শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরিষার হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত মাঠ

স্বদেশ ডেস্ক
  ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি সরিষা ক্ষেত -যাযাদি

ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত মাঠ। সারা দেশের মতো ওই দুই উপজেলার মাঠজুড়ে সরিষার সবুজ-হলুদের সমারোহ। ইতোমধ্যেই ভালো ফলন দেখে কৃষকরা বাড়তি আয়ের আশায় স্বপ্ন বুনছেন।

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজধানীর কেরানীগঞ্জের কৃষিমাঠ। চারপাশে হলুদ ফুল আর সবুজ পাতার সমারোহে প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। এ যেন ঘন কুয়াশার মধ্যে কনকনে শীতে প্রকৃতি যেন হলুদ চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে রেখেছে। এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য চারদিকে এক আবেশি পরিবেশের সঙ্গে মাধুর্যতায় ভরে দিয়েছে সরষে ফুলের ঘ্রাণ।

এবার কেরানীগঞ্জে সরিষার বাম্পার ফলনে কৃষকের চোখে মুখেও আনন্দের রেখা ফুটে উঠেছে। সরিষার ফুলে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত হয়ে গুনগুন শব্দে ছুটে চলছে এক ক্ষেত থেকে আরেক ক্ষেতে। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে কেরানীগঞ্জের ফসলি মাঠ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন চাষিরা।

সরেজমিনে উপজেলার বাস্তা, শাক্তা, রোহিতপুর, হযরতপুর ও কোন্ডা ইউনিয়নের বেশ কিছু কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে কোনো ফসলের চেয়ে সরিষার আবাদ অনেক লাভজনক ও খরচ তুলনামূলক অনেক কম। তাছাড়া এ ফসলের বাজার সবসময় ভালো থাকে, ফলনও ভালো হয়। হযরতপুর ইউনিয়নের রসূলপুর গ্রামের জয়নাল হোসেন জানান, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর পৌষ মাসের প্রথমদিকে কৃষকরা সরিষার বীজ বুনেন। কৃষকরা খুব কম সময়ে সরিষা ঘরে তুলতে পারেন। একই এলাকার মমিন বলেন, দুই একর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। প্রচুর ফলন হয়েছে, আশা করছেন দামও ভালো পাবেন। তবে বিভিন্ন কৃষি পণ্যের পাশাপাশি সরিষার ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকলে এখানকার কৃষক আরও বেশি উপকৃত হতো। রোহিতপুর ইউনিয়নের কৃষক জসিম উদ্দিন জানালেন, তিনি ৩০ ডিসিমেল জমিতে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে সরিষা আবাদ করেছেন। ঠিকঠাক মতো ফসল উঠলে তার ২০ হাজার টাকা লাভ থাকবে। তিনি জানান, ধান চাষের পর খালি মাঠে সরিষার চাষ করেছেন। মুগারচর গ্রামের সরিষা চাষি জামাল মিয়া বলেন, এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। ফলন পাওয়া যায় পাঁচ-সাত মণ। প্রতি মণ সরিষার বাজারমূল্য ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।

অন্যদিকে আবাদি সরষে ফুল থেকে মৌমাছির মাধ্যমে মধু আহরণ করছেন উপজেলার বাস্তা ইউনিয়নের বার্তা গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের ও রোহিতপুর গ্রামের কৃষক মজনু মিয়া। তারা জানান, এবার ১২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলনের আশা তাদের। এতে খরচ বাদে প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল আমীন জানান, উপজেলায় ২৫ হাজার ২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। কম খরচে অধিক মুনাফা পাওয়া যায় বলে প্রতি বছরই সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। সরকারিভাবে ও বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তায় উচ্চফলনশীল জাতের সরিষার আবাদ ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে ফসলের মাঠজুড়ে সবুজ সরিষা গাছ ও হলুদ ফুলের এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়েছে। সরিষা ফুলের ম-ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে প্রকৃতিতে। এদিকে কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তুলতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন কৃষকরা। তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন ও তদারকি করছেন উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ২০ হেক্টর জমিতে বারি ও বিনা জাতের সরিষার চাষ হয়েছে। স্বল্প সময়, কম খরচ ও পরিশ্রমে এই ফসলের আবাদ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষক। ফলে দিন দিন সরিষা আবাদে আগ্রহ বাড়ছে তাদের।

উপজেলার ছৈলাবুনিয়া গ্রামের মনির মৃধা ও আমড়াগাছিয়া গ্রামের আনছার হাওলাদার বলেন, চলতি মৌসুমে ফলন ভালো হবে। প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ মণ পর্যন্ত হয়ে ফলন হয়ে থাকে। এ ছাড়া সরিষার উৎপাদনে সার কম লাগে এবং সেচ, কীটনাশক ও নিড়ানির প্রয়োজন হয় না। তাই কম খরচে ও স্বল্প সময় এই ফসল হয়ে থাকে। আবার ওই জমিতেই বোরো আবাদ করা হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আরাফাত হোসেন জানান, সরিষা একটি আগাম ফসল। এ বছর কৃষকদের সরিষা চাষে ব্যাপক সচেতন ও কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে