বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
২৫ জুন অর্থ বিল ও ২৬ জুন বাজেট পাস হবে

স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প প্রকাশের বাজেট আজ

এম সাইফুল
  ০১ জুন ২০২৩, ০০:০০

করোনা মহামারি ছিল ২০২০ সাল পরবর্তী অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মুখোমুখি হয় বিশ্ব। ফলে স্থানীয় ও বিশ্ব অর্থনীতির সব ক্ষেত্রেই বিরাজ করছে অস্থিরতা। তাছাড়া এই অর্থবছরেই হবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট ঘোষণা আসছে আজ। ধারণা করা হচ্ছে এটি স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প প্রকাশের বাজেট হয়ে উঠবে।

জানা গেছে, ২০২৩-২৪ বাজেটের আকার হবে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এটি দেশের ৫২তম জাতীয় বাজেট, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

বুধবার বিকাল পাঁচটায় একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করবেন। এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম 'উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।'

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ বাজেটের আকার হবে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে বাজেটে মোট আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বিভিন্ন কর থেকে সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা আসবে। এরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর তথা আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও শুল্ক থেকে আসবে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান থেকে আসবে তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

আসছে বাজেটের সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে -৫.২ শতাংশ। অনুদানসহ বাজেট ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতির পরিমাণ হবে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে বৈদেশিক ঋণ এক লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। নিট বৈদেশিক ঋণ

ধরা হয়েছে এক লাখ দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণের নির্ভরতা ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নিবে।

আগামী অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য রয়েছে, যেখানে প্রায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি। আগামী বছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা হবে জিডিপির ৩৩ দশমকি ৮ শতাংশ। ব্যয়ের জন্য রাজস্ব আয় থেকে আসবে ৫ লাখ কোটি টাকা। বাকি টাকা স্থানীয় ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে।

আসন্ন বাজেটে জনস্বার্থে কিংবা দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় বিভিন্ন ধরনের পণ্যে শুল্ক ও কর আরোপ কিংবা ছাড়ের প্রস্তাবনা দেবেন অর্থমন্ত্রী। ফলে কিছু পণ্যের দাম কমতে পারে আবার কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

এর আগে বুধবার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম (২০২৩ খ্রিস্টাব্দের বাজেট) অধিবেশনের কার্যাদি নিষ্পন্নের জন্য সময় বরাদ্দ ও অধিবেশনের স্থায়িত্বকাল নিয়ে আলোচনা হয়। শুক্র ও শনিবার ব্যতীত প্রতিদিন বিকাল ৫টা এবং ১ জুন (আজ) বিকাল ৩টায় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে মর্মে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

আজ বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপিত হবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। ৪ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত মোট ৪০ ঘন্টা বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ জুন ২০২৩ অর্থবিল পাস ও ২৬ জুন ২০২৩ বাজেট পাস হবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ঈদুল-আজহার জন্য সংসদ অধিবেশন মুলতবি হয়ে ২ জুলাই ২০২৩ আবার অধিবেশন শুরু হবে মর্মে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

সপ্তাহখানেক চলার পর বিল পাসের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশন (২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের বাজেট) সমাপ্ত হবে। এ বিষয়টিসহ অধিবেশনের সময় ও কার্যদিবস সম্পর্কিত যে কোনো পরিবর্তনের ক্ষমতা প্রদান করা হয় স্পিকারকে।

এ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য ৮৬টি ও অন্যান্য মন্ত্রীর জন্য ১ হাজার ৫৫৪টি প্রশ্নসহ মোট ১৬৪০টি প্রশ্ন পাওয়া গেছে, বিধি-৭১ এ মনোযোগ আকর্ষণের নোটিশ পাওয়া গেছে ৩২টি। বেসরকারি সদস্যদের নিকট হতে পারে কোনো বিলের নোটিশ পাওয়া যায়নি। পূর্বে অনিষ্পন্ন বেসরকারি বিলের সংখ্যা ৮টি। ২২টি সরকারি বিলের মধ্যে কমিটিতে পরীক্ষাধীন ১১টি, পাসের অপেক্ষায় ৪টি ও অধিবেশনে উত্থাপনের অপেক্ষায় ৭টি।

এদিকে আগামী অর্থবছরে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মাত্র দুই মাস বাকি থাকলেও ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য থেকে বহু দূরে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৪ হাজার ৬৩১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পিছিয়ে আছে এনবিআর। এছাড়া রয়েছে বিশাল ঘাটতি ও অভ্যন্তরীণ ঋণের উপর নির্ভরতা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান যায়যায়দিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অভিজ্ঞ। তাই এটি সরকারের একটি রুটিন ওয়ার্ক। এ নিয়ে সরকার তৎপর রয়েছে। তাই বাজেট বিষয়ে সরকার যথাযথ পরিকল্পনা করেই গ্রহণ করবে।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ডলারের সংকট ও নির্বাচনী বছরের বাজেট এটি। এছাড়া চলতি অর্থবছরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। তাই এ বাজেটের চ্যালেঞ্জগুলো সরকার কীভাবে মোকাবিলা করবে এটাই দেখার বিষয়।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ডক্টর এমএম মজিদ যায়যায়দিনকে বলেন, আমরা বাজেট উপস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছি। তারপর বিস্তারিত মন্তব্য করতে পারব। নির্বাচনী বছরে দ্রব্য মূল্যের সিন্ডিকেট কীভাবে ভাঙবে এজন্য কি কি পরিকল্পনা রয়েছে সেটি দেখতে হবে।

কার্য উপদেষ্টা কমিটির ত্রয়োদশ বৈঠক অনুষ্ঠিত

এদিকে কার্য উপদেষ্টা কমিটির একাদশ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। কমিটি সদস্য এবং সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন কমিটির সদস্য বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু, আনিসুল হক, গোলাম মোহাম্মদ কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী।

বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম। এতে সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে