শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
শুভ জন্মদিন

নন্দিত অভিনেত্রী চম্পা

বিনোদন রিপোর্ট
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
নন্দিত অভিনেত্রী চম্পা
নন্দিত অভিনেত্রী চম্পা

বড় দুই বোন তখন চলচ্চিত্রে তুমুল জনপ্রিয়। চোখের সামনে দেখছেন বড় বড় সব তারকারা বাড়িতে আসেন যান। তার দুই বোনের বিরাট পরিচিতি। বাইরে বের হলেই মানুষের ভিড় জমে যাচ্ছে তাদের ঘিরে। একটা অন্য জীবন। একটা অন্যরকম আকর্ষণ। সেই আকর্ষণে তিনিও ভাসলেন। ফ্যাশনেবল এবং স্টাইলিশ ছোট বোনটিও বড় দুই বোনের পথ ধরে শোবিজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন। তবে শুরুতেই চলচ্চিত্রে নয়, ছোটপর্দায় যাত্রা করলেন। মডেল হিসেবে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন। এরপর কিছু নাটকেও কাজ করা হলো। ইন্ডাস্ট্রিতে তখন তার অল্প পরিচিতি। তবে নিজের নামকে তখনো পরিচিত করে তুলতে পারেননি। সবাই সুপারস্টার সুচন্দা-ববিতার বোন বলেই চিনতেন। সেই তিনি ১৯৮৫ সালের 'তিন কন্যা' ছবি দিয়ে সবার কাছে চম্পা নামে হাজির হলেন। প্রথম ছবিতেই জানান দিলেন অভিনয়ের পথে অনেক দূর তার গন্তব্য। হলোও তাই। আশির মাঝামাঝিতে সিনেমায় নাম লেখানো চম্পা আজও অভিনয়কে আঁকড়ে ধরে আছেন। তবে এখন আর আগের মতো নিয়মিত অভিনয় করেন না তিনি। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ার তাকে দিয়েছে সুপারস্টারের রঙিন জীবন, আন্তর্জাতিক সুখ্যাতি, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ নানারকম স্বীকৃতি। আর কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা তো আছেই। নন্দিত অভিনেত্রী চম্পার আজ জন্মদিন। শুভ জন্মদিন অভিনেত্রী চম্পার। ১৯৬৫ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি যশোরে জন্মগ্রহণ করেন।

চম্পা প্রথম সিনেমা দিয়েই সবার নজর কাড়েন। এরপর ধীরে ধীরে দেশজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। কাজ করতে থাকেন একের পর এক সফল সিনেমায়। লম্বা ক্যারিয়ারে চম্পা শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে- 'তিন কন্যা', 'ভেজা চোখ', 'কাসেম মালার প্রেম', 'পদ্মা মেঘনা যমুনা', 'টপ রংবাজ', 'শঙ্খনীল কারাগার', 'পদ্মা নদীর মাঝি', 'প্রেম দিওয়ানা', 'ত্যাগ', 'ডিসকো ড্যান্সার', 'দেশপ্রেমিক', 'অন্য জীবন', 'টার্গেট', 'খলনায়ক', 'লাল দরজা', 'চন্দ্রকথা', 'শাস্তি', 'চন্দ্রগ্রহণ', 'মনের মানুষ' ও 'ইনস্পেক্টর নটিকে'।

1

১৯৮৫ সাল থেকে সিনেমা জীবন শুরু করা চম্পা জনপ্রিয় বহু নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন। তবে, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও মান্নার সঙ্গে তার জুটি দর্শকপ্রিয় ছিল। বিশেষ করে কাঞ্চনের বিপরীতে চম্পা মানেই একটা সময় হিট সিনেমার আভাস মিলতো। ওপার বাংলাতেও অনেক প্রশংসিত ছিল অভিনেত্রী চম্পা। কলকাতার খ্যাতিমান নির্মাতা গৌতম ঘোষের 'পদ্মা নদীর মাঝি' ও 'মনের মানুষ' ছবিতে অভিনয় চম্পাকে একটি আলাদা স্থানে নিয়ে যায়। তার খ্যাতির সীমানা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পদ্মা নদীর মাঝি ছবিতে মালা চরিত্রে অসামান্য অভিনয়ের সূত্রে চম্পা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র শিল্পেও। সত্যজিৎ তনয় সন্দীপ রায় 'টার্গেট' ছবিতে চম্পাকে নির্বাচন করেন। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তও 'লাল দরজা' ছবিতে অভিনয়ের জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানান। ছবির পরিচালক বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত এবং প্রযোজক হচ্ছেন বাপ্পি লাহড়ী। বুদ্ধদেব দিলিস্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে 'টার্গেট' ছবিটি দেখার পর তাকে 'লাল দরজা' ছবিতে অভিনয়ের জন্য পছন্দ করেন। মূলত 'পদ্মা নদীর মাঝি' তার ভিত্তি ভূমি। কেননা, ওখান থেকে 'টার্গেট', তারপর 'লাল দরজা' এবং তারপর গৌতম ঘোষের 'আবার আরণ্যে' ছবিতে তিনি অভিনয়ের সুযোগ পান।

চম্পা ছোট পর্দাতেও অভিনয় করেছেন। ১৯৮১ সালে বিটিভিতে আবদুলস্নাহ আল মামুন রচিত ও প্রযোজিত 'ডুব সাঁতার' নামে একটি নাটকের মধ্য দিয়ে তার অভিনয় জীবনের শুরু। এছাড়া, তিনি অভিনয় করেন 'শাহাজাদির কালো নেকাব', 'আকাশ বাড়িয়ে দাও', 'খোলা দরজা', 'একটি যুদ্ধ অন্য একটি মেয়ে', 'অপয়া', 'এখানে নোঙর' ইত্যাদি নাটকে। এসব নাটকে তিনি ভীষণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বর্তমান সময় পর্যন্ত চম্পা যতগুলো নাটকে অভিনয় করেছেন তার মধ্যে চম্পার সবচেয়ে প্রিয় নাটক হচ্ছে 'এখানে নোঙর'।

ফ্যাশনের প্রতিও চম্পার সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা। সত্তর বা আশির দশকে বর্তমান সময়ের মতো এত ফ্যাশন ডিজাইনার ছিল না, আবার ভিসিআর ভিসিপিও ছিল না যা দেখে তিনি শিখতে পারেন। টেলিভিশনে দু'একটা ইংরেজি ছবি দেখার পর তার ভেতরে ফ্যাশনের প্রতি দুর্বলতা জন্মায়। এক্ষেত্রে ম্যাগাজিনগুলোও সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। পুরো বিষয়টি আসলে তার নিজের মন থেকেই এসেছে। নতুন সব ফ্যাশন নিয়ে সব সময় তিনি ভাবতেন। এক্ষেত্রে সফলতাও পেয়েছেন। ফ্যাশনের ক্ষেত্রে তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও চম্পা মডেল হয়েছেন। কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্র সুপারহিটও হয়েছে।

অভিনয়ের স্বীকৃতিসরূপ চম্পা-সেরা অভিনেত্রী হিসেবে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এগুলো হলো- গৌতম ঘোষের 'পদ্মা নদীর মাঝি', শাহজাহান চৌধুরীর 'উত্তরের খেপ' ও শেখ নেয়ামত আলীর 'অন্যজীবন'। আর সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে দুবার চাষী নজরুলের 'শাস্তি' এবং মুরাদ পারভেজের 'চন্দ্রগ্রহণ' ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়াও 'জিয়া স্বর্ণপদক' ও 'শেরেবাংলা পদক' পেয়েছেন। 'পদ্মা নদীর মাঝি' ছবিতে অভিনয়ের দক্ষতার জন্য ভারত থেকে পদক পেয়েছেন। কলকাতার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসু তাকে পুরস্কৃত করেন। 'শঙ্খনীল কারাগার' ছবিতে অভিনয়ের জন্য তাসখন্দ ফ্লিম ফেস্টিভ্যাল থেকে পুরস্কার পেয়েছেন। তার অভিনীত 'লাল দরজা' ছবিটি অস্কারের নমিনেশন পেয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে