শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

মধুমতীর রুদ্ররূপ, গৃহহারা মানুষের মানবেতর জীবন

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি
  ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
মধুমতীর রুদ্ররূপ, গৃহহারা মানুষের মানবেতর জীবন
নড়াইলের লোহাগড়ায় মধুমতী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে বিলীনের পথে গ্রাম -যাযাদি

নড়াইল জেলার লোহাগড়ার উপজেলার মানচিত্র দ্রম্নত বদলে যাচ্ছে। মধুমতী নদীভাঙনে বদলে যাচ্ছে লোহাগড়ার ভৌগোলিক অবস্থান। ফি বছর মধুমতী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভিটেমাটি, জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব মানুষের হাহাকারে ভারী হচ্ছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো। অথচ রাক্ষুসী মধুমতীর ভাঙন রোধে নেই কোনো স্থায়ী পরিকল্পনা। এ নিয়ে মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই।

লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের মধুমতী নদীর পূর্বপাড়ে পার আমডাঙ্গা এবং পশ্চিম পাড়ে লোহাগড়া ইউনিয়নের ছাগলছেড়া গ্রাম। এ দুই গ্রামে মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রুদ্ররূপী মধুমতীর ভয়াল ভাঙনে কমপক্ষে ২০০টি পরিবারের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৬০০ পরিবার। সহায় সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

পার আমডাঙ্গা গ্রামের সবুর খান, নুর আলম মাস্টার, সোহাগ মাস্টার ও জাহেদা বেগম, রাসেল মোলস্না, রাজীব মুন্সী জানান, 'আমাদের গ্রামের শতবর্ষের মসজিদ-মাদ্রাসা, কবরস্থানসহ শতাধিক ঘরবাড়ি ও কয়েক হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সহায় সম্বল হারিয়ে আমরা এখন পথে বসেছি। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাইনি। ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানাই।'

ভাঙনকবলিত লোহাগাড়া ইউনিয়নের ছাগলছেড়া গ্রামের মাতুব্বর মমিন মোলস্না, জাফর মোলস্না, আমিনুর মোলস্না ও শাহানুর মোলস্না বলেন, মধুমতীর করাল গ্রাসে ঘরবাড়িসহ সহায় সম্পদ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অথচ, ভাঙন রোধে নেই কোনো স্থায়ী উদ্যোগ বা পরিকল্পনা। ভাঙন তীব্র হলেই জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করেন, দেন নানা প্রতিশ্রম্নতি। কিন্তু কিছুই হয় না।

এ ব্যাপারে লোহাগড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নাজমীন খন্দকার বলেন, ছাগলছেড়া গ্রামের উত্তর অংশে মধুমতীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। তিনি দ্রম্নত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা ও পুনর্বাসনের দাবি জানান।

জয়পুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমন জানান, গত বছর নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৮২ জনকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছেন। তিনি ভাঙন রোধে স্থায়ী পরিকল্পনার দাবি জানান।

এ ব্যাপারে নড়াইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভাঙন রোধে ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু সেটিও এখন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে পুনরায় ভাঙন রোধে কাজ করা হবে।

এ ব্যাপারে নড়াইলের জেলা প্রশাসক আসফাকুল হক চৌধুরী বলেন, নদীভাঙনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে