বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের আমেজ নেই ভাঙন এলাকায়

ভূঞাপুরে যমুনায় বিলীন দেড় হাজার বসতভিটা রায়পুরায় থামছে না নদীভাঙন চিলমারীতে বন্যায় ১৪ কোটি টাকার ক্ষতি
ম স্বদেশ ডেস্ক
  ০৭ জুলাই ২০২২, ০০:০০
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনার ভাঙন -যাযাদি

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্ট বন্যা ও নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক মানুষ। নদীতীরবর্তী ভাঙনকবলিত এলাকায় তাই এবার নেই ঈদের আমেজ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত দুই সপ্তাহে যমুনার ভাঙনে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে প্রায় দেড় হাজার বাড়ি, ৪টি মসজিদ ও শতাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকার ছিন্নমূল পরিবারের মধ্যে নেই কোনো ঈদের আমেজ। অনেক পরিবার বসতভিটা হারিয়ে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ ভাঙা ঘর নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ফলে আসন্ন ঈদুল আজহার কোনো আনন্দই স্পর্শ করবে না এসব নদী ভাঙন ছিন্নমূল পরিবারের মধ্যে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যার পানি কমলেও পালস্না দিয়ে বাড়ছে ভাঙন। উপজেলার অর্জুনা, গাবসারা ও নিকরাইল ইউনিয়নের অন্তত ১২টি গ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে প্রায় দেড় হাজার পরিবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। এর মধ্যে ভয়াভহ রূপ ধারণ করেছে অর্জুনা ইউনিয়নে বাসুদেবকোল, তালতলা ও শুশুয়া, জমার বয়ড়া গ্রামে এবং গাবসারা ইউনিয়নের রামপুর, গোপিনাথপুর, চরচুন্দনী, মেঘারপটল, শুশুয়া, তালতলা, রেহাই গাবসারা গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব গ্রামে এক সপ্তাহের ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় ১৫শ' পরিবার। বিলীন হয়েছে ৪টি মসজিদ ও শতাধিক একর ফসলি জমি।

এ বছর ঈদ কেমন কাটবে, এমন প্রশ্নের জবাবে চিতুলিয়া পাড়া গ্রামের জহুরা বেগম (৬০) জানান, তারা বাড়িঘর হারিয়ে এখন নিঃস্ব। তাদের এখন থাকার মতো কোনো জায়গাজমি নেই। ঘরে নেই খাবার। আবার ঈদ আছে। এ অবস্থায় সরকারিভাবে কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতাও পাননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশরাত জাহান জানান, ভাঙনের ব্যাপারে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) অবহিত করা হয়েছে। ভাঙনরোধে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পাউবো'র নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভূঞাপুরে ব্যাপকভাবে ভাঙন দেখা দেওয়ায় ভাঙনরোধে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়া পাড়ায় তিনশ' মিটারের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোতে পর্যায়ক্রমে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রামে মেঘনা নদীর ভাঙনে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকার প্রায় একশ' বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সবকিছু হারিয়ে মানবেতর দিনাতিপাত করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। কিছু লোকের ঠাঁই মিলেছে পোলট্রি ফার্ম, গোয়ালঘর ও খোলা আকাশের নিচে।

এদিকে, চলমান ভাঙনকবলিত স্থান হতে একশ' মিটারের মধ্যেই রয়েছে আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা, টেকনিক্যাল স্কুল, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ-মাদ্রাসা ও অসংখ্য বসতভিটা। অব্যাহত ভাঙনের ফলে যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান ও বসতভিটা। ভাঙনরোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে সম্প্রতি মানববন্ধন করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নরসিংদী জেলা ও রায়পুরা উপজেলা প্রশাসন, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার বিকালে সাবেকমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু এমপির পক্ষ হতে ক্ষতিগ্রস্ত ৯৬ পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন এমপি পুত্র উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ পার্থ।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ মোর্শেদ খান রাসেল জানান, গত ২৮ জুন চোখের সামনে ২৬টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় এমপির মাধ্যমে ৯৬ জনকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। গ্রামটি রক্ষার্থে দ্রম্নত বেড়িবাঁধের দাবি জানাচ্ছি। রায়পুরা ইউএনও আজগর হোসেন বলেন, ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। অর্ধশত পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

পাউবো নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, রায়পুরায় বাঁধ নির্মাণের একটি প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে বর্ষার পানি কমলেই কাজ শুরু হবে।

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, বন্যার কারণে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে প্রায় ১৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধারণা করা হলেও পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ সড়ক ও রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ খাতে প্রায় এক কোটি ৭৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য খাতে ২৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা ও কৃষি খাতে ১১ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গবাদি পশুর খড় ও ঘাসসহ এ খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ তিন লাখ ৮৬ হাজার টাকা।

একই সূত্রের তথ্যানুযায়ী, উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডুবে ১১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব মিলে উপজেলায় চলতি বন্যায় মোট ১৩ কোটি ৭৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রণয় কুমার বিষাণ দাস জানান, উপজেলায় ৮৬২ হেক্টর ক্ষেত নিমজ্জিত হয়। এর মধ্যে রোপা আউশ ১০৫ হেক্টর, শাকসবজি ১২৫ হেক্টর, তিল ২৫ হেক্টর, মরিচ ১৫ হেক্টর ও ৬২০ হেক্টর জমির পাট বিনষ্ট হয়।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের আওতাধীন সড়কের ৫ কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ইউএনও মাহবুবুর রহমান বলেন, বিভিন্ন খাত ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মিলিয়ে উপজেলায় অন্তত ১৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে