৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া ২৬৭ প্রার্থীকে পুনর্বিবেচনার আবেদনের সুযোগ দিচ্ছে সরকার। আবেদন পেলে পুনরায় যাছাইবাছাই করে তাদের গেজেটভুক্ত করা হবে। এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে সাময়িকভাবে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত ২২৭ জনের মধ্যে যে কেউ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তা গ্রহণ করা হচ্ছে। পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত আছে।
৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সাময়িকভাবে ২ হাজার ১৬৩ জন প্রার্থীকে মনোনীত করে গত বছরের ২৫ জানুয়ারি সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি)। ইঈঝ জবপৎঁরঃসবহঃ জঁষবং, ১৯৮১-এর জঁষব-৪ এর বিধান মোতাবেক বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকগণের মাধ্যমে প্রার্থীগণের প্রাক-চরিত্র যাচাইবাছাইআন্তে সুপারিশকৃত ২ হাজার ১৬৩ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং এজেন্সি রিপোর্ট বিবেচনায় সাময়িকভাবে ৫৯ জনসহ মোট ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে ২ হাজার ৬৪ জন প্রার্থীর অনুকূলে ১৫ অক্টোবর নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণে এ নিয়োগের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এজন্য সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে ঈষবধহ রসধমব-এর প্রার্থী নির্ধারণে এবং সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার নিমিত্ত ৪৩তম বিসিএসের সুপারিশকৃত ২ হাজার ১৬৩ জন প্রার্থীর বিষয়ে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআই এবং ডিজিএফআইর মাধ্যমে প্রাক-চরিত্র পুনরায় অধিকতর যাচাইবাছাইয়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এনএসআই এবং ডিজিএফআই থেকে ২ হাজার ১৬৩ জন প্রার্থীর উপযুক্ততা/অনুপযুক্ততা বিষয়ে প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২২৭ জন প্রার্থীর প্রাক-চরিত্র বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য (আপত্তি/অসুপারিশকৃত) পাওয়া যায়। ২২৭ জন প্রার্থীর বিষয়ে বিরূপ মন্তব্যের কারণে সাময়িকভাবে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয় এবং তাদের বিষয়ে অধিকতর যাচাইবাছাই ও খোঁজখবর নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জনকে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয়।
এমন অবস্থায় সুপারিশকৃত ২ হাজার ১৬৩ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিবেচনায় সাময়িকভাবে অনুপযুক্ত ২২৭ জনসহ ২৬৭ জনকে বাদ দিয়ে অবশিষ্ট ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থীকে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে গত ৩০ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এর আগে, ৪৩তম বিসিএস নিয়োগ থেকে বাতিল হওয়া ২২২ জনকে ৫ জানুয়ারির মধ্যে পুনরায় গেজেটেড করে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে যোগদান নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন ্তুবঞ্চিত্থ চাকরি প্রার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। '৪৩তম বিসিএস-এর গেজেট বঞ্চিত ক্যাডার অফিসারবৃন্দ' ব্যানারে তারা এ সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন ২১৬৩ জন ২৬টি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। পরে কয়েক দফায় তদন্ত সাপেক্ষে ১৫ অক্টোবর এ সদস্যদের গেজেটভুক্ত করা হয়। গেজেট যোগদানের তারিখ ১৭ নভেম্বর নির্ধারণ করা হলেও করে তারিখ পিছিয়ে ১ জানুয়ারি নির্ধারণ করে করা হয়।
তারা জানান, দুঃখের বিষয় ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত ২য় গেজেটে ১৬৮ জনসহ সর্বমোট ২২২ জন প্রার্থীকে গেজেট থেকে বাদ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় তারা অধিকাংশ প্রার্থী চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাসুমা আক্তার সিথি বলেন, গেজেট থেকে বাদ দেওয়ায় আমাদের ২২২ জন প্রার্থী এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল পরিবার সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন, চরম হতাশাগ্রস্ত এবং দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। জুলাই বিপস্নবের পথ ধরে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য, তা পূরণে মেধা ও যোগ্যতা ভিত্তিক সিভিল সার্ভিসের বিকল্প নেই। কিন্তু আমরা সুপারিশপ্রাপ্ত এবং গেজেট প্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও পুনঃপ্রকাশিত গেজেটে অজ্ঞাত কারণে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া জুলাই বিপস্নবের স্পিরিটের পরিপন্থি।
বুধবার সচিবালয়ে অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে মাসুমা বলেন, আমরা বুধবার সচিবালয়ে গিয়েছি। সেখানকার বর্তমান নিরাপত্তার কথা আপনারা জানেন। তারা আমাদোর ৩ জন প্রার্থীকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু প্রবেশ করার পর তাদের সঙ্গে কেউ দেখা করেনি। আমরা একটি আবেদন কপি দিয়েছি। তা গ্রহণ করার ফিরতি কোনো চিঠি পাইনি। তিনি বলেন, আমাদের কারও কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই? কেউ ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গেও জড়িত নয়। তবুও আমরা জানি না, আমাদেরকে কেন বাদ দেওয়া হয়েছে। এখানেই আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।
শিক্ষা ক্যাডারে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত শাহ মোহাম্মদ রায়হান মিয়া বলেন, বিগত সরকারের আমলে আমাদের প্রথম ভ্যারিফিকেশন হয়। এ সরকারের আমলে পুনরায় ভ্যারিফিকেশন হওয়ার পর আমাদের প্রথম গ্যাজেট প্রকাশ করা হয়। সেখানে আমাদের সবাই রয়েছে। কিন্তু পরে আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ছাত্রজীবনে বা অন্য কোথাও আমার কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার নামে কোনো মামলা-মোকাদ্দমা নেই। পারিবারিক বা ব্যক্তিগতভাবে কারও সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক নেই। তবুও আমাকে কী কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে, তা অস্পষ্ট।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গেজেট থেকে বাদ পড়া আরিফ হক, নাজমুল হক স্বপন, মোহাম্মদ নাজমুস সাকিব, শরীফুল ইসলাম, সত্যজিত দাস ও হাফসা বিনতে হারিস।