সরকারের পতনের এক দফার দাবিতে ডাকা বিএনপির দশম দফা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের শেষ দিন বৃষ্টির মধ্যে রাজধানীর শাহবাগ ও মতিঝিলে দুটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। বৃহস্পতিবার সকাল ও দুপুরে এসব বাসে আগুন লাগানো হয়। অবরোধের সমর্থনে ১২ দলীয় জোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং জামায়াত ডেমরা ও পুরান ঢাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ ছাড়া দুপুরে ছাত্রদল রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকায় এবং সকালে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের নান্দাইলে বিএনপি-পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার জানান, দুপুর দেড়টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনে তরঙ্গ পস্নাস পরিবহণের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। আগুন লাগানোর সময় যাত্রীরা নিরাপদে নেমে গেছেন। সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট পুলিশ পাহারায় গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, 'সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মতিঝিল শাপলা চত্বরের কাছে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগানো হয়। বাসটির পেছনের সিটে আগুন লেগেছিল। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগে বাসটির চালক ও চালকের সহকারীরা তা নিভিয়ে ফেলেন।'
এর আগে বুধবার রাত সোয়া ১২টার দিকে আগারগাঁওয়ে একটি ব্যাংকের সামনে থেমে থাকা একটি ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস জানায়, বুধবার ভোর ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১২টি যানবাহনে দুর্বৃত্তরা আগুন লাগায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা শহরে ৬টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, 'গাজীপুরে ২টি, চট্টগ্রামে ৩টি ও সিরাজগঞ্জে ১টি করে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৬টি বাস, ২টি কাভার্ডভ্যান, ১টি ট্রাক ও ৩টি পিকআপভ্যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ২১টি ইউনিট ও ১০৫ জন কাজ করে।'
এদিকে আওয়ামী লীগ মজলুম মানুষের রক্তাক্ত লাশের ওপর দিয়ে আবারও পাতানো নির্বাচনের খেলা খেলতে চায়- এমন অভিযোগ করে ১২-দলীয়
জোটের নেতারা বলেছেন, তাদের প্রতিহত করতে হবে। নৌকা গুম-খুনের প্রতীক সুতরাং জনগণ তাদের ভোট দেবে না। বৃহস্পতিবার সকালে অবরোধের সমর্থনে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে একটি বিক্ষোভ মিছল বের করে ১২-দলীয় জোট। মিছিলটি বিজয় নগর ঘুরে পল্টন মোড় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশ বক্তব্য রাখেন- জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও ১২-দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক রাশেদ প্রধান, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামী বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) ভাইস চেয়ারম্যান হান্নান আহমেদ বাবলু, বাংলাদেশ এলডিপির এম এ বাশার ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আহাদ।
অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর ডেমরা ও পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা।
অবরোধকালে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী বলেন, রাতের ভোটে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী আওয়ামী সরকার তাদের অপশাসন ও জুলুমতন্ত্রে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তারা জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার হরণ করেছে।
তিনি বলেন, সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে জনগণের নাভিশ্বাস চলছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকার গোটা দেশকে একটি বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছে।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, জামায়াত ও বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে পুলিশ। তারা প্রতিনিয়ত অন্যায়ভাবে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। এই অবৈধ সরকারকে দেশের জনগণ আর এক মুহূর্তও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
ডেমরায় সড়ক অবরোধকালে আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য আবু জয়নব, মোজাফফর হোসাইন, মোহাম্মদ আবু মৃধা, মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন, আবু সায়েম, জসিম উদ্দিন, কামরুল মুনীর ফুয়াদ, শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলামসহ জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
এ ছাড়াও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য এম আর আজাদের নেতৃত্বে পুরান ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিবের নেতৃত্বে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে পরিবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। মিছিলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজীব মজুমদার, সহ-সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদসহ মাস্টার'দা সূর্যসেন হল, স্যার সলিমুলস্নাহ মুসলিম হল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর ও বিভিন্ন কলেজ ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের নির্দেশনায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডা থেকে রামপুরা ব্রিজ অভিমুখে সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
অন্যদিকে, ময়মনসিংহের নান্দাইলে মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের টিয়ার সেল ও রাবার বুলেটে ২০ জন আহত হয়েছেন।
নান্দাইল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, 'বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবরোধের সমর্থনে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কে উঠার সময় নান্দাইল মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ ২০ জন আহত হন। বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।'