ফিনিক্স পাখি যেমন পুড়িয়ে ফেলার পরও ভস্ম থেকে জেগে ওঠে, আওয়ামী লীগও সেভাবে জেগে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশের মানুষের সব অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে। আওয়ামী লীগের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। খন্ড-বিখন্ড করা হয়েছে। বারবার এ দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হয়েছে। সেই আইয়ুব খানের মার্শাল ল থেকে শুরু, তবু এ সংগঠনের কেউ ক্ষতি করতে পারেনি।
আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় জনগণকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়ে এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
আওয়ামী লীগের পদক্ষেপের কারণেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, 'পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দেড় বছরের মাথায় ১৯৪৯ সালের আজকের দিনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আওয়ামী মুসলিম লীগ। ছয় বছর পর দলের নাম পাল্টে করা হয় আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার পর ৫০-এর দশকেই বাঙালির অধিকার আদায়ের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে দলটি। পরে ৬০-এর দশকে নানা ঘটনাপ্রবাহ শেষে ১৯৭১ সালে এ দলের নেতৃত্বেই হয় মুক্তিযুদ্ধ, আত্মপ্রকাশ ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন, জনগণের অধিকার আদায়ের সংগঠন, জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি করার সংগঠন। কাজেই বারবার আঘাত এলেও এ সংগঠনের কেউ ক্ষতি করতে পারেনি। ফিনিক্স পাখির মতো, যেমন পুড়িয়ে
\হফেলার পরও ভস্ম থেকে জেগে উঠে, আওয়ামী লীগও সেভাবে জেগে উঠেছে।'
তিনি বলেন, 'খুব বেশি দিনের কথা নয়, ২০০৭ সালে চেষ্টা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে কিংস পার্টি গড়ে তুলবে, সেটাও সফল হয়নি। কারণ আওয়ামী লীগের মূল শক্তি হচ্ছে দেশের জনগণ, তৃণমূলের মানুষ, আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মী, মুজিব আদর্শের সৈনিক। এ সৈনিকরা কখনও পরাজয় মানে না; মাথা নত করে না।'
সাবেক নেতাদের ভুলের বিষয়ে দলের সভাপতি বলেন, 'হয়তো কখনও কখনও কোনো নেতা ভুল করেছেন, কেউ মনে করেছেন আওয়ামী লীগে থাকলে তারাই বড় নেতা, দলের চেয়েও নিজেকে বড় মনে করে দল ছেড়েছেন, দল ছেড়ে অন্য দল করেছেন। কেউ দল ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু ভুল করেছেন। কেন? আপনারা দেখেন আকাশে মিটিমিটি তারা জ্বলে। তারা আলোকিত হয় সূর্যের দ্বারা। যেসব নেতা ভুল করেছিলেন, তারা ভুলে গিয়েছিলেন তারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন বলেই আলোকিত ছিলেন। এখান থেকে চলে যাওয়ার পর তারা আর জ্বলেননি, আস্তে আস্তে মিইয়ে গেছেন।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'আওয়ামী লীগ ছাড়া যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা সন্ত্রাসবাদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, দুর্নীতি করেছে। তারা জনগণের শক্তি ভুলে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। এ দল দেশের মানুষকে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা অবশ্যই দেবে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছেই তো বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। যা আমরা প্রমাণ করেছি। '৭৫-এর আগস্টের পর বারবার ক্ষমতা বদল হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতা বদল হয়েছে অস্ত্রের মাধ্যমে এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না, মানুষের মৌলিক অধিকার ছিল না। মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তনই তারা করতে পারেনি।'
দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এবার তিন দিনের আয়োজন রাখে আওয়ামী লীগ, যার সবশেষ ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই জনসভা। এর প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয় 'গৌরবময় পথ চলার ৭৫ বছরে আওয়ামী লীগ, সংগ্রাম সংকল্প সতত শপথে জনগণের সাথে।'
বিকালে জনসভা শুরু হলেও বেলা ১১টার দিকেই উদ্যানের ফটকগুলো খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে মূল দল ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উদ্যানে জড়ো হতে শুরু করেন।
বিকাল সাড়ে ৩টার পর পর সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছান বঙ্গবন্ধুকন্যা। মঞ্চে উঠার পূর্ব মুহূর্তে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তিনি; দলীয় পতাকা তোলেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পায়রাও অবমুক্ত করেন শেখ হাসিনা। পৌনে ৪টার দিকে মঞ্চে বসেন তিনি। এরপর মঞ্চের ডান পাশে নির্ধারিত স্থানে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর থিম সং এবং দেশাত্মবোধক নানা গান ও নাচ পরিবেশন করেন।
এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের। সভাপতির বক্তব্য দিতে শেখ হাসিনা মাইকের সামনে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সেস্নাগানে মুখর হয়ে ওঠে। তিনি নিজেও সেস্নাগান দেন। সভা মঞ্চ থেকে সামনের দিকে প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী বসার ব্যবস্থা থাকলেও পুরো উদ্যান ঘিরেই ছিল নেতাকর্মীর ঢল। অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে 'সবুজ ধরিত্রী' নামে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
মঞ্চে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোশাররফ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, সিমিন হোসেন রিমি, এ এইচ এম খায়রুজাজামান লিটন, সৈয়দা জেবুন্নেছা হক উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
আওয়ামী লীগের পস্নাটিনাম জয়ন্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকাল ৭টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।
এর আগে সূর্যোদয়ের সময় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
চলার পথে প্রধান বাধা বর্ণচোরা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
এদিকে, আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের চলার পথে প্রধান বাধা বর্ণচোরা বিএনপি। বর্ণচোরা বিএনপির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করাই আওয়ামী লীগের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ।'
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, অঙ্গীকার ও শপথ সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সৃষ্টি হয়েছিল জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগ এই দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এক কথায় বলতে পারি, সংগ্রাম, সাফল্য ও সংস্কৃতির বর্ণিল নাম আওয়ামী লীগ।'
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'দুটি পর্বে আমাদের এই সংগ্রাম, আন্দোলন, অর্জন, উন্নয়নকে যদি ভাগ করি একটি অংশে স্বাধীনতা। স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নেতা কেন্দ্রাতীত শক্তি হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পলাশীতে যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল ১৯৪৯ সালে সে সূর্য আবার উদিত হয়েছিল। উদিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, অঙ্গীকার ও শপথকে সামনে রেখে।'
তিনি বলেন, 'জনগণের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়ে প্রতিরোধের দাবানল ছড়িয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমরা মৃতু্যর মিছিলে দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গাই। আমরা ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সৃষ্টির পতাকা ওড়াই।'
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'সংগ্রাম, আন্দোলন, মুক্তি- সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার হাতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এরপর একাত্তরের ৭ মার্চ যা বলেছিলেন, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' স্বাধীনতা বিজয়ী আমরা হয়েছি কিন্তু আমাদের মুক্তির স্বপ্ন তখনও বাস্তবায়িত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তির যে সংগ্রাম তা ব্যাহত হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধকে জিয়াউর রহমান নিঃশেষ করে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, স্বাধীনতার আদর্শ সবকিছুই আঘাতে আঘাতে জর্জরিত। ঐতিহাসিক ৭ জুন ছিল না, ৭ মার্চ ছিল না। বঙ্গবন্ধু ছিলেন নিষিদ্ধ। জয়বাংলা ছিল নিষিদ্ধ। তখন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ঘুরে বেড়াত বুক ফুলিয়ে জিয়াউর রহমানের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে। কারাগারে চার নেতার হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন জিয়াউর রহমান।'
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'জিয়াউর রহমানের পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, এরশাদের পর বেগম খালেদা জিয়া, একুশ বছর ধরে আমরা অন্ধকারে ছিলাম। একুশ বছর ধরে আমাদের গণতন্ত্র ছিল নির্বাসনে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। বিজয় ও স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বিজয়ের নায়ক, স্বাধীনতার স্থপতিকে বাদ দিয়ে উদযাপন করা হতো।'
তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর হত্যার ছয় বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অন্ধকারে আশার আলো হয়ে এসেছিল। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন বলেই গণতন্ত্র শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছে। তিনি এসেছিলেন বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনরুত্থান হয়েছে। গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল স্বাধীনতার আদর্শের প্রত্যাবর্তন।'
সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, 'শেখ হাসিনার অর্জন, বাংলাদেশের জন্য সারা পৃথিবীতে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছেন। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বব্যাংক'কে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন আমরাও পারি। আমাদের সামর্থ্যের প্রতীক, আমাদের সক্ষমতার প্রতীক এই পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করেছেন। ঢাকায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, স্যাটেলাইট, ৬৮ বছরের সীমান্ত সমস্যা, ছিটমহল সমস্যার সমাধান এসব অর্জন বঙ্গবন্ধু কন্যার।'
আওয়ামী লীগের ৭৫ বছরে অর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমাদের অর্জনের কথা আমরা বলব না। ৭৫ বছরে আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে, আমরা আমাদের রক্তের মূল্যে অর্জিত বিজয়কে সুসংহত করব। আমাদের চলার পথে প্রধান বাধা বিএনপি, মুক্তিযুদ্ধের নামে এরা ভাওতাবাজি করে। সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী শক্তি আমাদের অভিন্ন শত্রম্ন। এই অভিন্ন শত্রম্ন বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আমাদের আজ শপথ এই অভিন্ন শক্তিকে পরাজিত করতে হবে। পরাভূত করতে হবে। আমাদের বিজয়কে আমরা সুসংহত করব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার অভিমুখে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ করব।'
প্রধানমন্ত্রীর দিলিস্নর সফর নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী যা নিয়ে এসেছেন, সেটা নিয়ে এখনো বিশ্লেষণ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী দিলিস্নস্ন গিয়ে গঙ্গার পানির কথা ভুলে যাননি। বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে যা বলা দরকার, কোনো কিছু বলতে সংকোচ করেননি। ভুলে যাননি।'
বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ
গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছে।
রোববার বেলা ১১টার দিকে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, 'বিশ্বে এমন রাজনৈতিক দল খুব কম আছে, যাদের সৌভাগ্য হয় জনগণের ভালোবাসা নিয়ে ৭৫ বছর ধরে জনগণের সেবা করা। আমাদের লক্ষ্য এখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার।'
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, 'উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য আমাদের, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্যই হলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়া।'
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানের নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। পরে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন নেতারা।
এরপর কেন্দ্রীয় যুবলীগ, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আব্দুলস্নাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জি এম সাহাব উদ্দিন আজমসহ দলীয় নেতাকর্মী ছিলেন।
১০ হাজার কর্মী নিয়ে দলের পস্নাটিনাম জয়ন্তীতে যোগ দেন এমপি খসরু চৌধুরী
তুরাগ (উত্তরা) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা ১৮ আসনের সংসদ সদস্য মো. খসরু চৌধুরী দলের 'পস্নাটিনাম জয়ন্তী' অনুষ্ঠানে ১০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী নিয়ে যোগ দেন। রোববার সকালে লাল রঙের টি-শার্ট পরে এবং লাল ক্যাপ মাথায় দিয়ে নেতাকর্মী ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় হাজির হন।
সংসদ সদস্য মো. খসরু চৌধুরী সমাবেশে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, 'স্বাধীন বাংলাদেশের অভু্যদয় ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগের উদ্যোগেই মাতৃভাষা বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষার আনুষ্ঠানিক মর্যাদা লাভ করে। আইয়ুব খানের স্বৈরশাসন-বিরোধী আন্দোলন, '৬২ ও '৬৪-এর শিক্ষা আন্দোলন, '৬৪-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ, '৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬-দফা আন্দোলন, '৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, '৬৯-এর গণ-অভু্যত্থান, ৬-দফাভিত্তিক '৭০-এর নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অভু্যদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।'
তিনি আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগের ইতিহাস, বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল অর্জন ও সংগ্রামের ইতিহাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ বাঙালি জাতির যা কিছু শ্রেষ্ঠ অর্জন, দেশের উন্নয়নের পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগের অবদান। জাতির পিতার স্বপ্ন, আদর্শ পুঁজি করেই তার উত্তরসূরির নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। শতভাগ বিদু্যৎ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিল্পায়ন, গৃহায়ন, নগরায়ণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, দারিদ্র্যবিমোচন, দুর্যোগ প্রশমনে বদলে গেছে দেশের চেহারা। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক সূচকে অগ্রগতি, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রো রেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পের অগ্রগতিতে এগিয়ে চলেছে দেশ।