শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনেক দেশেই বিদু্যতের জন্য হাহাকার চলছে :প্রধানমন্ত্রী

'অনেক উন্নত দেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দেশকে যাতে সে পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, এ জন্য এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কোনো জলাধার যেন খালি না থাকে। যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, প্রতিষ্ঠানভিত্তিকও যেখানে যতটুকু খালি জায়গা, যে যা পারবেন কিছু উৎপাদন করবেন'
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৬ জুলাই ২০২২, ০০:০০

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বেই তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিদু্যৎ উৎপাদনের উপকরণগুলোর দাম অত্যধিক বেড়েছে। অনেক দেশেই এখন বিদু্যতের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে। অনেক উন্নত দেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে।'

মঙ্গলবার ঢাকা সেনানিবাসে পিজিআর সদর দপ্তরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'একদিকে করোনার একটা অভিঘাত, তার ওপরে এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ। যার ফলে আজকে সমগ্র বিশ্বেই যেমন তেলের দাম বেড়েছে, অনেক দেশেই এখন বিদু্যতের জন্য হাহাকার। বিদু্যৎ আমরা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সবাই পাচ্ছিল; কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিদু্যৎ উৎপাদনের উপকরণগুলোর দাম অত্যধিক বেড়ে গেছে। ডিজেল, তেল, এনএলজির দাম বেড়েছে। সবকিছুর দাম বেড়েছে। কয়লা এখন পাওয়া যায় না।'

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে আরও বলেন, 'পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশে যারা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, যাদের বিচারকার্য শুরু হয়েছিল, তাদেরই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো হয়। তাছাড়া জাতির পিতার হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বিচারের হাত থেকে মুক্তি

দেওয়া হয়। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করা হয়। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় থাকার কারণেই এই সেনাবাহিনীতে ১৯ বারের মতো কু্য হয় এবং বহু সেনা সদস্য, সৈনিক, অফিসার মৃতু্যবরণ করেন। এমন একটা সময় ছিল, যখন অফিসারদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হামলা করা হয়েছে। অনেকের স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে, পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। এ রকমও ঘটনা তখন ঘটতে থাকে একের পর এক। প্রতি রাতে বাংলাদেশে কারফিউ চলত। মানুষের কোনো অধিকারই ছিল না। মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারত না। এ রকম একটা পরিবেশ বাংলাদেশে ছিল।'

'২১ বছর পর আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের কথা উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'পঁচাত্তরে আমি ও আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম। ১৯৮১ সালে আমাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি। অনেকটা জোর করেই দেশে ফিরতে হয়েছিল। যেখানে খুনিদের রাজত্ব, যেখানে অপরাধীদের রাজত্ব; আমি জানতাম যেকোনো সময় তারা আমাকে মারতে পারে। আমি সেটা পরোয়া করিনি। মানুষের জন্য ফিরে আসি। আমার লক্ষ্য ছিল, একদিকে যেমন বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা, তেমনি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করা। আমি চেয়েছি আমার বাবা নিজের হাতে যে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী গড়ে গেছেন; সেগুলো যাতে আরও উন্নত হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'অনেক উন্নত দেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দেশকে যাতে সে পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, এ জন্য এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কোনো জলাধার যেন খালি না থাকে। যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, প্রতিষ্ঠানভিত্তিকও যেখানে যতটুকু খালি জায়গা, যে যা পারবেন কিছু উৎপাদন করবেন। উৎপাদন করে অন্তত নিজেদের খাদ্যটা নিজেরা জোগাড় করার চেষ্টা করা, যাতে বাজারের ওপর চাপ না পড়ে। উদ্বৃত্তটা বিক্রি করে যাতে লাভবান হতে পারেন, সেই ব্যবস্থাটা সবাইকে নিতে হবে।'

'ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পরিবহণের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আগের মতো জাহাজ চলাচল করতে পারছে না। শুধু আমাদের দেশে না, প্রত্যেকটা দেশেই এখন জিনিসের ঘাটতি। এই সমস্যাটা দেখা দিয়েছে। সেখানে আমরা যদি একটু সাশ্রয়ভাবে চলি, মিতব্যয়ী হই এবং নিজেরা নিজেদের সঞ্চয়টা বাড়াতে পারি সে চেষ্টা করা দরকার। অর্থাৎ প্রতিটি পরিবারই যেন সঞ্চয়মুখী হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে