নতুন জঙ্গি সংগঠন 'আল জিহাদী' গঠনের নেপথ্যে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী। তাদের প্রত্যক্ষ মদদে নতুন এই জঙ্গি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নতুন জঙ্গি সংগঠনটিকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দেশের প্রায় সব ইসলামী দলগুলোর মতই, দেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করা। জঙ্গি সংগঠনটির গ্রেপ্তার তিন শীর্ষ নেতাকে চার দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট। জিজ্ঞাসাবাদে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই নতুন সংগঠনটি সৃষ্টি করা হয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থাগুলো বলছে।
জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশীয় সংগঠনগুলোকে এক কাতারে আনার চেষ্টা চলছে বহু বছর ধরেই। তবে ওয়ান ইলেভেনের সময় তা প্রকাশ্যে চলে আসে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক একাধিক গোষ্ঠীর মদদে আইডিপি (ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি)-কে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশন বরাবর আবেদন করা হয়েছিল। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে বহু দৌড়ঝাঁপ এবং অর্থকড়িও খরচ করা হয়েছিল। তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়ায় আইডিপি আর আলোর মুখ দেখেনি।
সূত্রটি বলছে, সেই ধারাবাহিকতায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও দেশীয় জঙ্গি সংগঠনগুলোকে এক কাতারে আনার চেষ্টা চলছে। পুরো প্রক্রিয়াটির নেপথ্যে রয়েছে দেশের একটি প্রধান ইসলামী দল। এই রাজনৈতিক দলটি দেশের ৩৯টি ইসলামী দলকে নানাভাবে মদদ, অর্থায়নসহ সহযোগিতা করে। তারা দেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়।
সূত্রটি বলছে, পুরনো সেই ছক মোতাবেক সম্প্রতি নতুন করে ইসলামী দলের আড়ালে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে আবারও একত্রিত করার প্রক্রিয়া চলছে। এবার তাদের ভিন্ন নামে আনার চেষ্টা হচ্ছে। এমন একটি নাম দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যে নামে অসাম্প্রদায়িকতার গন্ধ থাকবে। অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পেতে রীতিমতো তোড়জোড় চলছে।
সূত্রটি বলছে, অত্যন্ত দূরদর্শী এমন চিন্তা ভাবনার ফসল হিসেবে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামের একটি নতুন জঙ্গি সংগঠন সৃষ্টি করা হয়। জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে পরে জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যক্ষ মদদ ও অর্থায়ন করার তথ্য-প্রমাণে
\হবেরিয়ে আসে। জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যরা বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য।
র্
যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান,র্ যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ প্রধান নেতা শামীন মাহফুজসহ ৮২ জন এবং কেএনএফের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৭ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়। সবশেষ চলতি বছরের ৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জঙ্গি সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর আগে জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা অব বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ পরে নাম সংক্ষিপ্ত করে হরকাতুল জিহাদ (হুজি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর, আনসারুলস্নাহ বাংলা টিম, আনসার আল ইসলাম ও আলস্নাহর দলকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়।
এটিইউ সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নিষিদ্ধ হওয়ার পর 'তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ' বা আল-জিহাদী নামের একটি জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতার তথ্য বেরিয়ে আসে। প্রায় তিন মাস ধরে জঙ্গি সংগঠনটি তৎপর হয়ে ওঠেছে। ইতোমধ্যেই সংগঠনটির তিনজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের চার দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
সূত্রটি বলছে, জঙ্গি সংগঠনটির আগামী বছর দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবে ঠিক কোন সময় হামলা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে, তা জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ই ছিল জঙ্গি সংগঠনটি টার্গেট। ওই সময় দেশে বড় ধরনের হামলা চালিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে বলে আভাস মিলেছে।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, গ্রেপ্তার জুয়েল মোলস্না নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুলস্নাহ বাংলা টিমের সদস্য। জঙ্গি হিসেবে জুয়েল গ্রেপ্তার হওয়ার পর গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেলে ছিল। ওই জেলে আনসারুলস্নাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা মুফতি মাওলানা জসিমুদ্দীন রাহমানী বন্দি রয়েছেন। জুয়েলের সঙ্গে রাহমানীর কারাবন্দি থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সময় দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। জুয়েল ৯ মাস জেলে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনটি সৃষ্টি করেন। মুফতি রাহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির। মুক্ত করার পদ্ধতি হিসেবে জঙ্গি সংগঠনটির রাহমানীকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে এটিইউর পুলিশ সুপার (অপারেশন্স) মো. ছানোয়ার হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, জঙ্গি সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ৯০ জনের মতো। সদস্যদের অধিকাংশই এক সময় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন বিশেষ করে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুলস্নাহ বাংলা টিম ও হিযবুত তাহরীরের সদস্য বলে জানা গেছে। এর বাইরে সদ্য যোগদান করা বেশ কিছু সদস্য হিজবুত তাওহীদ নামের একটি সংগঠনের সদস্য। যদিও এই সংগঠনটি নিষিদ্ধ নয়। তবে সংগঠনটির বিরুদ্ধে উগ্রবাদী মতবাদ প্রচারের অভিযোগ আছে। কোনো জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ হলেই জঙ্গিরা নতুন আরেক নামে সংগঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায়ই হয়ত নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে। জঙ্গি সংগঠনটির দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ সেপ্টেম্বর এটিইউয়ের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির ডিআইজি মোহা. আলীম মাহমুদ (অপারেশন্স) জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে চালানো অভিযানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নতুন জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান জুয়েল ও শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা রাহুল হোসেন এবং গাজীউল ইসলামকে। তাদের কাছে আটটি ব্যানার পাওয়া গেছে। তারা সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি দলের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছিলেন।