সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞা শেষে সুন্দরবনে মাছ ধরার অনুমতি মিললেও হাসি নেই জেলেদের মুখে

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
  ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে সুন্দরবনে জেলেদের মাছ ধরার অনুমতি মিলেছে ১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত থেকে। এরই মধ্যে জেলেরা মাছ আহরণের সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন। তবে এ বছর নিয়মের বেড়াজালে পিষ্ট হয়ে জেলেদের মাছ ধরতে যাওয়ার আগ্রহ অনেক কম দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কেউ নৌকায় জাল, কাঠ ও বরফ উঠাচ্ছেন, কেউ নৌকার পাটা সংস্কার করছেন। কেউ পাস না পেয়ে অফিসের আশপাশে ঘুরাঘুরি করছেন। আবার কেউ পাস নিয়ে সুন্দরবনে মাছ ধরার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। এমনও অবস্থা বিরাজ করছে সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে।

সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরা, অভয়ারণ্যে প্রবেশ করে বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধের জন্য পাস ইসু্য করার ক্ষেত্রে এবার নির্দিষ্ট খালের নাম পারমিটে লিখে দেওয়া হচ্ছে। ফলে স্টেশনের বাইরে কোনো জেলে মাছ ধরতে যেতে পারবে না- এমন শর্তসহ বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করা হয়ছে। শর্তের কারণে মাছ ধরা নিয়ে জেলেদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে। কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের আওতায় শাকবাড়িয়া, বজবজা, খাসিটানা, আন্ধারমানিক- এই চারটি ফাঁড়ি রয়েছে। এবার কাশিয়াবাদ স্টেশন থেকে পাস নেওয়া জেলেরা ওই স্টেশনের আওতাধীন সুন্দরবনের বাইরের খালে মাছ ধরতে পারবে না। জেলেদের পাস পারমিটে এবারই প্রথম নির্দিষ্ট করে খালের নাম উলেস্নখ করে দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে গত ২৮ আগস্ট সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ডক্টর আবু নাসের মোহসিন হোসেন একটি লিখিত নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দিষ্ট খালে মাছ ধরার এই নির্দেশনায় জেলেদের মুখের হাসি বিলীন হয়েছে। ভালো মাছ পাওয়া নিয়ে তারা শঙ্কায় রয়েছেন। খাল বিভাজন নিয়ে সবার মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

কয়েকজন জেলের কাছে বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, 'আমরা সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। অন্য কোনো কাজ করতে পারি না। তিনটি মাস পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে। সরকার যে চাল দেয়, এতে কিছু হয় না। ধার-দেনা ও সমিতি থেকে লোন করে সংসার চালাতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের সুন্দরবন খুলে দেওয়ার আনন্দ বিলীন হয়ে গেছে। আগে একটি খালে মাছ না পড়লে অন্য খালে যেতে পারতাম। এবার সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য মাছ পাওয়া নিয়ে আমরা চিন্তিত।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএলসিধারী জেলে জানান, কাশিয়াবাদের আওতায় সুন্দরবনে মাছ ধরার এলাকা কম। এ জন্য এবার এখান থেকে পাস পারমিট নিয়ে কি করব।

কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, 'এই স্টেশনের আওতায় ৯৪৩ বিএলসি রয়েছে। তবে পাস দেওয়ার সময় খাল নির্দিষ্ট করতে গিয়ে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিএলসির তুলনায় জায়গা কম হওয়ায় জেলেরা এই স্টেশন থেকে পাস নিতে চাচ্ছেন না। প্রথম দিন শতাধিক বিএলসিধারী জেলে পাস নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন। বিগত বছর প্রথম দিন এই স্টেশনে ৫ শতাধিক জেলে পারমিট গ্রহণ করেন।'

খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসএিফ) এজেডএম হাছানুর রহমান বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জেলেরা এক স্টেশন থেকে পাস নিয়ে অন্য স্টেশনের আওতাধীন বনে যেতে পারবে না। এতে অপরাধ প্রবণতা কম হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে