সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

লংগদুতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট!

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ০৩ মে ২০২৩, ০০:০০
রাঙামাটির লংগদুতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। তাই বাধ্য হয়ে পাড়ার নিচে ঝিরি থেকে অপরিষ্কার পানি সংগ্রহ করছেন স্থানীয় নারীরা -যাযাদি

পাহাড়, ঝিরি-ঝর্ণা, উপত্যকা, নদী এবং বিস্তৃত অরণ্য নিয়ে পার্বত্য জনপদের একাংশ লংগদু। পাহাড়ে বসবাসরত বাসিন্দাদের আরেক কষ্টের নাম সুপেয় পানির সংকট। সারা বছর এই সংকট থাকলে শুষ্ক মৌসুমের ফাল্গুন থেকে চৈত্র এই সময়ে সংকট আরও তীব্র হয়। পানির জন্য ঝিরি-ঝর্ণার ওপর নির্ভরশীল মানুষের কষ্ট বহুগুণ বেড়ে যায়। কারণ শুকিয়ে যাওয়ায় সুপেয় পানি থেকে তাদের বঞ্চিত হতে হয়।

ভোর হলেই পানি সংগ্রহের জন্য সংগ্রাম শুরু হয়। রাঙামাটির লংগদু উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের বামে আটারকছড়া এলাকায় প্রায় ৫-৭টি পাড়ায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট চলছে। পাড়ার নীচে ঝিরি থেকে সংগ্রহ করতে হয় দৈনিন্দন কাজের পানি। তীব্র কষ্টে পানি জুটলেও তা নিরাপদ নয়। বাধ্য হয়ে অপরিষ্কার পানি সংগ্রহ করতে হয়।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আটারকছড়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ড শিলছড়ি পাড়া এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট চলছে। এর মধ্যে বেশি সংকট রয়েছে পাঠান টিলা। দুর্গম এই পাড়ার বাসিন্দাদের দূরপ্রান্তে গিয়ে পানি সংগ্রহ করতে হয়। একই চিত্র ওয়ার্ডের অন্যান্য এলাকায়। দেখা যায়, পানির জন্য পাহাড়ের নীচে নামছে পাড়ার কয়েকজন তরুণী ও মধ্য বয়সী মহিলা, তারা কূপ থেকে পানি সংগ্রহের জন্য পাড়া থেকে হেঁটে প্রায় পাঁচশ ফুট নীচে নামছে।

পাহাড়ের চড়াই উৎরায় পেরেয়ি কুয়ায় পৌঁছে দেখা যায়, পাহাড়ের নীচ থেকে ঝিরি ও কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করছে তারা। পাথুরের ছোট ছোট গর্তে জমা হয় পানি। এসব পাতিল ও বোতলে ভরছে গ্রামের নারীরা। এ সময় অঞ্জলি চাকমা জানান, বছরের এ সময়ে (শুষ্ক মৌসুম) পানির তীব্র কষ্ট হয়। গ্রামের মেয়েরা সকাল ও বিকালে পানি সংগ্রহ করে। পানি নিয়ে উঁচু পাহাড়ে উঠতে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু বিকল্প কোনো উপায় নেই। কুয়ায় পর্যাপ্ত পানি জমা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। সামনের দিনগুলোতে পানির জন্য আরও কষ্ট হবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ভবতোষ চাকমা জানান, এলাকায় ৫-৭টি পাড়ায় প্রায় দুই হাজার মানুষের বসবাস। এখানে বেশির ভাগ এলাকায় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। ঝিরি ও ঝর্ণা থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কয়েকবার গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও পাথুরে পাহাড়ের কারণে নলকূপ স্থাপন সম্ভব হয়নি। এসব এলাকায় ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে কুয়া থেকে পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাড়া সংলগ্ন এলাকায় পানির ট্যাংক বসিয়ে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখলে এই দুর্ভোগ দূর হবে।

রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর প্রতিটি ইউনিয়নের ২৬টি পয়েন্টে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী ৫ বছর এই প্রকল্প চলমান থাকবে। এতে করে পানির সংকট মিটে যাবে। কোথাও যদি পাথুরে পাহাড়ের কারণে নলকূপ স্থাপনে বিঘ্ন ঘটে সেক্ষেত্রে স্থান পরিবর্তন করে নলকূপ স্থাপন করা হবে। এছাড়া আরও একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহের কাজ চলমান রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে