বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

স্বস্তি ফেরেনি চালের বাজারে

যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
স্বস্তি ফেরেনি চালের বাজারে
রাজধানীর একটি চালের দোকানে বিভিন্ন রকম চাল সাজিয়ে রাখা হয়েছে -যাযাদি

কয়েক সপ্তাহ ধরেই ঊর্ধ্বমুখী চালের দাম। বাজারে প্রায় সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। এদিকে কর অব্যাহতির পরও প্রভাব পড়েনি চালের দামে, উল্টো বাড়ানো হয়েছে দাম। এখন বাড়তি দামেই চাল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর-১১ কাঁচাবাজার, পলস্নবীর মুসলিম বাজার, ৬ ও ১২ নম্বর কাঁচাবাজার ঘুরে এ চিত্রই দেখা গেছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম, অন্যান্য চালের দামও বাড়তি। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি মিনিকেটের দাম ছিল ৭৫ টাকা, যা বর্তমানে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেটের পর সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে নাজিরশাইল চালের দাম। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি নাজিরশাইল ছিল ৭০ থেকে ৭৮ টাকা, শুক্রবার তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৬ টাকায়।

1

দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। ২ থেকে ৫ টাকা দর বেড়ে তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। এ ছাড়া এ সময় মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা) কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকার মতো। দুই সপ্তাহ আগে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মোটা চাল কিনতে ক্রেতাদের খরচ করতে হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। এছাড়া বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি পুরোনো আটাশ ৬৫ টাকা, পাইজাম ৬০ টাকা, কাটারিভোগ ৮৫ টাকা, বাসমতী ৯৪ থেকে ৯৮ টাকা, পোলাওয়ের চাল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ও আমন ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মিরপুর-১১ নম্বর বাজারে তালুকদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ বলেন, আমনের মৌসুম। ভারত থেকেও চাল আসছে। তবু বাজার চড়া। কোনো কারণ ছাড়াই মিলাররা দর বাড়াচ্ছেন। রমজান সামনে রেখে তারা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। মিল পর্যায়ে কড়া তদারকি প্রয়োজন।

মিরপুর-৬ নম্বর বাজারে চাল ব্যবসায়ী কাউসার মিয়া বলেন, কয়দিন আগে ক্ষেত থেকে নতুন ধান উঠানো হয়েছে। ধানের দাম বাড়ছে এমন অজুহাতে মিলাররা চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছেন।

এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে চাল আমদানির ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রেখে বাকি আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে এনবিআর। তবুও আমদানি করা চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। আমদানি করা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকার ওপরে।

মুসলিম বাজারের চাল বিক্রেতা মাসুদ রহমান বলেন, কোথায় কী ভ্যাট-ট্যাক্স কমলো, সেটা তো আমরা জানি না। আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়। বেশিতেই বিক্রি করতে হয়।

চালের বাড়তি দামে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। মুসলিম বাজারে কথা হয় চাকরিজীবী এরফান হামিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজারে একটা জিনিসের দাম কমলে দুইটার দাম বাড়ে। শীতের এই সময়ে চালের দাম বাড়ার কথা না। কেননা নতুন চাল উঠছে বাজারে। তবুও কেন চড়া চালের দাম? এর কোনো উত্তর নাই।

মুরগির বাজার চড়া কমেনি মাছের দাম

এদিকে, চলতি সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোতে মুরগির দাম চড়া রয়েছে। সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। আগের সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাছ। শুক্রবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও তালতলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

রাজধানীর এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে সোনালি কক কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ৩৫০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩১০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, বাজারগুলোতে চলতি সপ্তাহে মাছের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। সব ধরনের মাছ গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসব বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১০০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১৫৫০ টাকা, এক কেজি ওজনের ১৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ১১০০ টাকায়, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কই মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রুপচাঁদা ১২০০ টাকা, বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, সোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কুড়াল মাছ ৭০০ টাকা, কাজলি মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

শীতের সবজিতে ভরপুর বাজার, দামও কমেছে

এদিকে, ফুলকপি, মুলা, শালগমসহ শীতকালীন সবজিতে ভরপুর রাজধানীর বাজার। দামও ক্রেতাদের হাতের নাগালে। সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে সবজির দাম। তবে ডিম, মাছ ও মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর-১১ কাঁচাবাজার, পলস্নবীর মুসলিম বাজার, ৬ ও ১২ নম্বর কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, সহনীয় মূল্যে বিক্রি হচ্ছে শীতের সবজি। গত সপ্তাহের ৪০ টাকা কেজি মুলা আজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, ৬০ টাকার গোল বেগুন ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৩০ টাকা থেকে ৪০, ৪০ টাকার কলার হালি ৩০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১০ টাকা কমে ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, শালগম ৪০ টাকায, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শসা ও টমেটো ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া করলা, পটোল, ঝিঙা ও ধুন্দল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, লালশাক, পালং ও কলমি শাক প্রতি আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চলতি সপ্তাহে আলু ও পেয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের ৫৫-৬০ টাকার আলু প্রতি কেজিতে ৫ টাকা কমে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজিতে ৫ টাকা কমে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি রসুন ২৫০ টাকা ও ভারতীয় রসুন প্রতি কেজি ২২০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। বোতলজাত ৫ লিটারের সয়াবিন ৮৫০ এবং এক লিটার ১৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা পামওয়েল প্রতি লিটার ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিপিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়। প্রতি ডজন ডিম ১৩০- ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহের ৩৫০ টাকার সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরুর মাংসের কেজি কেনা যাচ্ছে ৭০০- ৭৫০ টাকায়। অপরিবর্তিত দেখা গেছে মাছের বাজার।

বাজারে ছোট রুই প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, পাবদা আকারভেদে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ টাকা, কৈ আকারভেদে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে