শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দু'টি সেস্নাগানে কেঁপে ওঠে রাজপথ

যাযাদি ডেস্ক
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় প্রতিটি দিনই মুখর ছিল ছাত্র-জনতার নানান কর্মসূচিতে। স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রম্নয়ারির দ্বিতীয় দিনে পূর্বঘোষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশকে কেন্দ্র করে ছাত্ররা ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন। ৪ ফেব্রম্নয়ারির ছাত্র সমাবেশকে ঘিরে এই প্রচারণায় এদিন দু'টি সেস্নাগানে কেঁপে উঠেছিল রাজপথ। এর একটি ছিল, 'বাংলাই হবে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা' এবং অপরটি 'রাজবন্দিদের মুক্তি চাই'।

ভাষা আন্দোলনের এই বিস্ফোরক সময়কালে জেলে আটক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহিউদ্দিন আহমদ প্রমুখ নেতা। তবে জেলে থেকেও শেখ মুজিব ভাষা আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। পরামর্শ দিতেন। এসব বন্দিদের মুক্তির দাবিতে ছাত্র-জনতা দেশাত্মবোধে জেগে ওঠেন। সবার বুকেই সেদিন ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি।

ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক স্মৃতি কথনে লেখেন, 'নীলক্ষেত ব্যারাকে থাকার সুবাদে ওই ব্যারাকের বাসিন্দাদের একজনের মুখে শুনি ভাষা নিয়ে তাদের বিক্ষোভ, সভা, মিছিল ইত্যাদির কথা। কারণ যদিও সামান্য, তবুও গুরুত্বপূর্ণ। সাতচলিস্নশের শেষে পাক সরকারের ছাপা এনভেলাপ, মানিঅর্ডার ফরম ইত্যাদিতে উর্দু ও ইংরেজি লেখার পাশে বাংলা লেখা না থাকায় তাদের ক্ষোভ। ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে ব্যারাক প্রাঙ্গণে সভা, বক্তৃতা এবং মিছিল ও সেস্নাগানে

'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' 'উর্দুর সঙ্গে বিরোধ নাই'। ওরা সরকারি কর্মচারী, তবু সাহস করে পাকিস্তানি উন্মাদনার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন।'

তবে ফেব্রম্নয়ারির ২ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের ছাত্রদের মধ্যে আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল নাজিমুদ্দিনের বক্তব্য ও সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের বিষয়টি। নাজিমুদ্দিনের ওপর ছাত্র-জনতার প্রকাশ্য ক্ষোভ বাড়তে থাকে। ১৯৫২ সালের ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় পাকিস্তান মুসলিম লীগের কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এসে ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানের জনসভায় পাকিস্তানের গুণকীর্তন ও সরকার পূর্ব বাংলার জন্য কী কী করেছে তা উলেস্নখ করে ভাষণ দেন। ভাষণের শেষ পর্যায়ে তিনি ঘোষণা করেন, 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। পাকিস্তানকে আমরা ইসলামি রাষ্ট্ররূপে গঠন করতে যাচ্ছি।'

কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দোহাই দিয়ে ভাষণে তিনি বলেন, 'প্রদেশের ভাষা কী হবে তা প্রদেশবাসীই স্থির করবেন, কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। একাধিক রাষ্ট্রভাষা থাকলে কোনো রাষ্ট্র শক্তিশালী হতে পারে না।'

তিনি আরও বলেন, 'পরীক্ষামূলকভাবে একুশটি কেন্দ্রে বাংলাভাষাকে আরবি হরফে লেখার প্রশিক্ষণ সফল হয়েছে এবং জনগণ নিজ উদ্যোগে নতুন কেন্দ্র খুলছে।'

মূলত খাজা নাজিমুদ্দিনের এমন ঘোষণার পরই রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রশ্নে বাংলার ছাত্র-জনতা এক হতে থাকে। নাজিমুদ্দিনের বক্তব্যের প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২৯ জানুয়ারি প্রতিবাদ সভা এবং ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। সেদিন ছাত্রসহ নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমবেত হয়ে ৪ ফেব্রম্নয়ারি ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা পালনের সিদ্ধান্ত নেন। ৪ ফেব্রম্নয়ারির ওই সভা ঘিরেই ২ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকার রাজপথ কাঁপিয়ে সেস্নাগান দেন ছাত্র-জনতা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে