বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এখনই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চায় না জাতিসংঘ

যাযাদি ডেস্ক
  ১০ জুন ২০২৩, ০০:০০

এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে পাইলট প্রকল্পের আওতায় মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে চায় বাংলাদেশ সরকার। তবে সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বড় বাধা হচ্ছে খোদ জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, 'রাখাইনের পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের জন্য এখনো নিরাপদ নয়।'

এদিকে, প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষর্ যাপোর্টিয়ার টম এন্ড্রুস। বৃহস্পতিবার তার এ সংক্রান্ত এক বিবৃতির উদ্বৃতি দিয়ে এ তথ্য জানায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ।

বিবৃতিতে টম এন্ড্রুস বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে এখনো রোহিঙ্গাদের জীবন ও চলাচলের স্বাধীনতা ঝুঁকিতে রয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার মতো পরিবেশ বিরাজ করছে না। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে আন্তর্জাতিক আইনে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন হবে। কারণ রাখাইনে ফিরে গেলে রোহিঙ্গারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে আবারও নৃশংসতার শিকারে পরিণত হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, তাই বাংলাদেশকে আমি শিগগিরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্প স্থগিত করার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কথায় ও কাজে রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।

টম এন্ড্রুস অভিযোগ করে বলেন, শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে বাধ্য করার জন্য বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ প্রতারণামূলক ও জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর রয়েছে। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তারিখ উলেস্নখ না করলেও প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ১৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পাঠানোর কথা উলেস্নখ করেছেন। চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর কথা। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, প্রথম দফায় লোকজনকে পাঠানোর বিষয়টি শিগগির ঘটতে পারে।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ফিরে যেতে রাজি হলে তাদের বিপুল অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতির খবর প্রকাশ পেয়েছে। এমনও অভিযোগ এসেছে যে, প্রতিদিন প্রত্যেক রোহিঙ্গার খাবারের বরাদ্দ যখন কমছে, তখন অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হচ্ছে।

জাতিসংঘের এ ধরনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। গত ছয় বছর ধরে একই কথা শোনা যাচ্ছে, পরিস্থিতি অনুকূলে নয়।

এর আগে, মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজি হওয়ায় হঠাৎ করে কিছু রোহিঙ্গার খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেয় জাতিসংঘ। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ জুন জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ প্রধান জোহানেস ভ্যান ডার ক্লকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেদিন ঢাকার পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তায় ইউএনএইচসিআরকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডে যেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করা হয়।

প্রসঙ্গত, চীনের ত্রি-পক্ষীয় উদ্যোগে পাইলট প্রকল্পের আওতায় হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে চায় সরকার। সেই লক্ষ্যে চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝিতে চীনের কুনমিংয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার?কে নি?য়ে বৈঠক ক?রে?ছে চীন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় রো?হিঙ্গা?দের এক?টি দল নি?য়ে সরকারের সং?শ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রাখাইন সফর করবেন।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ৫ মে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা রাখাইন ঘুরে আসে। ফিরতি সফরে রোহিঙ্গাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে প্রতিনিধি দলটির সফর পিছিয়ে যায়। পরে গত ২৫ মে পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজার ঘুরে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে