রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবিধানিক স্বীকৃতি চায় আদিবাসীরা

পরিষদকে বিভক্ত করার 'ষড়যন্ত্র' চলছে :সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ
যাযাদি ডেস্ক
  ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

দেশে আদিবাসীদের বিভক্ত করার 'পাঁয়তারা'র পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে নানামুখী 'চক্রান্ত চলছে' বলে অভিযোগ করেছেন আদিবাসী পরিষদের নেতারা। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, 'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আদিবাসীদের ওপর 'আক্রমণ ক্রমাগত বাড়ছে। ভূমি দখলের পাঁয়তারা করছে। দারিদ্র্য কমছে না। শিক্ষার সুযোগ বাড়ছে না। বেকারত্ব বাড়ছে। সরকারের ঘোষিত মাথাপিছু আয় ও আদিবাসীদের আয়ের মধ্যে বড় পার্থক্য দেখা দিয়েছে। আদিবাসীরা এখন পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।'

এসব সংকট নিরসনে 'আদিবাসী' হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃত, পৃথক ভূমি কমিশন ও মন্ত্রণালয় গঠনসহ পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়ন চান তারা। ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ ও দাবি তুলে ধরা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন আদিবাসী পরিষদের দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম। সংগঠনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাকেকুজ্জামান রতনসহ অন্য নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম অভিযোগ করে বলেন, 'আদিবাসী পরিষদকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে। সম্প্রতি আদিবাসী সভাপতিকে অব্যাহতি দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচন করার সংবাদ আপনারা দেখেছেন। যারা এটা করেছেন তারা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির অনুমতি ছাড়া এই সভা কে আহবান করেছিলেন? সভায় কারা উপস্থিত ছিলেন? এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সারা দেশের কমিটিগুলোকে

আহ্বান করা হয়েছিল কিনা? সভাপতির অনুপস্থিতিতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত কি নেওয়া যায়? নূূ্যনতম গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও সাংগঠনিক নীতি মানলে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া কি সম্ভব?'

তার মতে, 'এই ধরনের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আদিবাসীরা বিভক্ত হবে এবং ভূমি থেকে বিতাড়িত করার যে কৌশল চলছে, সেটিই শক্তিশালী হবে।'

লিখিত বক্তব্যে আদিবাসী পরিষদের দপ্তর সম্পাদক বলেন, 'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আদিবাসীদের ওপর 'আক্রমণ ক্রমাগত বাড়ছে। সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম, দিনাজপুরে স্বপ্নপুরীর নামে ভূমি দখল, বগুড়ার শেরপুরে আদিবাসীদের ভূমি বেদখলের জন্য হামলা এবং বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে আদিবাসীদের বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'অর্থনৈতিক জোন, ইপিজেড, ইকো পার্ক করার নামে আদিবাসীদের ভূমি দখলের নানা পাঁয়তারা চলছে। চা বাগানের আদিবাসীরা উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে। এসব কিছু চলছে শাসক দলের প্রশ্রয়ে এবং প্রশাসনের সহায়তায়। ফলে আদিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এবং প্রগতিশীল মানুষদের প্রতিবাদ গড়ে তোলা ছাড়া আদিবাসীদের অস্তিত্ব ও সংস্কৃতি রক্ষা করা সম্ভব নয়।'

আদিবাসী পরিষদের পাঁচ দাবি

১) 'আদিবাসী' হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃত দিতে হবে। ২) সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন ও মন্ত্রণালয় গঠন। শিক্ষা ও চাকরিতে কোটা নিশ্চিতকরণ। ৩) গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি 'আত্মহত্যার জন্য দায়ীদের' বিচার। ৪) আদিবাসীদের ওপর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, জমি দখল, লুটপাট ও মিথ্যা মামলাসহ পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা। আদিবাসীদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ ও ভূমি অফিসের ঘুষ দুর্নীতি হয়রানি বন্ধ করা। ৫) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করা।

সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসী পরিষদের তিন দশক পূর্তি এবং অধিকার আদায়ের আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় ঢাকার শাহবাগে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে