মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

এখনো সমান দাপুটে তারিক আনাম খান

আমি তো নিজেকে সবসময় ভাঙতে চাই। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। সবসময় অপেক্ষায় থাকি ভিন্নধর্মী নাটক বা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য। আমার স্বপ্নকে পর্দায় তুলে ধরার দায়িত্ব হচ্ছে পরিচালক ভাইদের। ভিন্নধর্মী গল্প, চরিত্রের গভীরতা আমাকে সুযোগ করে দেওয়ার। শিল্পীরা তো আঠালো মাটি। তাদের ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেওয়ার রূপকার হলেন পরিচালক ভাইরা।
মাতিয়ার রাফায়েল
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

সত্তর ও আশি দশকে ছোটপর্দার অভিনয়কে যারা অত্যন্ত প্রতাপের সঙ্গে শাসন করেছেন তাদের অন্যতম তারিক আনাম খান। ছয় ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার এ অভিনেতা শুধু অভিনয় শিল্পীই নন, অভিনয়ের এক ইনস্টিটিউশনও। নায়ক না হয়েও বহুমাত্রিক চরিত্রাভিনেতা হিসেবে একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী 'হিরো'ই হয়ে আছেন তিনি। অভিনয়ের সবখানেই রয়েছে সদর্প বিচরণ তার। দুইবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। একবার খলচরিত্র বিভাগে আরেকবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে। এখনো নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন তিনি। বলতে গেলে তার সময়ের মধ্যে একমাত্র তিনিই ধারাবাহিকভাবে নিয়মিত অভিনয় করে চলেছেন মঞ্চ, ছোটপর্দা, বড়পর্দা এবং ওটিটি পস্ন্যাটফর্মে।

এবার ২০২৪ সালে এসে বছরের শুরুতেই আসছে কাজল আরেফিন অমি পরিচালিত নতুন ওয়েব সিরিজ 'অসময়'। এই কন্টেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান। মুক্তি পাচ্ছে দেশীয় ওটিটি পস্ন্যাটফর্ম বঙ্গতে। এর আগে গেল বছরের আগস্টে চরকিতে মুক্তি পেয়েছে অনম বিশ্বাসের 'ভাইরাস'।

তারিক আনামের সমসাময়িক অনেকেই যারা এখনো ওটিটি পস্ন্যাটফর্মকে সহজে মেনে নিতে পারছেন না সেখানে তারিক আনাম খান মঞ্চ, ছোট ও বড়পর্দার পাশাপাশি ওটিটি কন্টেন্টেও সমান দাপটে অভিনয় করে যাচ্ছেন।

ট্রিমড করা 'ট্রেড মার্ক' শ্মশ্রম্নমন্ডিত চেহারাও তাকে দিয়েছে অনেক জনপ্রিয়তা। থিয়েটার থেকে শুরু করে ছোটপর্দা, বড়পর্দা, ওটিটি কোথায় তার দাপুটে বিচরণ নেই! সবখানেই নিজের বলিষ্ঠ অভিনয়ের পরিচয় দিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে আসছেন বছরের পর বছর ধরে দর্শকদের সামনে। কয়টি মঞ্চ নাটকেও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হওয়ায় যিনি স্বপ্ন দেখতেন পাইলট বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, হয়ে গেলেন সেখানে একজন পাইলট (সম্মুখ সারির) অভিনেতা! ব্যক্তিগতভাবে তার আরও একটি পরিচয় আছে একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা তিনি। একজন লেখক হিসেবেও পরিচয় আছে তার। মঞ্চের জন্য নিয়মিত নাটক লেখেন।

তারিক আনাম সেই মানের অভিনেতা যিনি কোথাও অভিনয়ের আগে দেখে নেন সেখানে যথেষ্ট অভিনয় করার মতো জায়গা আছে কিনা। অপেক্ষায় থাকেন সবসময় বড় চরিত্রের জন্য। যদিও 'রানীকুঠির বাকি ইতিহাস' নামের একটি সিনেমায় 'অতিথি' চরিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। তারপরেও যেখানে অভিনয় দিয়ে নিজেকে মেলে ধরার জায়গা না থাকে সেখানে তাকে দিয়ে অভিনয় করানো যায় না। যে কারণে একজন চৌকস অভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও অভিনয়ের সংখ্যা তার সময়ের অভিনেতাদের তুলনায় কম। তবে তিনি যে মানের অভিনেতা সে মানের হিসেবে এদেশে নাটক সিনেমা নেহাতই কম হয়েছে এটাও অস্বীকার করা যাবে না। সেজন্য এ গুণী অভিনেতাও অনেকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, 'মোটাদাগে এটাই বলতে পারি, আমাদের সিনেমা অনেক হলেও ভালো সিনেমার সংখ্যা বাড়েনি। সিনেমা যদি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক না হয়, সিনেমায় যদি মানুষের গল্প না বলতে পারি, তাহলে এ চলচ্চিত্র কোনো দিনও দাঁড়াবে না। দর্শক একঘেয়ে এক নায়কের ছবি কেন দেখবেন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ভালো কনটেন্ট জরুরি। গল্প, নির্মাণ ঠিকঠাক না হলে আমরা টিকতে পারব না।'

কিন্তু সে রকম ভালো সিনেমা কম হচ্ছে বলে অভিনয়েও তিনি অনিয়মিত এমন নয়। সমসাময়িক অনেকেই যেখানে হালে অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন সেখানে তিনি এখনো আগের মতোই সমান সক্রিয়। সেই শুরু থেকে এ পর্যন্ত যত কাজ করেছেন তার বেশির ভাগই পারিবারিক সম্পর্কের দ্বান্দ্বিক গল্পের ওপর। যেখানে থাকে নানা নাটকীয়তা ও সম্পর্কের সমীকরণ। এরকম দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের অভিনয় দেখে মনে হয় চরিত্রগুলো যেন ঠিক তারিক আনামের জন্যই তৈরি হয়েছে। এভাবে চরিত্র দেখে-শুনে ও বেছে বেছে অভিনয় করেও যে নিয়মিত থাকা যায় এ দেশের অভিনয়ের জগতে তিনি হচ্ছেন তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এই যে এখনো সমানতালে অভিনয়ে বিচরণ করছেন এজন্য এত উজ্জীবনী শক্তি কোথা থেকে পান এমন প্রশ্নে তারিক আনাম খান বলেন, 'আমি তো নিজেকে সবসময় ভাঙতে চাই। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। অপেক্ষায় থাকি ভিন্নধর্মী নাটক বা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য। আমার স্বপ্নকে পর্দায় তুলে ধরার দায়িত্ব হচ্ছে পরিচালক ভাইদের। ভিন্নধর্মী গল্প, চরিত্রের গভীরতা আমাকে সুযোগ করে দেওয়ার। শিল্পীরা তো আঠালো মাটি। তাদের ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেওয়ার রূপকার হলেন পরিচালক ভাইরা।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে