সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

২১ ফেব্রম্নয়ারির প্রস্তুতিতে ছাত্ররা ব্যস্ত সময় পার করছিলেন

যাযাদি ডেস্ক
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

একুশের চেতনার জন্ম হয়েছিল এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে। বাঙালির জাতিগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের নিরিখে। আমাদের যে হাজার বছরের হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থানের অসাম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধের সংস্কৃতি, সেই সংস্কৃতিই আমাদের ভাষাচেতনার সংগ্রামী ঐতিহ্যের ভিত্তি। সংগ্রামের এই পথ ছিল বেশ দীর্ঘ। মধ্য যুগের কবি-সাহিত্যিক থেকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন পর্যন্ত সব সময়ই বাংলা ভাষা আক্রান্ত হয়েছে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক অস্ত্রে। অথচ বাংলার মানুষ নিরন্তর সংগ্রামের ঝান্ডা উড্ডীন রেখেছে সব ধরনের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক সংগ্রামেরও বিস্ফোরণ ঘটে। তারই অভিঘাত পরবর্তীতে রাজনীতিকে রাজপথের উত্তাল আন্দোলনের পথ দেখিয়েছে।

১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তব্যের রেশ ধরে উত্তাল তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ ফেব্রম্নয়ারি ছাত্রদের ডাকে ঢাকা শহরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট পালিত হয়। ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবিতে তখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় একটি মিছিল নিয়ে রাজপথ প্রদক্ষিণ করে। এতে পশ্চিম পাকিস্তানের সরকারের টনক নড়ে। ফেব্রম্নয়ারির ৪ থেকে ২০ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত চলছিল সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পূর্ব ঘোষিত ২১ ফেব্রম্নয়ারির প্রতিবাদ-দিবস পালনের প্রস্তুতি। ২১ ফেব্রম্নয়ারির সর্বাত্মক কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঢাবির ছাত্ররা প্রদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটে যান। গোপনে ছাত্র-জনতাকে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন।

এদিকে, শেখ মুজিবুর রহমান তখনও জেলখানায় বন্দি। জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা অনুসারে তার সুপরিচিত কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক মনোনীত করে ৩১ জানুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ১৯৪৮ সালে যে আন্দোলন শুধু ছাত্ররা করে আসছিল তাতে সর্বমহল যুক্ত হয়, এতে রাজনীতিবিদরা আসার সুযোগ পান। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সভায় পূর্ব বাংলা আইনসভার অধিবেশন আহ্বানের দিন অর্থাৎ ২১ ফেব্রম্নয়ারি হরতাল আহ্বান করা হয়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে এ আন্দোলনের ডাকের প্রতি জনসমর্থনও বৃদ্ধি পায় অনেক গুণে।

বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা অনুসারে জেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন যে তাকে বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে। হয় তাকে মুক্তি দেওয়া হবে, তা না হলে ১৬ ফেব্রম্নয়ারি থেকে তিনি অনশনের মাধ্যমে দেহত্যাগ করে জেলমুক্ত হবেন। এ গোপন সভার সংবাদ নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষের গোচরে আসে এবং সে কারণেই সম্ভবত বঙ্গবন্ধুকে ফরিদপুর জেলে দ্রম্নত স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

সূত্র : আবদুল হক, ভাষা-আন্দোলনের আদি পর্ব, ঢাকা, ১৯৭৬; বদরুদ্দীন উমর, পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, ১ম খন্ড, ঢাকা, ১৯৭৯।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে