বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়াল ভারত

যাযাদি ডেস্ক
  ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়াল ভারত
শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়াল ভারত

ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে ক্ষমতাচু্যত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে নয়াদিলিস্ন। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় বিচারের সম্মুখীন করতে তাকে দেশে প্রত্যর্পণ করার জন্য ভারতের কাছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অনুরোধ জানিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে তার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর খবর এসেছে দেশটির সংবাদমাধ্যমে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানেন, এমন ব্যক্তিদের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, হাসিনার ভারতবাস দীর্ঘায়িত করার সুযোগ দিতে সম্প্রতি তার ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে হাসিনাকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার যে গুঞ্জন রয়েছে, তা উড়িয়ে দিয়েছে ওই

1

সূত্রগুলো। কারণ শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ের মতো বিষয়গুলো নিয়ে ভারতে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই।

ভারত ঠিক কবে শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে এবং কতদিনের জন্য তা বাড়ানো হয়েছে, সেসব তথ্য মেলেনি হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণ-অভু্যত্থানের সময়ে হত্যাকান্ড, গত ১৬ বছরে গুম-ক্রসফায়ার, পিলখানা হত্যাকান্ড ও শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকান্ড- মোটাদাগে হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ১

এ কয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এসেছে। শেখ হাসিনা তার সাবেক মন্ত্রিসভা, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে বাংলাদেশ চিঠি পাঠিয়েছে বলে গত ২৩ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান।

বুধবার সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসের প্রকাশ করা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশজুড়ে বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা হাসিনা (৭৭) ভারতে থাকলেও তিনি যোগাযোগবিহীন অবস্থায় রয়েছেন। ৫ আগস্ট ভারতের হিন্দন বিমানঘাটিতে আসেন তিনি। পরে দিলিস্নর একটি নিরাপদ বাসস্থানে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আগে উলেস্নখিত ব্যক্তিরা বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা যাতে ভারতে অবস্থান করতে পারেন, সে পথ সুগম করতে সম্প্রতি তার ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে ওঠা গুঞ্জন নাকচ করে তারা বলেন, শরণার্থী ও আশ্রয় দেওয়ার মতো বিষয়গুলো বিবেচনার ক্ষেত্রে ভারতে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন নেই।

বিস্তারিত উলেস্নখ না করে সূত্রগুলো জানায়, ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট। এ রকম বিষয় দেখার দায়িত্ব এ মন্ত্রণালয়ের। আর বিষয়গুলো স্থানীয় ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের (এফআরআরও) মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।

এর আগে ৩ জানুয়ারি হিন্দুস্তান টাইমসের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বাংলাদেশের অনুরোধে সম্ভবত ভারত সাড়া দেবে না। এ বিষয়ে অবগত থাকা ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশ দাবি বিধিসম্মতভাবে করেনি। তা ছাড়া চুক্তি অনুযায়ী ওই দাবি গ্রাহ্য না হওয়ার আরও অনেক কারণ আছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা ঘোষণা করেন, জুলাই বিক্ষোভে জোরপূর্বক গুম ও হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শেখ হাসিনাও রয়েছেন তাদের মধ্যে।

অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, জোরপূর্বক গুমে জড়িত থাকার অভিযোগে ২২ জন ও জুলাই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে পাসপোর্ট বিভাগ।

জানুয়ারি হিন্দুস্তান টাইমসের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বাংলাদেশের অনুরোধে সম্ভবত ভারত সাড়া দেবে না। এ বিষয়ে অবগত থাকা ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশ দাবি বিধিসম্মতভাবে করেনি। তা ছাড়া চুক্তি অনুযায়ী ওই দাবি গ্রাহ্য না হওয়ার আরও অনেক কারণ আছে।

সাম্প্রতিকতম এসব ঘটনা এমন এক সময় ঘটল, যখন গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিদের বিচারে গঠিত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল ৬ জানুয়ারি হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। হাসিনা ও অপর ১১ জনকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে ট্রাইবু্যনাল আগামী ১২ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে প্যানেলের সামনে হাজির করতে বলেছেন তাদের।

পিলখানা হত্যাকান্ড পুনঃতদন্তে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্বাধীন কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) এ এল এম ফজলুর রহমান একই দিন বলেছেন, ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহে ৭৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনার তদন্তের অংশ হিসেবে হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ভারত সফরে যেতে চান প্যানেলের সদস্যরা।

এ এল এম ফজলুর রহমানকে উদ্ধৃত করে বাসসের বরাতে বলা হয়, '(বাংলাদেশ) সরকার আমাদের অনুমতি দিলে তদন্তের স্বার্থে কমিশন ভারতে যাবে এবং শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।'

এসব পদক্ষেপকে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে ভারতের ওপর চাপ বজায় রাখার চেষ্টা হিসেবে দেখছে নয়াদিলিস্ন।

হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক দিন পর তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর ভিসা বাতিল হওয়া ও ভারতে তার আশ্রয় চাওয়ার খবর নাকচ করে দিয়েছিলেন। গত ৯ আগস্ট ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, 'কেউ তার ভিসা বাতিল করেনি। তিনি কোথাও রাজনৈতিক আশ্রয়ও চাননি। সব গুজব।'

যাহোক, যুক্তরাজ্য সরকার বাস্তবিক অর্থেই আশ্রয়প্রার্থনার সম্ভাব্য যে কোনো আবেদন আটকে দিয়েছে। এর যুক্তি হিসেবে বলেছে, ব্রিটেনের বাইরে থেকে কাউকে আশ্রয়প্রার্থনার সুযোগ দেওয়া দেশটির অভিবাসনসংক্রান্ত আইনে নেই। কিছু খবরে এমনও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র হাসিনার ভিসা বাতিল করেছে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এর আগে তারা বলেছিল, হাসিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী হবে, সেটি তার নিজের সিদ্ধান্তের বিষয়।

উলেস্নখ্য, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারত এখনো কোনো মন্তব্য করতে প্রস্তুত নয়। গত শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, 'এক সপ্তাহ আগে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে বাংলাদেশের বার্তা পাওয়ার কথা জানিয়েছিলাম। ওই প্রাপ্তিস্বীকারের বাইরে তেমন কিছু বলার নেই।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে