শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২
কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স

এখনো চলছে ৩১ শয্যার জনবল নিয়ে

ম কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ০২ জুলাই ২০২২, ০০:০০
এখনো চলছে ৩১ শয্যার জনবল নিয়ে

প্রয়োজনীয় ওষুধ ও যন্ত্রপাতির অভাব, অবকাঠামোগত অসুবিধাসহ ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীর স্বল্পতা সেই সঙ্গে সময়মতো চিকিৎসকদের হাসপাতালে না আসার কারণে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। সামান্য সমস্যা হলেই চিকিৎসা না দিয়ে অধিকাংশ রোগীকে পাঠানো হয় গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর হাসপাতালে। ভোগান্তির শেষ কোথায় কেউ জানে না!

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা সদরে অবস্থিত ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটি ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারিতে ১০০ শয্যা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্স, কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বাড়েনি বরাদ্দ ও ওষুধ সরবরাহ। আগের মতো ৩১ শয্যার বরাদ্দ দিয়েই চলছে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকান্ড। কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য বিভাগে কয়েক দফা আবেদন-নিবেদন করেও কোনো ফল পায়নি।

কাশিয়ানী ও পার্শ্ববর্তী আলফাডাঙ্গা উপজেলার প্রায় চার লক্ষাধিক লোকের আশ্রয়স্থল এ হাসপাতাল উপজেলার একটি বিরাট অংশ দিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক এবং একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক থাকায় প্রায় সড়ক দুর্ঘটনার রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয় এখানে। যে কারণে হাসপাতালটির গুরুত্ব অনেক।

অন্যদিকে, হাসপাতালে ডেন্টাল বিভাগের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এ সুযোগে টেকনিশিয়ান নিজেই বাজারে চেম্বার নিয়ে রমরমা ব্যবসা করে চলেছেন।

হাসপাতালে দুটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক রয়েছে মাত্র একজন। একটি অ্যাম্বুলেন্সে ব্যবহৃত হলেও অপরটি হাসপাতালের গ্যারেজে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।

হাসপাতালটিতে অ্যানালগ ও ডিজিটাল এক্স-রে, ইসিজি, রক্ত, মলমূত্রসহ বিভিন্ন পরীক্ষার যন্ত্রপাতি ও টেকনিশিয়ান থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা বাইরের প্যাথলজিতে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

হাসপাতালটিতে সিজারসহ বেশকিছু অপারেশন করা হলেও ওটিতে দায়িত্বরত নার্সদের সঙ্গে যোগাযোগ না করলেই (দেনদরবার না হলে) বিপদে পড়তে হয়। যোগাযোগ করলে অপারেশন পরবর্তী প্রয়োজনীয় ওষুধ মেলে।

চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভোগী রোগীদের অভিযোগ, বেলা ১১টার পরে গেলে কোনো ধরনের গ্যাসের ওষুধ পাওয়া যায় না। যেসব ডাক্তার কর্মরত আছেন তাদের অধিকাংশই ইচ্ছামাফিক হাসপাতালের চেম্বারে বসেন এবং চলে যান। আবার অনেকেই সপ্তাহে তিন থেকে চার দিনের বেশি হাসপাতালে আসেন না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সপ্তাহে মাত্র তিনদিন আসেন হাসপাতালে।

পারকরফা গ্রাম থেকে সেবা নিতে আসা রোগী মো. শের আলী, দীপচর থেকে আসা রোগী আনিসা ও শাহিনূর বেগমসহ অনেকে রোগী জানান, তারা যে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন সে ডাক্তার নেই। অনেক দূর থেকে এসেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডাক্তার পাননি বলে অভিযোগ তাদের।

গোপালগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. নেওয়াজ মোর্শেদ মোবাইল বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন 'আমি বিষয়টি দেখব'।

ওষুধ সরবরাহের ব্যাপারে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর.এম.ও) ডা. আমিনূল ইসলাম জানান, 'প্রতিদিন আউটডোরে নির্দিষ্ট পরিমাণের ওষুধ দেওয়া হয়। রোগী বেশি হলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। আমরা যে বরাদ্দ পাই, তা দিয়ে এক বছর চালাতে হয়।'

হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, হাসপাতালটি ৩১ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক লোকবল থাকায় আমরা আশানুরূপ সেবা দিতে পারছি না। হাসপাতালে মোট ৪৭ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও কর্মরত মাত্র ১৬ জন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ক্ষেত্রে একই অবস্থা ৮৩ জন কর্মচারীর স্থলে কর্মরত মাত্র ৪৫ জন মাত্র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে