শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
দুই শিক্ষার্থীর মৃতু্য

উত্তাল চুয়েট, দ্বিতীয় দিনেও সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ

যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
উত্তাল চুয়েট, দ্বিতীয় দিনেও সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ

সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে চুয়েট ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনের কাপ্তাই সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ করেন তারা। এ সময় শত শত শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নিয়ে স্স্নোগান দেন। এ ছাড়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেন।

বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- পলাতক চালক ও তার সহযোগীকে দ্রম্নত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, সব সুযোগ-সুবিধা-সংবলিত ক্যাম্পাসে আধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন, আধুনিক সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্স-সুবিধা দেওয়া, রাস্তার মাথা এলাকা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত চার লেন মহাসড়ক করা,

\হপ্রতিটি বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার কাগজপত্র ও চালকদের লাইসেন্স নিয়মিত যাচাই করা, ছাত্রকল্যাণ পরিষদকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং ছাত্র প্রতিনিধিদল গঠন করা, নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

এসব দাবি লিখিতভাবে না মানার অঙ্গীকারের আগ পর্যন্ত চুয়েটের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে বলে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন।

আন্দোলনের পাশাপাশি মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে নিহত শিক্ষার্থীদের গায়েবানা জানাজা এবং বিকাল ৩টায় শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় দুই সহপাঠীর মৃতু্যর খবর ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছলে শিক্ষার্থীরা সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসের সামনে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তিনটি বাস ভাঙচুর ও একটি বাসে আগুন দেন। ক্ষতিগ্রস্ত চারটি বাসই শাহ আমানত পরিবহণের।

'আমার ইঞ্জিনিয়ার পুতে গেল কই?'

এদিকে, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থী শান্ত সাহার (২২) লাশ নরসিংদীতে এসে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শহরের পশ্চিম কান্দাপাড়ার সেবাসংঘ এলাকায় বাড়িতে তার লাশ পৌঁছে। এ সময় তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নিহত শান্ত সাহা ওই এলাকার বাসিন্দা কাজল সাহা ও শিউলি সাহা দম্পতির ছেলে। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার জিয়ানগর এলাকায় মোটর সাইকেলকে ধাক্কা দেয় একটি বাস। এতে মোটর সাইকেলের চালক শান্ত সাহা নিহত হন। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মোটর সাইকেলের আরোহী তৌফিক হোসাইন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। তিনি পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আরেক শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঈদ-পয়লা বৈশাখের ছুটি বাড়িতে কাটিয়ে গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন শান্ত। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শান্তর সহপাঠীরা তার বড় ভাই ব্যাংক কর্মকর্তা কৌশিক সাহার মুঠোফোনে মৃতু্যর খবর জানান। তিন ভাইয়ের মধ্যে শান্ত ছোট। তার মেজ ভাই ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে লাশ পৌঁছার পর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন শান্তর মা শিউলি সাহা। বুকে-কপালে চাপরাচ্ছেন, আর কান্না করছেন। আহাজারি করে বলছেন, 'আমার সোনার চাক্কা আর নাই, আমিও আর বাঁচতে চাই না। পোলা ইঞ্জিনিয়ার হইয়া বিদেশে যাইব। আমারে কইছিল, 'মাগো, তোমারে বিদেশে নিয়া গিয়া চিকিৎসা করামু।' আমার ইঞ্জিনিয়ার পুতে গেল কই? আমারে কে বিদেশ নিয়া যাইব? আমার পোলারে আইন্যা দেও তোমরা। শান্তর লাশ দেখে স্বজন ও প্রতিবেশীরাও কাঁদতে শুরু করেন। এ সময় তারা শিউলি সাহাকে সান্ত্বনা দেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, শান্তর লাশ আনতে তারা চট্টগ্রামে যেতে চেয়েছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেয়, ময়নাতদন্ত শেষে ফ্রিজিং গাড়িতে করে তার লাশ নরসিংদীতে পৌঁছে দেওয়া হবে। কোনো অভিযোগ নেই, মামলাও করতে চান না জানিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করার অনুরোধ জানান। যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে সোমবার রাত ১০টার দিকে লাশবাহী গাড়ি নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা হয়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে লাশ নরসিংদী শহরের এসে পৌঁছে। লাশ নিয়ে এসেছেন শান্তর হলের দুই সহকারী প্রভোস্ট মাসুম রানা ও সামিউন বশির এবং সাতজন সহপাঠী।

শান্তর স্কুলজীবনের বন্ধু সৈকত শাহরিয়ারও পড়েন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। সব সময় একসঙ্গে থাকতেন, লাশ নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে নরসিংদীতে আসা দলে তিনিও ছিলেন। সৈকত শাহরিয়ার জানান, ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু হলের চারতলার একটি কক্ষে থাকতেন শান্ত। সম্প্রতি ছুটিতে বাড়িতে এসে মোটর সাইকেল চালানো শিখছিলেন তিনি। ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরার পরদিন (গতকাল) বিভাগে দুটি ক্লাস হয়। দুপুরে তার হলের এক বড় ভাইয়ের মোটর সাইকেলটি চেয়ে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল বিভাগের দুই ছোট ভাই। ফেরার পথে মোটর সাইকেলটিকে ধাক্কা দেয় একটি বাস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে