ক্ষমতায় টিকে থাকতে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার পতন আন্দোলনে অংশ নেয়া শক্তিগুলোর মধ্যে বর্তমানে বিশ্বাস বা ঐক্যের জায়গা নেই।
বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালতের জবানবন্দি নিয়ে প্রকাশিত বই 'রাজবন্দীর জবানবন্দি' এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে।
যত দ্রম্নত সম্ভব নির্বাচনের দাবি আবারও সামনে এনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংস্কারের প্রয়োজন থাকলেও নির্বাচিত সরকার ছাড়া তাতে কেউ বৈধতা দিতে পারে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'একটা কাঠামো তৈরি করেন; সংস্কার অবশ্যই লাগবে। কিন্তু সেই সংস্কারের পেছনে যে শক্তিটা লাগবে সেটা হচ্ছে যে নির্বাচিত সংসদ; নির্বাচিত সরকার। এটা ছাড়া সংস্কারকে কখনো লেজিটেমেসি (বৈধতা) আমরা দিতে পারব না। এটা ফ্যাসিস্টরা পারবে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'দেশের সমস্ত গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষদের, স্বাধীনতাকামী মানুষদের আমরা আহ্বান জানাব, আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন; বিভাজিত হবেন না। আমি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের, যে যেখানে কাজ করছেন, সবাইকে অনুরোধ করব, বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। আমি জানি না, কিছু
মানুষ একেবারে যেন ডেসপারেট হয়ে গেছে, তারা যেন দেশকে ভাগ করে ফেলবে, জনগণকে বিভক্ত করবে। তারা বিভিন্ন রকম উসকানিমূলক কথা বলছে। আপনারা দয়া করে ওগুলোর মধ্যে যাবেন না।'
তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব কিছু দিনের মধ্যে সব মামলা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হবেন। তিনিও আমাদের মাঝে উপস্থিত হবেন ইনশালস্নাহ। আমাদের যে ত্যাগ, আমাদের জনগণের, আমাদের যুবকদের, আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের, আমাদের ছাত্রদের, আমাদের মহিলাদের, এটা কোনো মতেই বৃথা যাবে না; বৃথা যায়নি। আমরা অন্তত ফ্যাসিবাদ সরাতে পেরেছি; ওদের তাড়াতে পেরেছি।'
তিনি বলেন, 'হাসিনা পালানোর পর থেকে আমরা কেন জানি নিজেদের মধ্যে পুরো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারছি না, ঐক্যের জায়গায় থাকতে পারছি না। দেখুন না, কি একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য। আরে ক্ষমতায় তো টিকে থাকবে তখনই, যখন তুমি এটাকে স্যাটেল করতে পারবে। তার জন্য আমরা বারবার বলছি সংস্কার; এই সংস্কার তো আমরাই শুরু করেছি, প্রথম সংস্কারের কথা বলেছি। জিয়াউর রহমান সাহেব প্রথম সংস্কার করে এক দলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মাত্র চারটা ছাড়া সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিল। জিয়া?উর রহমান সাহেব এসে সব সংবাদপত্র খুলে দিয়েছিলেন। একটা বদ্ধ অর্থনীতি ছিল, সেখানে তথাকথিত ভ্রান্ত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকে বাদ দিয়ে তিনি একটা মিশ্র বা মুক্ত অর্থনীতির মতবাদ নিয়ে এসেছিলেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের যে দর্শন, সেই দর্শন সংস্কারের মূলকথা এবং ১৯ দফা কর্মসূচি ছিল সংস্কারের বড় কর্মসূচি। আমাদের এগুলো সামনে নিয়ে আসতে হবে।'
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, 'দেশনেত্রী মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেলেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিয়ে। পথে পথে লাখো মানুষ বিদায় জানিয়েছে এবং তিনি আন্তর্জাতিকভাবে যে সম্মানটুকু পেয়েছেন, কোথাও বাধা পেতে হয়নি। আমরা যেখানেই বলেছি, আমাদের এই ভিসা দরকার, সঙ্গে সঙ্গে করে দিয়েছে। ম্যাডামের প্রতি সম্মান হিসেবে কাতারের আমির যে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছেন, সেজন্য আমিরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি ধন্যবাদ জানাই ব্রিটিশ সরকারকে, তারা লন্ডনে যাওয়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছেন এবং সেখানে আমাদের চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবসহ যারা আছেন, তারা সেখানে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা শুরু করতে পেরেছেন।'
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সাবেক সচিব ইসমাইল জবিহউলস্নাহর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল।
অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুজ্জামান খান শিমুল, মাহমুদা হাবিবা, অনলাইট অ্যাক্টিভিস্ট হুমায়ুন কবীর, রেজাউর রহমান, ফসিউল আলম, কাজল রহমান, শিপন মোলস্না, ওয়াসিম ইফতেখারুল হক, আবদুর রহমান নূর রাজন ও রেজওয়ানুল হক শোভন বক্তব্য দেন।##