সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বানিয়াচংয়ের গ্রামগুলোতে বিলুপ্ত কৃষকের ধানের গোলা

বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

আগের নামকরা গেরস্ত (কৃষক) বলতে মাঠ ভরা সোনালি ফসলের ক্‌েণত, (জমি) গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ আর কৃষকের গোলা ভরা ধানকেই বোঝাত। কিন্তু এসব এখন যেন প্রবাদ বাক্যে পরিণত হয়েছে। হারিয়ে গেছে গেরস্থের (কৃষকের) ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা।

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের গ্রামবাংলার সমৃদ্ধির প্রতীক ধানের গোলা এখন বিলুপ্তপ্রায়। ধান, চাল, গম সংরক্ষণের বড় পাত্র বাঁশের তৈরি গোলা। বাঁশ দিয়ে এ গোলা তৈরি করা হয়। গ্রামের কৃষক পরিবার গোলায় ধান সংরক্ষণ করে থাকেন। সারাবছর ধান সংরক্ষণ করতে গোলা খুবই উপযোগী। ধানের মৌসুমে ধান কেটে শুকিয়ে গোলাজাত করা হয়। প্রয়োজনের সময় গোলা থেকে ধান বের করে পুনরায় রোদে শুকিয়ে ধান ভাঙানো হয়।

বানিয়াচং উপজেলার গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না গোলা। ধান মাড়াইয়ের পর গোটা বছরের জন্য সংরক্ষিত রাখার যে গোলা আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। যুগের হাওয়ায় পাল্টেছে সারা বছরের জন্য ধান রাখার ধরন। দু'চার জন বড় গৃহস্ত ছাড়া ছোটখাটো কৃষকরা এখন আর সেভাবে ধান মজুত রাখতে পারেন না। খাওয়া-সাংসারিক খরচ মিটিয়ে যে সামান্য ধান থাকে তা কেউ বস্তায় কেউবা অন্য বাসন-কোসনেই রেখে দেন। ফলে এক সময়কার কৃষকদের অতি প্রয়োজনীয় ধানের গোলা এখন সচরাচর চোখেই পড়ে না।

ইনাতখানীর কৃষক আবদুল হক জানান, ধান যেন নষ্ট না হয় সে কারণে গোলায় রেখে মুখ মাটি দিয়ে লেপে বন্ধ করে রাখা হয়। আবার টাকার প্রয়োজন হলে গোলা থেকে ধান বের করে বাজারে বা পাইকারের কাছে বিক্রি করা হতো। সে সময় সমাজব্যবস্থা এখনকার মতো এত উন্নত ছিল না। অতীত স্মৃতি বর্ণনা করে মধুখানী এলাকার ইসলাম উদ্দিন জানান, তখন চোর-ডাকাতের ভয়ে গোলার ধানের ভেতর স্বর্ণ ও টাকা-পয়সা লুকিয়ে রাখা হতো। ধান রাখার এ পাত্রকে গোলা বা ডোল আখ্যায়িত করার কারণও রয়েছে। গোলা অপেক্ষাকৃত মজবুত। দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। বাঁশের তৈরি গোলার ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে। কারণ বাঁশ ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের কাছে এখন তা ইতিহাস। প্রবীণদের কাছে স্মৃতি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে