যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প লবিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর 'বর্বর আক্রমণের' অভিযোগ এনেছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তার দাবি, দেশটিতে ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন, তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কে 'কোনো প্রভাব পড়বে না।'
শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে 'মার্কিন নির্বাচনের প্রভাব' বিষয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত 'ছায়া সংসদে' তিনি এ কথা বলেন। বিতর্কের বিষয় ছিল, 'আগামী মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না।'
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, 'বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যটি সম্পূর্ণ 'ডমিস্টিক পলিটিক্যাল ইসু্য'। লবিস্টরা হয়তো এ বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে।'
বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়নি বলে দাবি করে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ইউনিটি কাউন্সিল ৯ জন সংখ্যালঘু মারা যাওয়ার বিষয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় এখানে ধর্মীয় বিষয়ের চেয়ে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বা অন্য কোনো কারণ ছিল।'
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন বাংলাদেশে হঠাৎ বাড়তি নজর কেড়েছে গত ৩১ অক্টোবর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক প্রতিক্রিয়ায়।
সরকার পতনের পর বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের অভিযোগের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কড়া প্রতিক্রিয়া জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সরকার পতনের পর বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের অভিযোগের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কড়া প্রতিক্রিয়া জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সেদিন মাইক্রোবস্নগিং সাইট এক্স-এ পোস্ট করে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর 'বর্বর সহিংসতা'র অভিযোগ আনেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার বেশকিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। হিন্দু সম্প্রদায় তখন থেকেই ধারাবাহিক বিক্ষোভ চালিয়ে আসছে, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগকে 'অতিরঞ্জিত' বলে দাবি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে মানবাধিকার বিষয়ে গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র নানা বক্তব্য দিয়ে এলেও এসব ঘটনায় তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি দেশটির পক্ষ থেকে। তবে ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল বেশ কড়া।
তিনি লেখেন, 'আমি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান এবং অন্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে 'বর্বর সহিংসতার' তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, যারা উচ্ছৃঙ্খল জনতা দ্বারা আক্রমণ ও লুটপাটের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি বিশৃঙ্খল।'
নিজে ক্ষমতায় থাকলে এমন ঘটনা ঘটত না বলে দাবি করে ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমালোচনা করেন তিনি।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, 'আমার চোখের সামনে কখনই ঘটত না। সারা বিশ্বে ও আমেরিকায় হিন্দুদের অবহেলা করেছেন কমলা ও জো বাইডেন।'
এদিকে, 'যুক্তরাষ্ট্রে দুই দলের সঙ্গেই ইউনূসের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ' ট্রাম্প যে মন্তব্যই করুন না কেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে যেই জিতুন না কেন, দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখছেন না প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, 'প্রফেসর ইউনূসের (প্রধান উপদেষ্টা) সঙ্গে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিক দুই পার্টিরই সিনিয়র লিডারদের খুব ভালো সম্পর্ক। তার বন্ধু দুটি দলের মধ্যেই আছে।'
রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অনেকখানি 'ব্যক্তিগত অ্যাটাচমেন্টের' ওপর নির্ভর করে দাবি করে শফিকুল বলেন, 'ড. ইউনুস একজন গেস্নাবাল লিডার। তাই মার্কিন নির্বাচনে কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প যে-ই জয়ী হোক না কেন আমাদের সম্পর্কের কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না।'
ভারতের সঙ্গেও সরকারের সম্পর্ক 'ভালো' দাবি করে শফিক বলেন, 'আমরা চাচ্ছি তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব গণঅভু্যত্থান হয়েছে তাতে আমরা সারাবিশ্বের সাপোর্ট পেয়েছি। পতিত 'স্বৈরাচার সরকারের' সঙ্গে ইন্ডিয়া থাকা সত্ত্বেও তা কোনো কাজে আসেনি। জনগণ জেগে উঠলে কোনো 'অপশক্তিই' টেকে না।'
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ছায়া সংসদে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকদের হারিয়ে বিজয়ী হয় স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকরা।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, একেএম মাজহারুল ইসলাম, সাংবাদিক নুরুল ইসলাম হাসিব, আশিকুর রহমান অপু ও আতিকুর রহমান।
জবাব দিলেন মুশফিকুল
ফজল আনসারীও
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইট পোস্টের জবাব দিয়েছেন সদ্য রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার টুইটে মুশফিকুল ফজল আনসারী লিখেছেন, 'ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্য, তা সংখ্যালঘুরা বিশ্বের যেখানেই হোন কিংবা যে ধর্মেরই। তবে প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝতে সঠিক তথ্য যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। আজই সুইডেন-ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা @ঘবঃৎধঘবংি একটি ফ্যাক্ট-চেক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচারিত তথ্যের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছে।'
ওই পোস্টে রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী নেত্র নিউজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের লিংক জুড়ে দেন। আক্রান্তদের যথাযথ সহায়তা প্রদান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সঠিক তথ্য নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ বলে উলেস্নখ করেন তিনি।
সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় আলোচিত সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২১ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।#
বাংলাদেশ প্রতিদিন