শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাব :গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে স্থবির জনজীবন

রাজৈরে লোকসানে সবজি ব্যবসায়ী সিরাজদিখানে আলু চাষিদের ক্ষতি
স্বদেশ ডেস্ক
  ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাব :গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে স্থবির জনজীবন
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাব :গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে স্থবির জনজীবন

ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাব পড়েছে দেশজুড়ে। সারাদিন গুঁড়ি গুঁড়ি ও ঘনবৃষ্টিতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। মাদারীপুরের রাজৈরে সারাদিন বৃষ্টির কারণে কাঁচা বাজারে কমেছে বেচাকেনা। অন্যদিকে, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ভারী বর্ষণে আলু চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

ম রাজৈর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বৃহত্তর টেকেরহাট বন্দরের কাচা বাজারে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাব পড়েছে। সারাদিন ঘনবৃষ্টির কারণে কমেছে বেচাকেনা। এতে চরম দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কাদা পানি উপেক্ষা করে বিক্রির আশায় বিভিন্ন শাক সবজি নিয়ে বসে আছেন তারা।

ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে রাজৈর উপজেলাজুড়ে টানা তিনদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। আগের দু'দিন হালকা রোদের ঝলকানি দেখা গেলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শুরু হয় ঘনবৃষ্টি। এ বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট কাদা পানিতে জর্জড়িত হয়ে গেছে। ছাতা ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারছেন না কেউ। একেতো শীতকাল, তার উপরে বৃষ্টি, দুই মিলে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন।

সরজমিনে টেকেরহাট মাছ, মাংস ও কাচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ বেহাল পরিস্থিতির মধ্যে বাজারমুখি মানুষের চাপ কম। জরুরি প্রয়োজনে কেউ বাজারে আসলেও শাকসহ দ্রম্নত পচনশীল সবজি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। রান্নার ঝামেলা এড়াতে সাধ্যমতো বড় মাছ, মুরগি অথবা মাংস কিনে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তারা। এদিকে ঝুড়িতে করে বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি নিয়ে বসে আছেন ক্ষুদ্র কাচামাল বিক্রেতারা।

বাজার করতে আসা শুভ শেখ বলেন, মাছের থেকে পোল্ট্রি মুরগির দাম কম আর ঝামেলাও কম। তাই মুরগি ও আলু কিনে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।

এক ক্ষুদ্র সবজি বিক্রেতা মোস্তফা মুন্সী বলেন, ঝাকায় করে লাউ, চাল কুমড়া ও লাল শাক নিয়ে বসে আছি, কিন্তু কেউ কিনছে না। সকাল থেকে মাত্র কয়েকটা লাউ বিক্রি করছি। আজ বৃষ্টির কারণে শাক কেউ নিতে চায় না।

আরেক দোকানি সেলিম মিয়া বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকার শাক সবজি কেনাবেচা করি। তাতে ৪ থেকে ৫শ' টাকা আয় হয়। এ দিয়েই আমার সংসার চলে। এখন বৃষ্টির কারণে দূরের মানুষ বাজারে আসতে পারে নাই, তাই বেচাকেনার অবস্থাও ভালো না।

সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে দ্বিতীয় দফায় ভারী বর্ষণে আলু চাষিদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে অতি বৃষ্টিপাতের কারণে বীজতলা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে চরম শঙ্কায় পড়েছেন এখানকার হাজারও আলু চাষি। তবে তারা জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। সারাদিনেও বৃষ্টি না কমায় তাদের চেষ্টাও কোনোরূপ কাজে আসছে না। এতে করে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন চাষিরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সদ্য রোপণকৃত জমি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে চরম আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন উপজেলার হাজারো কৃষক। ফলে চলতি অর্থ-বছরের আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক জমিতে আলু রোপণ কাজ শেষ হয়েছিল।

গোড়াপীপাড়া গ্রামের আলী আহাম্মদ বলেন, এবার ৮০ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করেন। এখন বৃষ্টিতে সব আলুর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে তার প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হতে পারে। নাটেশ্বর গ্রামের বাদল মীর বলেন, প্রথম দফার বৃষ্টিতে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেটা কাটিয়ে না উঠতেই এখন দ্বিতীয় দফার বৃষ্টিতে সর্বস্বান্ত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। জমিতে বৃষ্টির পানি যাতে আটকে না থাকে, সেজন্য পানি অপসারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সিরাজদিখান উপজেলা কৃষি অফিসার আবু সাঈদ শুভ্র জানান, সিরাজদিখান উপজেলা আলু চাষে অন্যতম। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার হেক্টর জমি। এবার আলুর দাম বেশি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদের সম্ভাবনা ছিল। বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হবে। জমিতে পানি যাতে না জমে সেজন্য নালা করে পানি অপসারণের পরামর্শ দেন তিনি।

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সারা দিনে মেঘে ঢাকা আকাশ ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে দেখা মেলেনি সূর্যের, স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। সৃষ্ট লঘুচাপের ফলে গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। শীতের বৃষ্টি উপেক্ষা করে শ্রমজীবীরা বের হলেও, ঘর থেকে বের হয়নি অধিকাংশ মানুষ। রাস্তা-ঘাট প্রায় জনশূন্য। দিনমজুর রিকশা চালকসহ শ্রমজীবীরা বের হলেও তাদের তেমন কোনো কাজ মেলেনি।

এদিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে মাঠে ভিজে গেছে আমন ধানও। কৃষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে মাঠে থাকা আমন ধান ঝরে যেতে পারে, ক্ষতি হতে পারে খড়েরও। এতে করে বড় রকমের ক্ষতির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলছেন, দু-এক দিনের মধ্যে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে