সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
হালনাগাদ খসড়া প্রকাশ

ভোটার বাড়ল ১৮ লাখের বেশি

দেশের মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৬ লাখ ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ভোটার বাড়ল ১৮ লাখের বেশি
ভোটার বাড়ল ১৮ লাখের বেশি

হালনাগাদের পর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন, যাতে যুক্ত হয়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ জন নতুন ভোটারের নাম। নতুন ভোটারদের নিয়ে দেশে এখন ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জনে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের তথ্য জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউলস্নাহ বলেন, দাবি ও আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে আগামী বছরের ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।

1

হালনাগাদ খসড়া তালিকা অনুযায়ী, এখন দেশে মোট পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ১০৩ জন। নারী ভোটার ৬ কোটি ৩ লাখ ৫২ হাজার ৪১৫ জন। হিজড়া পরিচয়ে ভোটার আছেন ৯৯৪।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, হালনাগাদ তালিকা নিয়ে কারও কোনো দাবি-আপত্তি থাকলে ১৭ জানুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে আবেদন করা যাবে। দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে আগামী ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।

সবশেষ গতবছর ২ মার্চ প্রকাশিক চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ভোটার ছিল ১২ কোটি ১৮ লাখের বেশি। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি যারা ভোটার হওয়ারযোগ্য হয়েছেন, এ বছরের হালনাগাদে তারা যুক্ত হলেন।

ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চূড়ান্ত হওয়ার পর বাদ পড়া ও ভোটারযোগ্যদের তালিকাভুক্ত করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন তথ্য নেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। ৩০ জুনের মধ্যে এ কাজ শেষ করা হবে।

এবারের হালনাগাদে দেখা গেছে, নারীদের তুলনায় পুরুষ ভোটার প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এবার নারী ভোটারের তুলনায় পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৭৪২ জন বেশি।

নির্বাচন কমিশন জানায়, গত বছরের ২ মার্চ মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ছিলেন ৬ কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ জন এবং নারী ভোটার ছিলেন ৫ কোটি ৯৭ লাখ ০৪ হাজার ৬৪১ জন। এছাড়া হিজড়া ভোটার ছিল ৯৩২ জন।

এর ফলে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জনে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ১০৩ জন, নারী ভোটার ৬ কোটি ৩ লাখ ৫২ হাজার ৪১৫ জন ও হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ৯৯৪ জন। মোট ভোটার বৃদ্ধির হার ১.৫০ শতাংশ বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউলস্নাহ বলেন, দাবি আপত্তি-নিষ্পত্তি শেষে আগামী ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এই সময়ের মধ্যে কারও কোনো দাবি বা আপত্তি থাকলে তা জানাতে পারবেন। দাবি আপত্তি জানানোর শেষ সময় ১৭ জানুয়ারি।

তিনি বলেন, 'আইন অনুযায়ী চলতি বছর হালনাগাদের যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তা অন্তর্ভুক্ত করে হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী বছরের ২ জানুয়ারি। আর চূড়ান্ত তালিকা হবে আগামী বছরের ২ মার্চ।'

তিনি আরও বলেন, 'যদি এর আগে জাতীয় নির্বাচন হয়, প্রয়োজন হলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।'

আবুল ফজল মো. সানাউলস্নাহ জানান, মোট ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ জন নতুন ভোটার এবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এবারের হালনাগাদে ভোটার বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫০।

বিভিন্ন টকশোতে বলা হচ্ছে ভোটার তালিকা সঠিক নয়। বৃহস্পতিবার যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করলেন তা সঠিক কি না-জানতে চাইলে ইসি আবুল ফজল বলেন, বিতর্কিত ভোটার তালিকা আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় দেখেছি। আপনারা আলোচনা করেছেন এবং আমাদের সাধারণ মানুষদের মাঝেও এ ধরনের একটা পারসেপশন আছে। আমাদের বাড়ি বাড়ি যাচাই করতে যাওয়ার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো এটি।

তিনি বলেন, এ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর শুদ্ধ ভোটার তালিকা ছাড়া কনফিডেন্ট মনে করছি না। এজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই করা। আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, ভোটার তালিকাকে যে বিতর্কিত বলছি, আমরা শুদ্ধতার অভাব বলছি, এটি মূলত তিনটি কারণে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রথম কারণ্ত মৃত ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ না পড়া। দ্বিতীয়ত দ্বৈত ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আর তৃতীয়ত বিদেশি নাগরিক প্রতারণার মাধ্যমে তালিকা ভুক্ত হয়েছেন কি না। সম্প্রতি আমরা একাধিক এমন ইনসিডেন্ট পেয়েছি।

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, চট্টগ্রাম এলাকায় রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারেন, সেজন্য একটা বিশাল ব্যবস্থাপনা আছে এবং ওই এলাকাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করে সেখানে আলাদাভাবে ভোটার তালিকাভুক্ত করা হয়। এ কড়াকড়ি থেকে বাঁচতে ৩০ জন রোহিঙ্গা নীলফামারী সদরে গিয়ে ভোটার হয়েছেন। এগুলোর প্রমাণ আমাদের সামনে আছে। এভাবে আমাদের ভোটার তালিকা বিতর্কিত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ করতে যান, সেখানে স্থানীয় কোনো ব্যক্তি আমাদের সহায়তা করেন, সেখানে দেখা যায় নিজের ভোটার যারা আছে তাদের বয়স বাড়িয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেন। আবার দেখা যায় অন্য কারো ১৮-১৯ বছর হলেও ভোটার তালিকাভুক্ত হতে দেন না।

তিনি আরও বলেন, এর বাইরেও আরও অনেক ধরনের কারণ আছে। তবে এগুলো মূল। আমরা এবার সেভাবে সেনসিটাইজ (সংবেদনশীল করা) করছি। ইতোমধ্যে আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। ইতোমধ্যে আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার দুটো বিভাগ পরিদর্শন করেছেন। আমরা কমিশনাররাও পরিদর্শনে বের হব। আমাদের ডিজি এনআইডিসহ আমাদের সচিবালয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও মাঠ পর্যায়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি কমিশন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। আশা করছি আমরা একটা সন্তুষ্টির জায়গায় পৌঁছাতে পারব ভোটার তালিকার বিষয়টি নিয়ে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে ওভারল্যাপিং হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তা মনে করছি না। কারণ সংস্কার কমিশন যে সংস্কার প্রস্তাব দিক না কেন ভোটার তালিকা তো একটা লাগবে। ভোটার তালিকা ছাড়া তো আর ভোট হবে না। আমরা মনে করি না যে ভোটার তালিকা রিলেটেড আমরা কোনো সমস্যা ফেস করব।

নির্বাচন কমিশনের মাঠ কার্যালয়গুলোতে প্রচুর ভোগান্তি হয়। এ পর্যন্ত এ ভোগান্তি নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে এনআইডি সেবায় যথেষ্ট ভোগান্তি হচ্ছে আমরা দেখছি। আমরা চিহ্নিত করেছি প্রায় চার লাখের কাছাকাছি, তিন লাখ ৭৮ হাজার আবেদন পেন্ডিং ছিল। আমরা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি এবং আমাদের সচিবালয় থেকে আমাদের সচিব, ডিজি এনআইডিসহ সবাই ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছেন। যাতে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে নাগরিকরা তাদের বৈধ সেবাটা পান। তবে এ কথাও সত্য এসব আবেদনের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য আবেদন রয়েছে, যারা প্রতারণার আশ্রয় নিতে চাচ্ছেন বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান। তাদের জন্য যাতে নাগরিকেরা ভোগান্তিতে না পড়েন এজন্য আমরা আরও ভালো পদ্ধতি নিতে যাচ্ছি।

২০ তারিখ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হালনাগাদ করার এ কার্যক্রম কতদিন চলব্তে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যদি ভালোভাবে কাজ করতে পারি তাহলে ৩০ জুনের মধ্যে আমরা এটি সম্পন্ন করতে পারব।

ডিসেম্বরের শেষে যদি সংসদ নির্বাচন হয় তাহলে আপনারা যাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার করছেন তারা কি নির্বাচন ভোট দিতে পারবেন কি না এবং আইন সংশোধন করে তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন কি না্ত এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি আবুল ফজল বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে বলেছেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন তিনি আশা করছেন। আমাদের নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা সবসময় প্রস্তুত।

তিনি বলেন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন করাও এক ধরনের প্রস্তুতি। আমাদের এ ভোটার তালিকা সন্নিবেশ করতে আইনি কোনো জটিলতা নাই। তফসিল ঘোষণার আগে একটি তালিকা প্রকাশ হবে। সেই তালিকায় আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত করব। দ্বিতীয়ত এ বছরে যারা ভোটার হবেন অর্থাৎ ২০২৫ সালের ০২ জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ০১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান আইন অনুযায়ী ভোটার নিবন্ধন আইনের ধারা ৩(জ) অনুযায়ী যোগ্যতার তারিখ হলো প্রতি বছরের ০১ জানুয়ারি। একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করেছি যে উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক তরুণ ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়ে গিয়েছেন ভোটের আগে, তাহলে প্রয়োজনে অর্ডিন্যান্স জারি করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না। এই সম্ভাবনাটা আমরা যাচাই করে দেখব। এটা এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত নয়।

ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৭ করার বিষয়ে কমিশন কী ভাবছ্তে জানতে চাইলে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ১৭ বছর বয়সে ভোটার নিয়ে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা তার ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন। আমরা শুনেছি। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। যদি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কোনো মতৈক্য হয়, কোন সিদ্ধান্ত আসে, যদি সংবিধানে পরিবর্তন আসে, আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

আইন অনুযায়ী চলতি বছর হালনাগাদের যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তা অন্তর্ভুক্ত করে হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা করা হবে। এ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী বছরের ২ জানুয়ারি। আর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী বছরের ২ মার্চ। তবে ইসি যেকোনো সময় ভোটার তালিকা সংশোধন করতে পারে।

এ সময়ের আগে ভোট হলে হালনাগাদে যাঁদের তথ্য নেওয়া হবে, তাঁরা ভোট দিতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২ ডিসেম্বর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ভোটার তালিকা হালনাগাদে ২০২৫ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, প্রতিবছর ২ জানুয়ারি থেকে আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। ২ জানুয়ারি আগের বছরের তথ্য নিয়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করে ইসি। তালিকা নিয়ে দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে ২ মার্চ প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত তালিকা।

আইনে হালনাগাদের বাইরে ইসিকে যেকোনো সময় ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষমতাও দেওয়া আছে। কোনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়কাল ছাড়া অন্য যেকোনো সময় প্রয়োজনে তালিকা সংশোধন করতে পারে ইসি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে