বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যা

বিক্ষোভ-প্রতিবাদে উত্তাল দেশ

সোমবার চট্টগ্রামে ভারতীয় মিশন অভিমুখে যাত্রার ঘোষণা হেফাজতের চিন্ময়সহ ইসকনের ১৭ সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ পরিবারের জন্য কোটি টাকার তহবিল
যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা -যাযাদি

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদ ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে। এদিন জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন হেফাজত অনুসারীরা। এছাড়া ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতিবিদদের 'বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার' বন্ধের দাবিতে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অভিমুখে যাত্রা ও স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।

এদিকে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ইসকনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৭ জনের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন ৩০ দিন স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আলিফ হত্যায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে গ্রেপ্তার আসামির সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩৮।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক।

তিনি বলেন, 'হেফাজতে ইসলাম আহ্বান জানাচ্ছে, আলিফের হত্যাকান্ড আমাদের স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে রক্তের হোলি খেলা। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র। কাজেই তাদের এই ষড়যন্ত্রের পাতা ফাঁদে আমরা পা দেব না। আমরা কোনোভাই সহিংস কোনো কর্মসূচি পালন করব না। শান্তিপূর্ণভাবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় আমরা তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলব। শান্তি হবে আমাদের হাতিয়ার, ধৈর্য হবে আমাদের সৌন্দর্য। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা ধৈর্য ধারণ করব।'

মামুনুল হক বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলতে চাই, এটা স্পষ্ট যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ভিনদেশি গুপ্তচর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল। সে তার প্রভুর দেশে গিয়ে সেখান থেকে নির্দেশনা নিয়ে এসে বাংলাদেশের ভেতরে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা চালিয়েছে। দিনের পর দিন আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে ভারত ও আওয়ামী লীগ ইসকনকে তৈরি করেছে। এই ইসকনকে নিষিদ্ধ করে আওয়ামী লীগ ও ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে যে, বাংলাদেশ তোমাদের ষড়যন্ত্রের কাছে মাথানত করবে না। আমরা রক্ত দেব, জীবন দেব, লড়াই করব, বাংলাদেশের গৌরব রক্ষা করব।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা ভারত রাষ্ট্রটির বাংলাদেশ নীতির তীব্র সমালোচনা করে বলতে চাই- তোমরা বাংলাদেশ নীতি পরিবর্তন কর। নাহলে বাংলাদেশের মানুষ তোমাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নামবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য এদেশের মানুষকে নামতে হবে।'

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'চিন্ময় দাশকে ভালোভাবে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাংলাদেশবিরোধী তথ্যগুলো আপনারা উদঘাটন করুন। শেখ হাসিনা তাকে কত টাকা দিয়ে তার বাহিনীকে দেশের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে সে তথ্য উদঘাটন করুন। ভারত তাকে (চিন্ময়) কী মন্ত্র দিয়ে বারবার পাঠাচ্ছে সেই তথ্যগুলো উদঘাটন করে বাংলাদেশ বিরোধী অপশক্তির সকল তথ্য উন্মোচন করুন।'

ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশেই বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ হয়েছে। বায়তুল মোকাররমের গেটে হেফাজতের বিক্ষোভ-সমাবেশে সংগঠনটির ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রামে ভারতীয় মিশন অভিমুখে যাত্রার ঘোষণা হেফাজতের

এদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতিবিদদের 'বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার' বন্ধের দাবিতে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অভিমুখে যাত্রা ও স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।

শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শেষে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে ইসকনকে নিষিদ্ধ ও হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যের শেষ দিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার বলেন, 'আমাদেরকে সমস্যার গোড়া চিহ্নিত করতে হবে। যেহেতু ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, ভারত বাংলাদেশে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। সেজন্য আমাদের হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রামের ও কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ঘোষণা দিচ্ছি, আগামী সোমবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশের চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অভিমুখে আমাদের লং মার্চ হবে ইনশালস্নাহ।

তিনি বলেন, 'উনাদেরকে বলে দিতে চাই, আমাদের সেই সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে। ওই সমাবেশে আপনারা কোনো রকমের বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন না। এবং বাংলাদেশে কোনো হিন্দুর গায়ে আমাদের পক্ষ থেকে টোকাও পড়বে না। আমরা ভারতীয় মিশনে কোনো একটা পাটকেলও নিক্ষেপ করব না।'

সমাবেশে হারুন ইজহার বলেন, 'আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে, বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে ইনফরমেশন দিয়ে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যারা রয়েছেন এবং সমন্বয়কারী ছাত্র যারা রয়েছেন, সবাইকে জানিয়ে দেব, ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে শান্তিপূর্ণ যাত্রা করব। এবং শান্তিপূর্ণ দূরত্ব অবস্থানে থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা সেখানে নিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করবে।'

কর্মসূচি বিষয়ে জানতে চাইলে মুফতি হারুন ইজহার বলেন, 'আমরা স্মারকলিপি দেব। ভারতীয় মিডিয়া এবং তাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার করছে। সে বিষয়ে ভারত সরকারকে আমরা অবগত করতে চাই। দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার মতো কোনো কাজ যেন তাদের দেশের মিডিয়া ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে করা না হয়। বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য যেন তারা বন্ধ করে। কূটনৈতিক মানদন্ড যেন বজায় রাখে। ভারত সরকারকে সেটা অবহিত করতে চাই।'

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস বলেন, সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার পক্ষ থেকে সোমবারের এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

দুপুরে নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বিক্ষোভ মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মুফতি হারুন ইজহার বলেন, 'ইতোমধ্যে হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তারা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ ইসলামপন্থি বিভিন্ন দল, সংগঠন এবং নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তারা বসতে চায়। স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, এটি একটি চক্রান্ত। শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটি থেকে বিদায় করার পর এদেশের বেশিরভাগ হিন্দুত্ববাদী সংগঠন, শুধু একটি দু'টি সংগঠন ব্যতীত প্রায় সব সংগঠন ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে।'

তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে তাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন তাদের শাস্তির আওতায় আনল, তখন তারা নতুন বয়ান তৈরি করে। তাদের কিছু লোক বলতে লাগল, তোমরা সরকারের সঙ্গে এবং আলেম ওলামাদের সঙ্গে তোমরা ডায়লগ কর।'

তিনি বলেন, 'আমি স্পষ্টভাবে ইসকন এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদসহ সব হিন্দু সংগঠনকে বলে দিতে চাই, তিনটি শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আগামীতে হিন্দুত্ববাদী কোনো সংগঠনের সঙ্গে আমরা আর আলাপে বসতে রাজি নই।'

মুফতি হারুন ইজহার বলেন, 'এখন যদি কোনো হিন্দু সংগঠন ডায়ালগে বসতে চায়, এক নম্বর শর্ত হলো- এ সমস্ত হিন্দু সংগঠনগুলোকে ভারতে সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। দুই নম্বর শর্ত হলো- বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের যে সমস্ত ভুয়া প্রপাগান্ডা হয়েছে সেসবের ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'আমার তিন নম্বর শর্ত হলো- আপনাদের বিভিন্ন সংগঠনে ঘাপটি মেরে থাকা যেসব সন্ত্রাসী, গুন্ডা ও জঙ্গিবাদী রয়েছে, সবাইকে আপনাদের তত্ত্বাবধানে, আপনাদের সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আওতায় তাদেরকে হস্তান্তর করতে হবে।'

'এ তিনটি শর্ত পূরণ না হলে আমরা কোনো হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে ডায়লগে বসব না। এবং কোনো ইসলামী দল-সংগঠন যদি ডায়ালগে বসে, তারা মোনাফেক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।'

চিন্ময়সহ ইসকনের ১৭ সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ

এদিকে, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৭ জনের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন ৩০ দিন স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বৃহস্পতিবার এসব ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিতের এ নির্দেশনা দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়েছে।

এ নির্দেশনার ফলে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৭ জনের ব্যাংক হিসাবে সব ধরনের লেনদেন ৩০ দিন স্থগিত থাকছে। যাদের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে, তারা হলেন চন্দন কুমার ধর ওরফে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, কার্ত্তিক চন্দ্র দে, অনিক পাল, সরোজ রায়, সুশান্ত দাস, বিশ্ব কুমার সিংহ, চন্ডীদাস বালা, জয়দেব কর্মকার, লিপি রানী কর্মকার, সুধামা গৌর দাস, লক্ষণ কান্তি দাশ, প্রিয়তোষ দাশ, রূপন দাস, রূপন কুমার ধর, আশীষ পুরোহিত, জগদীশ চন্দ্র অধিকারী ও সজল দাস।

বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ২৩(১)(গ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ইসকন ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত হিসাবের (আমদানি ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের হিসাব ব্যতীত) লেনদেন ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করার নির্দেশনা দেওয়া হলো। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত সব হিসাবের হিসাব-সংক্রান্ত তথ্য, যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ফরম, শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী প্রভৃতি আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাতে বলেছে বিএফআইইউ।

আরও তিনজন গ্রেপ্তার :এদিকে, চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- বাবলা ধর, সজল শীল ও দুর্লভ দাস। বৃহস্পতিবার রাতে নগরের কোতোয়ালি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারকৃত তিনজনের মধ্যে দুর্লভ দাস আইনজীবী হত্যার ঘটনার সময় ধারালো অস্ত্র হাতে ছিলেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী শুক্রবার দুপুরে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন আইনজীবী হত্যায় অংশ নিয়েছিলেন। ঘটনার সময় তার হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে গ্রেপ্তার আসামির সংখ্যা দাঁড়াল ৩৮। এর মধ্যে হত্যায় জড়িত ছিলেন ৯ জন।

পরিবারের জন্য কোটি টাকার তহবিল

এদিকে, শহীদ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের পরিবারের জন্য ধর্ম উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে কোটি টাকার তহবিল গড়ে তোলা হচ্ছে। এ তহবিল সংগ্রহের দায়িত্বে আছে মানবিক সংগঠন আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার পানত্রিশা গ্রামে শহীদ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত ও মোনাজাত শেষে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

উলেস্নখ্য, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন মানবিক সংগঠন আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, প্রতিশ্রম্নতিশীল তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ আইনের শাসন, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দেশ ও জাতিকে অনেক কিছু দিতে পারতেন। কিন্তু তাকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই জঘন্য হত্যাকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধীদের প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সেই সঙ্গে তিনি এই নৃশংস হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানান।

উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যপূর্ণ একটি রাষ্ট্র। এই সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য বিনষ্ট করতে দেশি-বিদেশি নানা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী চক্রান্ত চালাচ্ছে। একটি বৈষম্যহীন দেশ গঠনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে অপচেষ্টা চলছে। কোনোভাবেই এই চক্রান্তের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।

তিনি এ সময় দেশবাসীকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষায় সহনশীল ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।

দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, 'দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। তবে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের কিছু করতে পারবে না।'

পরে উপদেষ্টাদ্বয় শহীদ আইনজীবী সাইফুল ইসলামের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শেষে ধর্ম উপদেষ্টা হত্যাকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণ, চিকিৎসা ও পড়ালেখার জন্য শহীদ সাইফুলের পিতার হাতে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে এক কোটি টাকা সহায়তা প্রতিশ্রম্নতির অংশ হিসেবে নগদ এক লাখ টাকা, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে ৫ লাখ টাকার চেক এবং আল-মানাহিল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আরও এক লাখ টাকা তুলে দেন। এ সময় লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইনামুল হাসানসহ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে