শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বৈশ্বিক অবস্থানে অগ্রগতি হয়নি বাংলাদেশের

যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার রিপোর্ট ২০২৩-এ তথ্য মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১০ সুপারিশ
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ জুন ২০২৩, ০০:০০
বৈশ্বিক অবস্থানে অগ্রগতি হয়নি বাংলাদেশের

মানব পাচার রোধে উলেস্নখযোগ্য চেষ্টা চালিয়েও বৈশ্বিক অবস্থান থেকে অগ্রগতি হয়নি বাংলাদেশের। ২০২০ সালের মতোই দেশটির অবস্থান টিয়ার ২-এ (দ্বিতীয় স্তর)। তবে মানব পাচার বন্ধ এবং ভুক্তভোগীদের সহায়তার বাংলাদেশের আরও অনেক করণীয় আছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য পাচারকারীদের আরও কঠোর শাস্তি ও মানব পাচার ট্রাইবু্যনালের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ১০ দফা সুপারিশ করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্ট 'মানব পাচার রিপোর্ট ২০২৩' প্রকাশ করে, যেখানে ১৮৮টি দেশের মানব পাচার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক এই প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশের অবস্থান আগেরবারের মতো একই জায়গায় রয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের '২০২৩ ট্রাফিকিং ইন পারসন্স রিপোর্ট : বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার মানব পাচার দূর করতে নূ্যনতম মান পূরণ করতে পারেনি। তবে এ লক্ষ্যে তারা উলেস্নখযোগ্য চেষ্টা চালিয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০০০ সালের ট্র্যাফিকিং ভিকটিমস প্রটেকশন আইনের (টিভিপিএ) বাধ্যবাধকতা মেনে প্রধানত যে তিন স্তরে দেশগুলোকে ভাগ করা হয়, সেটার দ্বিতীয় স্তরে (টিয়ার-২) রাখা হয়েছে বাংলাদেশকে। এর অবস্থানে রাখার ব্যাখ্যায় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার পাচার নির্মূলের সর্বনিম্ন মান পূরণ করতে পারেনি, তবে সেটি করার স্বার্থে উলেস্নখযোগ্য চেষ্টা চালিয়েছে।

এতে বলা হয়, সরকার পাচারবিরোধী কার্যক্রমে কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব সত্ত্বেও সার্বিকভাবে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই বাংলাদেশ 'টিয়ার-২'-এ থাকছে। যেসব দেশ মানব পাচার নির্মূলে টিভিপিএ'র সর্বনিম্ন মান পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালন করতে পারে, সেগুলোকে রাখা হয় 'স্তর-১' এ। আর টিভিপিএ'র সর্বনিম্ন মান রক্ষা করতে না পারা এবং এক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া দেশগুলোকে রাখা হয় সর্বনিম্ন 'স্তর ৩'-এ। দ্বিতীয় স্তরে রাখা হয় ওইসব দেশকে, যেগুলো টিভিপিএ'র সর্বনিম্ন মান পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি; তবে সেগুলো প্রতিপালনে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে।

সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে পাচারকারীদের বিচারের সম্মুখীন করা, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের মানব পাচারের বিষয় তদন্ত বৃদ্ধি এবং সরকার পরিচালিত রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত কিছু নিয়োগ ফি কমানোর বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ।

সরকার ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন পস্ন্যান (এনএপি) ২০২৫ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে এবং বাংলাদেশে মানব পাচারের ওপর প্রথমবারের মতো জাতীয় সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। তবে সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নূ্যনতম মান পূরণ করতে পারেনি। সরকার আইন প্রয়োগের প্রশ্নে প্রচেষ্টা বাড়ালেও অভ্যন্তরীণ নারী পাচার রোধে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি। অবৈধ নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সাব-এজেন্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। পাচারের শিকারদের নিরাপত্তা উদ্যোগ এখনো পর্যাপ্ত নয়।

এছাড়া বেশির ভাগে ক্ষেত্রেই আদালত পাচারকারীদের কারাদন্ডের পরিবর্তে জরিমানা করে, যা সরকারের সামগ্রিক পাচারবিরোধী প্রচেষ্টার উদ্যোগকে দুর্বল করে দেয়। ফলে পাচারের শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নিরাপত্তার উদ্বেগ তৈরি করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরকার মানব পাচার থেকে রক্ষায় প্রচেষ্টায় মিশ্র অগ্রগতি করেছে। সরকার প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে পাচারবিরোধী তথ্য প্রকাশ করেনি। ফলে বাংলাদেশে মানব পাচারের পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিরূপণ করা বেশ কঠিন। সরকার পাচারের শিকার হিসেবে ২৪০ জনকে চিহ্নিত করেছে। এ সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের ১ হাজার ১৩৮ জনের তুলনায় অনেক কম। পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, সারা বছর ধরে অপর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহের কারণে প্রকৃত পাচারের শিকারের সংখ্যা সম্ভবত অনেক বেশি হবে। সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দাবি করছে বিভিন্নভাবে কমপক্ষে ৬ হাজার ৭৮১ জন পাচারের শিকার হয়েছেন বলে চিহ্নিত করা গেছে।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বলেন, 'বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত ভালো করছে। এই রিপোর্টে সেটির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। মানব পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্মকান্ডে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত। তারা প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আরও অনেক প্রোগ্রামে কাজ করে থাকে।'

যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১০ দফা সুপারিশের প্রথমটিতে মানবপাচার অপরাধের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া আরও ভালো করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মার্কিন বিবেচনায় অপরাধীদের শুধু অর্থদন্ড নয়, একইসঙ্গে কঠোর কারাদন্ড দিতে হবে মানবপাচার প্রতিরোধে।

এছাড়া মানব পাচারের ভুক্তভোগীদের চিহ্নিত করার সুপারিশ করার পাশাপাশি ট্রাইবু্যনালের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ভুক্তভোগীদের সেবা বৃদ্ধি, যেসব কোম্পানি বিদেশে লোক পাঠায় বা দালালদের ওপর নজরদারি বাড়ানো, যাতে করে তারা কাউকে প্রতারিত করতে বা বেশি অর্থ নিতে না পারে সেটির প্রতি আরও নজর দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে