনিকা টানবে? বিস্ময়ে নাকি বিভীষিকায়? কোন দিকে এগিয়ে যাবে নাটক, বা আমাদের দেশ? সিদ্ধান্ত নিতে দর্শকের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়। সামাজিক সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে সকল অসংগতি দূরীভূত করার জন্য সরকারের উদ্যোগ, অখ্যাত অভিনেতা ও দর্শকদের প্রশ্ন ও পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে এর উত্তর খোঁজার চেষ্টার নাটক 'সিদ্ধান্ত'।

অগ্নিসন্ত্রাস, মারামারি, ডিজিটাল নানা পস্ন্যাটফর্ম ব্যবহার করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অপপ্রচার ও বোমাবাজির নানা ঘটনার প্রেক্ষিত ধরেই উঠে এসেছে এক পরিবারের বিপথে যাওয়া সন্তানের গল্প। যে প্রাণহানি ঘটাতে একটি রেলস্টেশনে হামলার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। পরে নাটকের গল্পের শেষে দর্শকদের ভাবনা নিয়ে নতুন করে সেখান থেকেই শুরু হয় পরের গল্প। এভাবেই দর্শক, গল্পকার ও অভিনেতাদের পারস্পরিক চিন্তার আদান প্রদানের মাধ্যমে উঠে আসে বাঁচার গল্প, এগিয়ে যাওয়া ও উন্নয়নের গল্প।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পথনাট্য উৎসব

প্রতিবছরের মতো এ বছরও ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়মিত শীতকালীন মৌসুমি পথনাটক মঞ্চায়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ। সংগঠনটির উদ্যোগে 'মুক্তিযুদ্ধের স্বদেশ গড়ো' স্স্নোগানে এই আয়োজনটির উদ্বোধন হয় শুক্রবার। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ গিয়াস জানান গত শুক্রবার বিকালে পথনাট্য উৎসবের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট নাট্যকার নির্দেশক অভিনেতা নাট্যজন মামুনুর রশীদ। বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি লেখক-গবেষক গোলাম কুদ্দুছ। আলোচনা করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী, বাংলাদেশ গ্রম্নপ থিয়েটার ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক চন্দন রেজা, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সহ-সভাপতি ডক্টর রতন সিদ্দিকী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ গিয়াস। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রযোজনা 'ঠিকানা' ও নাটনন্দনের 'ধুপ আতরের বঙ্গপালা' পথনাটকের প্রদর্শনী হয়। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক আকতার উজ জামান কিরণ। তিনি জানান, প্রতি শুক্রবার আয়োজিত এই উৎসব আগামী বছরের মার্চ মাসে শেষ হবে।

গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসব

আগামী ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে ৪ দিনের গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসব। উৎসবে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের বিভিন্ন ধারা উপস্থাপনা করবেন রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলার শিল্পীরা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের আয়োজনে প্রতিষ্ঠানের জাতীয় নাট্যশালার একাধিক মিলনায়তনে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। উৎসব শেষ হবে আগামী ২০ ডিসেম্বর।

শিশু-কিশোর-যুব নাট্যোৎসব

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের আয়োজনে আগামী ২১ ডিসেম্বর থেকে এই উৎসব শুরু হবে। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনের তিনটি হলে একযোগে এই উৎসব চলবে। উৎসবে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের বেশ কিছু নাট্যদল নাটক মঞ্চায়ন করবে। আগামী ২৭ ডিসেম্বর এই উৎসব শেষ হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে