শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সাজেক ভ্রমণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোটর সাইকেল

রিপন সরকার, খাগড়াছড়ি
  ১৫ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
মেঘ-পাহাড়ের দেশ সাজেক ভ্যালি ভ্রমণে বাহন হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোটর সাইকেল। ছবিটি বাঘাইছড়ি বেইলি ব্রিজ থেকে তোলা -যাযাদি

পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে মেঘ-পাহাড়ের দেশ সাজেক ভ্যালি। আকাশ ও পাহাড়ের মিতালি আর প্রকৃতির অনন্যভূমি সাজেক ভ্যালিকে নিয়ে ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহের যেন কমতি নেই! সুযোগ পেলেই বড় বড় দালান কোটার শহর ছেড়ে পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের নিয়ে পর্যটকরা ছুটে আসেন এই অরণ্যভূমিতে।

সাজেক ভ্রমণে বিভিন্ন বাহনের বাইরে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোটর সাইকেল। সময়ের সঙ্গে পালস্না দিয়ে ভ্রমণের জন্য বাইক অনেকের কাছে বেশ পছন্দের একটি বাহন। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও মোটর সাইকেলে চেপে প্রতিদিন সাজেক ভ্রমণ করছেন এক শ্রেণির পর্যটক। ছোট ছোট গ্রম্নপে মোটর সাইকেল নিয়ে সাজেক ভ্রমণ করছে বিভিন্ন বাইকার গ্রম্নপ। আবার অনেকে নিজেদের মতো করেও বাইক চেপে সাজেক ভ্রমণ করেন।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুর, যশোর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, নোয়াখালী ও কুমিলস্নাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাইকাররা প্রতিদিনই ছোটেন সাজেকের পথে। শুধু ছেলেরা নয়, মেয়েরাও এখন মোটর সাইকেল নিয়ে পাহাড়ি পথ মাড়িয়ে সাজেক ভ্রমণ করছেন। বেশ কয়েকটি বাইকার গ্রম্নপ সাজেক রাইডিংকে উৎসাহিত করে আসছে পর্যটকদের। এসব গ্রম্নপের বাইরেও অনেকেই নিজেদের মতো করে বাইকে চেপে সাজেক ভ্রমণ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন কমপক্ষে শতাধিক বাইকার সাজেক ভ্রমণ করছেন। মোটর সাইকেলে চেপে সবচেয়ে বেশি পর্যটক সাজেক ভ্রমণ করেন বৃহস্পতি ও শুক্রবার। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা, কোণাকোণি, উঁচু-নিচু, কোথাও সরু পিচঢালা সড়কে দুঃসাহসিক এ অভিযাত্রায় প্রতি মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও সব ভয়কে জয় করেই সবুজে মোড়ানো পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সাজেকের পথে ছুটে চলেন রাইডাররা।

কুমিলস্না থেকে বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মোটর সাইকেলে চেপে সাজেক ভ্রমণে আসা মনিরুল ইসলাম বলেন, 'ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে থেকে বারইয়ারহাট হয়ে কিছুটা পথ গেলেই পাহাড়ি সড়কে প্রবেশ করতেই আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা ধরে আমাদের পথচলা শুরু। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পর সাজেকের পথে পাহাড়ের সেই উঁচুনিচু আঁকাবাঁকা জনমানবহীন এলাকা যেমন ভয়ংকর তেমনি সৌন্দর্যের উদাহরণ।'

দেশের দক্ষিণের শহর খুলনা থেকে ৫৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মোটর সাইকেলে চেপে সাজেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এম এম সাকিবুর রহমান ও অভিজিৎ দাশ বলেন, 'অভিজ্ঞতা না থাকলে রাইড করা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। আর সেটা যদি পাহাড়ি সড়ক হয় তাহলেও তো কথা নেই।'

চারবার সাজেক রাইডিং করার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তারা বলেন, 'ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সাজেক রাইডিং তুলনামূলক সহজ হলেও খুলনা থেকে সাজেক রাইডিং করা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। যারা মোটর সাইকেল রাইডিং করে সাজেক ভ্রমণ করবেন তাদের অবশ্যই সময় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।'

তারা বলেন, 'সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যেই বাঘাইহাট সেনা ক্যাম্পে পৌঁছে প্রয়োজনীয় রিপোর্টিং শেষ করতে হবে। কারণ সেখান থেকেই ১০টার মধ্যে সাজেকের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে পর্যটকবাহী যানবাহন। এ সময়টা মিস করলে অপেক্ষা করতে হবে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। বাইকারদের অবশ্যই ভ্রমণের পূর্বপরিকল্পনা থাকতে হবে।'

নতুন যারা সাজেক রাইডিং করবেন সেই বাইকারদের দামি হেলমেট আর সেফটি গিয়ারস ব্যবহার করতে হবে। নির্দিষ্ট স্পিডে বাইক চালানোর পরামর্শ দিয়ে এম এম সাকিবুর রহমান বলেন, 'সেফটি ফার্স্ট। গ্রম্নপ টু্যরের ক্ষেত্রে নিয়মশৃঙ্খলা মেনে, অন্যদের দিকে খেয়াল রেখে একসঙ্গে বাইক চালাতে হবে।'

ফেনী থেকে সাজেক ভ্রমণে আসা বাইকার, শহিদ, খালেদ ও শাহেদ বলেন, 'ভয়ংকর এবং একই সঙ্গে রোমাঞ্চকর রাস্তাগুলোর মধ্যে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উঁচুনিচু ও আঁকাবাঁকা পাহাড়ি সড়কটি অন্যতম। তাদের মতে মোটর সাইকেলে ঝুঁকি থাকলেও পাহাড়ের নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি নিজের মতো করে ভ্রমণ করা যায়।'

নোয়াখালী থেকে বন্ধুদের নিয়ে মোটর সাইকেলে সাজেক ঘুরতে আসা পর্যটক মো. শফিকুল ইসলাম রনি বলেন, 'যে কেউ নিশ্চিন্তে সাজেক ভ্রমণ করতে পারেন। এখানে থাকা-খাওয়ার কোনো সমস্যা নেই। তবে যারা মোটর সাইকেলে সাজেক ভ্রমণে আসবেন তাদের সাবধানে মোটর সাইকেল চালাতে হবে।'

চট্টগ্রাম থেকে মোটর সাইকেলে সাজেক ভ্রমণে আসা ব্যবসায়ী অনিমেষ ও রণজিত দে বলেন, 'একটা জায়গায় থাকতে থাকতে যখন হাঁপিয়ে উঠি তখনই বন্ধু-বান্ধব নিয়ে দূরে কোথাও মোটর সাইকেল রাইড করি। সমতলের সড়কের চেয়ে এখানে সময়টা অনেক বেশি লাগে।'

উঁচু-নিচু আর আঁকাবাঁকা সড়কে ভয় লাগে কিনা এমন প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, 'ভয় নয়, উপভোগ করি। একজন বাইকারকে সাহসী হতে হয়। সাহসী না হলে কোনো কিছু উপভোগ করা যায় না।'

পাহাড়ি সড়কে রাস্তার বাম পাশ ধরে বাইক চালানোর পরামর্শ দিয়ে স্থানীয় বাইকার মো. খোরশেদ ও রেজাউল করিম বলেন, 'প্রতিটি মোড়ে অবশ্যই বাইকের হর্ন বাজাবেন এবং হ্যান্ড ক্লাস ছেড়ে বাইক চালাবেন। পাহড়ি সড়ক বলে ভয় না পেয়ে সাবধানতার সঙ্গে বাইক চালাতে হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে