সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠি

সত্যতা চ্যালেঞ্জ করে পাল্টা চিঠি ২৬৭ বাংলাদেশির

যাযাদি ডেস্ক
  ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা মার্কিন ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠিটি অসত্য বলে দাবি করেছে আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসরত বাঙালিদের সংগঠন কংগ্রেস অব বাংলাদেশি আমেরিকান ইনকরপোরেশন। পাশাপাশি ওই চিঠির তথ্যের সত্যতাও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

গত ২৬ আগস্ট মার্কিন কংগ্রেসের ওই ৬ সদস্যকে পাল্টা চিঠি পাঠিয়েছে কংগ্রেস অব বাংলাদেশি আমেরিকান ইনকরপোরেশন। সেখানে স্বাক্ষর করেছেন ২৬৭ জন সদস্য। কংগ্রেসের যে ৬ সদস্যকে চিঠি দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- ব্যারি মুর, টিম বার্চেট, ওয়ারেন ডেভিডসন, বব গুড, স্কট পেরি ও কিথ সেলফ।

কংগ্রেসম্যানদের কাছে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর করা বাংলাদেশি আমেরিকানদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, মার্কিন সরকারি উচ্চপদে কর্মরত বাংলাদেশি এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তরুণরা।

ওই চিঠিতে বলা হয়, বাইডেন প্রশাসনের কাছে লেখা চিঠিতে নিজের জন্মভূমি সম্পর্কে মিথ্যা ও অসম্পূর্ণ তথ্য লেখা হয়েছে। এতে গর্বিত বাংলাদেশি হিসেবে তাদের অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে।

চিঠিতে জানানো হয়, গত এক দশকে বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নারী-পুরুষের সমঅধিকার, নারী উন্নয়ন প্রগতি, ধর্মীয় সহিষ্ণুতাকে বিবেচনা না করে খুবই সংকীর্ণ আর একচোখাভাবে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সংগঠনের সদস্যরা চিঠিতে মনে করিয়ে দেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সন্ত্রাসী সংগঠন জামায়াতে ইসলামসহ বাংলাদেশবিরোধী দলগুলো বিভিন্ন সময় টাকার বিনিময়ে লবিস্ট ফার্ম দিয়ে এসব অপপ্রচার চালিয়ে থাকে।

চিঠিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশি খ্রিষ্টান কমিউনিটি প্রধানের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে সবাই সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা এবং অর্জন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের হয়ে শান্তিরক্ষা করতে গিয়ে বিদ্রোহীদের হাতে নিহতদের আত্মত্যাগের কথা উলেস্নখ করে চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিচ্ছিন্ন দুই-একটি ঘটনার কারণে এত বিশাল অবদান আর আত্মত্যাগ কি অস্বীকার করবে জাতিসংঘ? জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের উজ্জ্বল অংশগ্রহণকে নিষিদ্ধ করা কোনোভাবেই নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বলা হয়, বিশ্ব মানবতা রক্ষায় ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রায় ১৪ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেয়। এত বিশাল সংখ্যক উদ্বাস্তু পৃথিবীর আর কোনও দেশ একসঙ্গে আশ্রয় দেয়নি উলেস্নখ করে মানবতা রক্ষায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ও প্রধানমন্ত্রীর অবদান তুলে ধরা হয়। শেখ হাসিনা নিজ দেশের স্বার্থের কথা না ভেবে এত বিশাল সংখ্যক অসহায় উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘ থেকে 'মাদার অব হিউমিনিটি' হিসেবে স্বীকৃত হন।

গণতন্ত্র নস্যাতের অভিযোগের জবাবে বাংলাদেশি আমেরিকানদের সংগঠন অতীতের গণতন্ত্র ধ্বংসকারী বিএনপি-জামায়েত-শিবিরের সন্ত্রাস ও একনায়কতান্ত্রিক শাসনের কথা উলেস্নখ করা হয়। বলা হয়, আমেরিকান হিসেবে উনারা ২৪৭তম স্বাধীনতা দিবস পালন করছে, কিন্তু তারপরও আমেরিকা গণতন্ত্র ব্যবস্থা, মানবিক অধিকার, ধর্মীয় অধিকার নিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সে তুলনায় ৫২ বছর বয়সি বাংলাদেশের চেষ্টাটি প্রশংসার দাবি রাখে কিনা, সেই প্রশ্ন রাখা হয়।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং মানবতা উন্নয়নের ৪টি দিক চিঠিতে উলেস্নখ করা হয়। প্রথমত, টানা ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারই দুর্নীতি দমনে কার্যকর ও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের নানা পর্যায়ে দুর্নীতি কমে আসছে ক্রমান্বয়ে। দীর্ঘ সময় অবৈধ সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি ও অন্যান্য স্বৈরশাসকের আমলে দুর্নীতির শিকড় এতো গভীরে বিস্তার লাভ করেছিল যে রাতারাতি তা নির্মূল করা সম্ভব নয়।

দ্বিতীয়ত, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানসহ সামরিক শাসকদের দুঃশাসন ও ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত বাংলাদেশ ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসে। ইতিহাস থেকে আমরা জানি, দীর্ঘদিন সামরিক শাসিত একটি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কোনো সহজ কাজ নয়। তারপরও বর্তমান সরকার চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক মানের গণতান্ত্রিক ভাবধারায় বাংলাদেশকে উন্নীত করতে।

তৃতীয়ত, রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিরোধী মতকে দমন-নিপীড়ন ও হত্যার রাজনীতি শুরু হয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ও সামরিক শাসকদের আমল থেকে। সেখান থেকে বাংলাদেশকে আইনের শাসনে ফিরিয়ে এনে সন্ত্রাস-মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখিয়ে বাংলাদেশ সুশাসনের ধারায় ফিরছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

চতুর্থত, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং একইসঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের মার্কিন বন্ধুদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে আবার যদি বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সরকার গঠিত হয়, তাহলে এ অঞ্চলে মৌলবাদের বিস্তার লাভ করবে আগের মতো। যা প্রতিবেশী দেশ ভারতের জন্যও হুমকিস্বরূপ। ২০০১-০৬ পর্যন্ত এ বিএনপি-জামায়াত সরকারের ছত্রছায়াতেই এ অঞ্চলে ইসলামি জিহাদি আর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ ও সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা ছড়িয়ে পড়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের ৭টি রাজ্যে।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে