বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
২০৪১ সালে দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না

রাজশাহীর জনসভায় বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বদরুল হাসান লিটন, রাজশাহী ও নজরুল ইলাম বাচ্চু, চারঘাট (রাজশাহী)
  ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
আপডেট  : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার রাজশাহী মহানগরীর মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় পৌঁছে নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান -ফোকাস বাংলা

আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের সঙ্গে থাকে, সেই দলের নেতাকর্মী কখনো পালায় না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'বিরোধী দল অনেক কথাই বলে। তারা আমাদের আবার নোটিশ দেয়। আবার বলে, আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না। আমি এই বিএনপি-জামায়াত জোট যারা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞেস করি, পালায় কে? আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, পিছু হটে না। আজকে যারা বলে, পালানোর সুযোগ পাবে না আওয়ামী লীগ। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আওয়ামী লীগ পালায় না। পালায় আপনাদের নেতারাই। আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে।'

রোববার বিকালে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বেলা ৩টার দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সারদা পুলিশ একাডেমি থেকে হেলিকপ্টারে করে নগরীর জেলখানা প্রশিক্ষণ মাঠে নেমে গাড়িতে করে সভামঞ্চে আসেন। তখন ময়দান ভর্তি জনতা হাততালি ও গগনবিদারি স্স্নোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে জনতার প্রতি শুভেচ্ছা জানান। মাদ্রাসা মাঠে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর জন্য করা এক হাজার ৩১৭ কোটি টাকার ২৬টি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া ৩৭৬ কোটি টাকার আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

৩২টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- রাজশাহী তথ্য কমপেস্নক্স ভবন নির্মাণকাজ, রাজশাহী আঞ্চলিক পিএসসি ভবন নির্মাণকাজ, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ তলাবিশিষ্ট অ্যাকাডেমি ভবন নির্মাণ, রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ষষ্ঠ থেকে দশম তলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত নির্মাণকাজ, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের হেড কোয়ার্টার নির্মাণ, রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ভবন উদ্বোধন, মোহনপুর উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন, রাজশাহী সরকারি শিশু হাসপাতালের নির্মাণকাজের উদ্বোধন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি উদ্বোধন।

এ ছাড়া শেখ রাসেল শিশুপার্ক, মোহনপুর রেলক্রসিং ফ্লাইওভার, নগরীর বন্ধগেট-সিটি বাইপাস পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ চারলেন সড়ক নির্মাণকাজ, নগরীর কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী সড়ক প্রশস্তকরণ ও সম্প্রসারণ কাজ, ভদ্রা রেলক্রসিং থেকে পারিজাত লেক হয়ে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চারলেন সড়ক উদ্বোধন, হাইটেক পার্ক থেকে ঢালুর মোড় পর্যন্ত কার্পেটিং রাস্তা নির্মাণ, পুঠিয়া-বাগমারা মহাসড়ক উন্নয়ন কাজ, রাজশাহী সমাজসেবা কমপেস্নক্স নির্মাণ, চারঘাট টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন,

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাল্টিপারপাস ভবন, রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিস, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের ছয় তলাবিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস, রাজশাহী সদর মুক্তিযোদ্ধা কমপেস্নক্স উদ্বোধন, বাগমারার ভবানীগঞ্জ-কেশরহাট সড়ক, পদ্মা নদীর ড্রেজিং প্রকল্প, রাজশাহী পিটিআইয়ের বহুমুখী অডিটরিয়াম নির্মাণ, চারঘাট ও বাঘায় পদ্মা নদীর বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্প।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ওই জিয়াউর রহমান বাধা দিয়েছিল আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি বাধা অতিক্রম করেই দেশে ফিরেছিলাম। বিরূপ পরিস্থিতিতেও আমি দেশে ফিরে এসেছিলাম শুধু দেশের মানুষের কথা ভেবে, দেশের মানুষের সেবা করার জন্য। আবার ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে তখনো আমি বিদেশে গিয়েছিলাম, আমার ছেলের বউ অসুস্থ ছিল। তার বাচ্চা হয়েছিল, অপারেশন হয়েছিল, তাকে দেখতে। আমাকে দেশে ফিরতে দেবে না। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস দেওয়া হয়েছিল। আমি বলেছি, আমি যাব। এই কেস আমি মোকাবিলা করব। আমি দেশে ফিরে এসেছি শুধু বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে।'

তিনি বলেন, 'দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা-তারেক। এমনকি খালেদা জিয়া তারেক-কোকোর মাধ্যমে যে টাকা পাচার করেছিল মানিলন্ডারিং করে। ৪০ কোটি টাকা আমরা বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি তাদের পাচার করা টাকা। এর জবাব কি তারেক দিতে পারবে? তারা নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কাকে নিয়ে? যে নাকি দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত, তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যে নাকি ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে স্ট্যাস্পে রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, পালিয়ে গিয়েছিল। সেই কথা কী আমাদের বিএনপি নেতাদের মনে নাই।'

রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভা উপলক্ষে তোরণ, পোস্টার, ব্যানার আর ফেস্টুনে সারা শহর ঢেকে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে রোববার সকাল থেকে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মিছিল-স্স্নোগানে মুখর হয়ে উঠেছিল জনসভাস্থল এবং আশপাশের এলাকা। নগরে সাজসাজ রব দেখা গেছে।

রোববার সকাল ৯টায় উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ (হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ)। দুপুর ২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের ৩ ঘণ্টা আগেই বেলা ১১টার মধ্যেই পুরো জনসভা মাঠ জনসাধারণ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঢলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল সভাস্থল।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে রাজশাহী বিভাগের সব জেলা থেকে এসেছেন কর্মী ও সমর্থকরা। ট্রেনে বা বাসে করে রাজশাহীর জনসভায় এসেছেন তারা। জনসভার জন্য রাজশাহীতে সাতটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করেছে। এসব ট্রেন রাজশাহী-নাটোর, রাজশাহী-জয়পুরহাট, রাজশাহী-সান্তাহার, রাজশাহী-ঢালারচর ও রাজশাহী-সিরাজগঞ্জ রুটে চলেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'এই সংগঠন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখনই ক্ষমতায় এসেছে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আজকে বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। ৪০ ভাগ যেখানে দারিদ্র্যসীমা, আমরা ২০ ভাগে নামিয়েছি।'

তিনি বলেন, 'এই রাজশাহীর অবস্থা কী ছিল আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন। ২০০১ সালের কথা চিন্তা করেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায়, প্রতিনিয়ত হত্যা-জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন; এই রাজশাহীতে মহিমা, রাজুফা...কিভাবে তাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে ওই বিএনপির ক্যাডার বাহিনী, জামায়াত জোট! একটা বাচ্চা মেয়েকে গ্যাং রেইপ করা হলো, তার বাবা-মা নৌকায় ভোট দিয়েছিল সেই কারণে।'

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, 'নৌকায় ভোট না দিলে দেশ স্বাধীন হতো না। দেশ স্বাধীন না হলে তাদের নেতা জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল পদে প্রমোশন পেত না। এটা তারা ভুলে যায়। আর দেশ স্বাধীন না হলে কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারত না খালেদা জিয়া, প্রধানমন্ত্রীও হতে পারত না। সেই নৌকার ওপর এত রাগ কেন!'

তিনি বলেন, 'নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে খাদ্যে নিরাপত্তা পেয়েছেন। ১ দিনে ১০০ সেতু, ১ দিনে ১০০ সড়ক কোনো সরকার করতে পেরেছে? আওয়ামী লীগ সরকার, নৌকা মার্কার সরকার।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বানানো হয়। আমি আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি এমন একটি দেশে ফিরে আসি, যেখানে আমার কোনো বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। জাতির পিতার খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সে অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি শুধু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, '১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তারপর চেষ্টা করেছি, বাংলাদেশকে উন্নত করতে। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া কেউ এদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেয়নি। চিন্তাও করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এসে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে।'

তিনি আরও বলেন, 'এই রাজশাহীতে জাতির পিতা স্বাধীনতার পর কলকারখানা করে দেন। এরপর সব বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ বন্ধ কারখানা চালু করতে কাজ করে। পদ্মানদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য দীর্ঘ বাঁধ করে দিয়ে সেই ভাঙন আমরা রোধ করে দেই। এই রাজশাহীর মানুষের কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। এরই মধ্যে রাজশাহীর মানুষের জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা।'

জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'মির্জা ফখরুল সাহেব পালিয়ে আছেন আপনারা, তারেক রহমান আর রাজনীতি করবে না বলে পালিয়েছে লন্ডনে। আমরা পালাতে জানি না। এই দেশেতে জন্ম আমার এই দেশেতে মরি। প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠব।'

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিএনপির এখন চলছে পদযাত্রা। পদযাত্রা মানে শেষযাত্রা, অন্তিম যাত্রা ও মরণযাত্রা। মরণযাত্রার কথা শুনেছেন না? মরণযাত্রা এখন হলো বিএনপির। তারা এখন সরকারকে পালাতে বলে। সরকার পালাবার পথ নাকি খুঁজে পাবে না।'

'সামনে আসতেছে বঙ্গবন্ধু টানেল। পদ্মা সেতুর জ্বালা, মেট্রোরেলের জ্বালাও আছে। যেদিকে তাকাই সেদিকে উন্নয়ন। রাজশাহী শহর গ্রিন সিটিতে পরিণত হয়েছে। এই রাজশাহী এখন বাংলাদেশের পরিচ্ছন্ন সিটি। মেয়রকে আমি ধন্যবাদ দেব। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মেয়র রাজশাহীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেছেন।'

ওবায়দুল কাদের বলেন, 'সামনে আরও জ্বালা আছে। পায়রা তাপবিদু্যৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী তাপবিদু্যৎ কেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র ও এক দিনে শত সেতু উদ্বোধনের জ্বালা। দেশে শতভাগ বিদু্যতায়ন হয়েছে। গ্রাম হয়েছে শহর, এটা আরেক জ্বালা। জ্বালায় মরে ফখরুল আর বিএনপি। খেলা হওয়ার আগেই তো বিএনপি পালাতে শুরু করেছে। আগেই তো মরণযাত্রা শুরু হয়েছে। খেলা হবে দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, হত্যা ষড়যন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। আগামী নির্বাচনের আগে ফাইনাল খেলা হবে। তৈরি হয়ে যান ফখরুল সাহেব।'

ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বিএনপির এখনো শিক্ষা হয়নি। শিক্ষা পাবে, যখন আগামী নির্বাচনে আবার পরাজয়ের মুখ দেখবে। তাদের পরাজয় হবে। আজকে আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হন। একজন নারী সন্তান জন্ম দেয়। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেখলেন, মা সন্তান জন্ম দেয়, কিন্তু সব রেকর্ডে বাবার নাম থাকে। শেখ হাসিনা বলেছেন, বাবার সঙ্গে মায়ের নাম লিখতে হবে। বৃত্তির টাকাও এখন মায়ের কাছে যায়, বাবারা পায় না। যে মায়ের মোবাইল ফোন ক্রয়ের টাকা নেই। যে মায়ের মোবাইল ফোন কেনার সামর্থ্য নেই, শেখ হাসিনা মোবাইল ফোন কেনার সুযোগ করে দিয়েছেন।'

এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডক্টর হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'বিএনপি কই, তারেক কোথায়? আমরা আগামী নির্বাচনের পর বিএনপিকে পালানোর সুযোগ দেব না। জনগণ সুযোগ দেবে না। কারণ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রাজশাহী তথা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের আস্তানা বানাবে।'

দেশবাসী ও রাজশাহীবাসীকে সাবধান করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'রাজশাহী শহর ১৪ বছরে বদলে গেছে। রাজশাহী আসলে মনে হয়, উন্নত কোনো দেশের শহরে আসলাম। আর বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, বাংলাভাই তৈরি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। রাজশাহী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের সবচেয়ে সুন্দর শহরে পরিণত হয়েছে।'

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রাজশাহী-১ (সদর) আসনের এমপি ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা প্রমুখ।

জনসভা উপস্থাপনা করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, জেলার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা।

২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ

এদিকে একইদিন ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণের জানমাল রক্ষায় ও সন্ত্রাস দমনে জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা। পেশাদার, দক্ষ ও বিজ্ঞানভিত্তিক পুলিশ বাহিনী গড়তে কাজ করছে সরকার। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট সেবা, স্মার্ট শহর, স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। সেখানে বাংলাদেশ পুলিশকেও স্মার্ট পুলিশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে।

মানুষ ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এর ভালো দিক যেমন আছে, তেমনি অনেক খারাপ দিকও রয়েছে। ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্ম ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী সাইবার ক্রাইম, জালিয়াতি, জঙ্গিবাদ বাড়ছে। এসব প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ বাহিনীর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ দেশের মানুষের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মানুষ এ নম্বরে কল করে দ্রম্নত সেবা পাচ্ছে। বিপদে তারা পুলিশের তাৎক্ষণিক সেবা পাচ্ছে। ফলে তাদের পুলিশের প্রতি আস্থা বাড়ছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও সন্ত্রাস দমনেও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে এ সেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।'

আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্রসহ মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। তবে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে একটি গোষ্ঠী ওঠেপড়ে লেগে আছে। তারা হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'পুলিশ বাহিনী পেশাদারিত্বের সঙ্গে অগ্নিসন্ত্রাস, বোমাবাজ, জঙ্গিবাদে জড়িতদের প্রতিহতে কাজ করে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের সময়ও পুলিশ বাহিনী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবা করেছে। করোনায় মৃত ব্যক্তিকে যখন তার আত্মীয়-স্বজনরাও দাফন করছিলেন না, তখন পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে গিয়েছিল।'

পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দেশে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। সেগুলো দমন, পুলিশকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস নির্মূলে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অপরাধীকে শনাক্ত করা এবং মামলা তদন্তে প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের লক্ষ্যে সাইবার পুলিশ সেন্টার, ডিএনএ ল্যাব, অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে।'

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির ঐতিহাসিক প্যারেড গ্রাউন্ডে হেলিকপ্টারযোগে উপস্থিত হন। এরপর বেলা ১১টা ১৮ মিনিটের সময় প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হয়ে প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন।

এরপর ১ বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের মাঝে ট্রফি বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অশ্বারোহণে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, বেস্ট ইন ফিল্ড বিষয়ে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার শুভ্রদেব, বেস্ট সু্যটার বিষয়ে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল রানা, বেস্ট প্রবেশনার বিষয়ে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার সাকিবুল আলম ভুইয়া। ৯৭ জন নবীন সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে ১২ জন নারী সহকারী পুলিশ সুপার অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বররাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, চারঘাট-বাঘার সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শাহরিয়ার আলম, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা ছাড়াও পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুলস্নাহ আল মামুন এবং বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা অধ্যক্ষ আবু হাসান মুহাম্মদ তারিক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে