শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রাজস্ব খাত নিয়েও হতাশ আইএমএফ

আজ ২য় দফা বৈঠক
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
রাজস্ব খাত নিয়েও হতাশ আইএমএফ

শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে রিজার্ভ সংকট ছাড়াও রাজস্ব খাতের শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে গত ৫ অক্টোবর দিনভর এনবিআরের আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের সঙ্গে বৈঠক করেছে আইএমএফের সফররত প্রতিনিধি দল। দ্বিতীয় দফায় আজ সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের সঙ্গে আবার বসছে।

৫ অক্টোবরের বৈঠকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। তবে আইএমএফ প্রতিনিধি দল অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট নয়। এনবিআরের পরিকল্পনাকে খুবই গতানুগতিক বলে উলেস্নখ করেছেন তারা।

জানা গেছে, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা, অটোমেশনে ধীরগতি ও গতানুগতিক রাজস্ব আদায়ের রূপরেখায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি তারা। তাই রাজস্ব খাতেও সংস্কার চায় সংস্থাটি। তবে এনবিআরের পক্ষ থেকে বোঝানো হয়েছে, শর্ত পূরণ করা সম্ভব। বৈঠক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কর অব্যাহতি কমানো, আমদানি পর্যায়ের শুল্কহার ধীরে ধীরে কমানো ও করের আওতা বৃদ্ধির পরামর্শ ছিল আইএমএফের। সংস্থাটি আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের অটোমেশনে ধীরগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা আজ এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে বৈঠকের পর তিন বিভাগের প্রশাসনের সঙ্গে বসতে চায় সংস্থাটি।

জানা গেছে, আইএমএফ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলেছে। পরের দুই বছরে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলেছে। এই তিন অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ১ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়াতে হলে এনবিআরকে অতিরিক্ত ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে, যা এনবিআরের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ।

এনবিআরের আয়কর বিভাগ জানিয়েছে, গত পাঁচ অর্থবছরে তাদের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এই হার বজায় থাকলে স্বাভাবিকভাবে আদায় হবে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ভূমি রেজিস্ট্রেশন, ভ্রমণ কর, টোব্যাকো কর, পরিবেশ সারচার্জ ও করের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার মাধ্যমে বাকি ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে।

তবে ভূমি রেজিস্ট্রেশন ফি ও কার্বোনেটেড বেভারেজের করহার কমানোর পরও এ খাতে কীভাবে একই পরিমাণ আদায় হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। যদিও এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন এ বিষয়ে তাদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছে।

এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ জানিয়েছে, চারটি উপায়ে অতিরিক্ত ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে। বাজেট ও নিয়মিত ব্যবস্থার মাধ্যমে ১২ হাজার ৪০০ কোটি থেকে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সিগারেট থেকে ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা, অব্যাহতি তুলে দিয়ে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের (ইএফডি) মাধ্যমে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে।

শুল্ক বিভাগ তাদের পরিকল্পনায় জানিয়েছে, গত পাঁচ অর্থবছরে তাদের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এই হার বজায় থাকলে স্বাভাবিকভাবে আদায় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার পরিবর্তনের মাধ্যমে ১ হাজার ২০০ কোটি ও পেট্রোবাংলার কাছ থেকে বকেয়ার ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায়ের মাধ্যমে লক্ষ্য পূরণ করবে তারা।

আয়কর ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, সরকারি ও বেসরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে এনবিআরের পাওনা হাজার কোটি টাকা। এই পাওনা আদায় করা সম্ভব হলে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চিন্তা করা লাগত না। পেট্রোবাংলাসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আয়কর-ভ্যাটের বাকি টাকা উদ্ধারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

ভ্যাট বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সিগারেটের ওপর কর পুনর্গঠন থেকে চলতি বছর বাড়তি ভ্যাট হিসেবে আদায় হবে ২ হাজার ৪শ' কোটি টাকা। এছাড়া ইএফডি, মোবাইল ফোন, পলিপ্রোপিলিন স্ট্যাপল ফাইবার, সফটওয়্যার, এলপিজি সিলিন্ডারের ওপর শুল্ক ও কর সমন্বয়ের মাধ্যমে আরও ৪ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আইএমএফের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে রাজস্ব আদায় বাড়াতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে কিছু খাতের ভ্যাট অব্যাহতি তুলে দিয়েছে ভ্যাট বিভাগ। এছাড়া নতুন কিছু খাতে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে