বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
walton

বিদেশে চিকিৎসা নিতে হলে খালেদাকে জেলে যেতে হবে

ভয়েস অব আমেরিকাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
যাযাদি ডেস্ক
  ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
আপডেট  : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:৩৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে এখন যে সাজা স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছি, তা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। আবার তাকে জেলে যেতে হবে, আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে তাকে অনুমতি নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন সফরের সময় ওই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এই সাক্ষাৎকারের ভিডিও ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভয়েস অব আমেরিকার প্রশ্ন ছিল, 'বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতির খবর আমরা পাচ্ছি। তো তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি আপনারা কি পুনর্বিবেচনা করবেন?' জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি জিজ্ঞেস করি, পৃথিবীর কোন দেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে। পৃথিবীর কোনো দেশ দেবে?

তাদের যদি চাইতে হয়, আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এখানে আমাদের আদালতের কাজের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই।'

একই প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'তবে হ্যাঁ যেটুকু করতে পেরেছি তার জন্য, সেটা হচ্ছে, আমার যেটুকু সরকার হিসেবে ক্ষমতা আছে, সেখানে তার সাজাটা স্থগিত করে তাকে বাড়িতে থাকার পারমিশনটা দেওয়া হয়েছে এবং তার চিকিৎসার ব্যবস্থা...। সে নিজেই চিকিৎসা নিচ্ছে এখন। বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর যদি তাদের যেতে হয় বাহিরে, তাহলে এখন যে তাকে আমি বাসায় থাকার পারমিশনটা দিয়েছি, এটা উইথড্রো (প্রত্যাহার) করতে হবে। তাকে আবার জেলে যেতে হবে। এবং কোর্টে যেতে হবে। কোর্টের কাছে আবেদন করতে হবে। কোর্ট যদি রায় দেন, তখন সে যেতে পারবে। এটা হলো বাস্তবতা।'

প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে যখন সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে, তখন একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকার বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য এলো।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৫২ দিন ধরে ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। গত মার্চ মাসে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়।

সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মার্কিন ভিসা নীতির যৌক্তিকতা নেই

এদিকে, সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং র?্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাসহ মানবাধিকার ও ভোটসংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করেন শতরূপা বড়ুয়া। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশের ওপর মার্কিন ভিসা নীতির কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমার এটাই প্রশ্ন যে, হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই তারা আমাদের ওপর ভিসা স্যাংশন দিতে চাচ্ছে কী কারণে? আর মানবাধিকার বা ভোটের অধিকারের কথা যদি বলে, তাহলে আমরা আওয়ামী লীগ, আমরাই তো বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছি। আমাদের কত মানুষ রক্ত দিয়েছে এই ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয়, তার জন্য যত রকমের সংস্কার, সেটা আমরাই তো করেছি- আজকে ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মানুষকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা।'

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, '"আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব'-এ স্স্নোগান তো আমার দেওয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময় মিলিটারি ডিক্টেটর (সামরিক স্বৈরাচার) দেশ শাসন করেছে। তখন তো মানুষের ভোট দেওয়া লাগেনি। তারা ভোটের বাক্স নিয়ে গিয়ে শুধু রেজাল্ট ঘোষণা দিয়েছে। এরই প্রতিবাদে আমরা আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম করে নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন। সেটা আমরা করেছি। কাজেই সেই ক্ষেত্রে হঠাৎ এই ধরনের কোনো স্যাংশন দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমরা মনে করি না।'"

র?্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, আমাদের দেশের কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সেটা র?্যাব হোক, পুলিশ বা যেটাই হোক, কেউ যদি কোনো রকম অন্যায় করে, আমাদের দেশে কিন্তু তাদের বিচার হয়। এই বিচারে কিন্তু কেউ রেহাই পায় না। অনেক সময় কোনো কাজ তারা অতিরিক্ত করে, করতে পারে। কিন্তু করলে সেটা আমাদের দেশের আইনেই সেটার বিচার হচ্ছে। যেখানে এমন বিচার হচ্ছে, এ ধরনের ব্যবস্থা আছে, সেখানে এই স্যাংশনে কী কারণে?'

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন- প্রতিটি সুষ্ঠুভাবে হয়েছে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'এসব নির্বাচনে মানুষ তার ভোট দিয়েছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এই নির্বাচনগুলো নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাস্তবতাটা কী, বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার নিয়ে সব সময় সচেতন। কেউ ভোট চুরি করলে তাদের ক্ষমতায় থাকতে দেয় না।'

প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, '১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিলেন। তিনি কিন্তু দেড় মাসও টিকতে পারেননি। ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ জনগণের রুদ্ররোষে পড়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন তিনি। আবার ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল। সেই ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করে তিনি যখন সরকার গঠনের ঘোষণা দিলেন...এরপর ইমার্জেন্সি (জরুরি অবস্থা) জারি করা হলো। সেই নির্বাচন বাতিল হয়ে গেল। কাজেই আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু এখন ভোট সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। কাজেই একটা নির্বাচন সুষ্ঠু হবে- এটা তো আমাদেরই দাবি ছিল। আন্দোলন করে আমরাই সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি। তো আজ এখন তারা স্যাংশন দিচ্ছে, আরও দেবে, দিতে পারে। এটা তাদের ইচ্ছা। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের যে অধিকার; তাদের ভোটের অধিকার, তাদের ভাতের অধিকার, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার, তাদের শিক্ষা-দীক্ষার অধিকারসহ সব মৌলিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি।'

২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল, বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, বলেন প্রধানমন্ত্রী। তার কথা, 'এখন আর বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ নেই, এখন মানুষের সে রকম হাহাকার নেই, এমনকি আমাদের যে বেকারত্ব, সেটাও কিন্তু কমে এখন মাত্র ৩ শতাংশ। সেটাও তারা ইচ্ছা করলে কাজ করে খেতে পারে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, ওয়াইফাই কানেকশন সারা বাংলাদেশে। ঘরে ঘরে বিদু্যৎ, রাস্তাঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়ন আমরা করে দিয়েছি; মানুষ যেন কাজ করে খেতে পারে। আমাদের বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং; আমরা এগুলোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। এভাবে দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে এভাবে স্যাংশন দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেওয়া...। তো ঠিক আছে, স্যাংশন দিলে (বাংলাদেশিরা) আমেরিকা আসতে পারবে না, আসবে না। না আসলে কী আসবে-যাবে? আমাদের দেশে এখন যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। কাজেই আমরা দেখি, কী করে তারা। কেন তাদের এই স্যাংশন জারি।'

ওয়াশিংটন সফর শেষে লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী

এদিকে, ওয়াশিংটন ডিসি থেকে লন্ডনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট শনিবার (লন্ডন সময়) সকাল ১১টা ০৭ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

এর আগে ফ্লাইটটি ওয়াশিংটন ডিসির ডালসে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১১:৪০ মিনিটে (ওয়াশিংটন সময়) লন্ডনের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।

প্রধানমন্ত্রী ১৭ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্কে ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনে যোগদানের পাশাপাশি অন্যান্য উচ্চ-পর্যায়ের ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ২৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছান।

ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন।

প্রধানমন্ত্রী ৩ অক্টোবর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে (বিজি-২০৮) লন্ডন থেকে রওয়ানা দেবেন। ফ্লাইটটি (বাংলাদেশ সময়) ৪ অক্টোবর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
shwapno

উপরে